এক্সক্লুসিভ

মেলায় ফাগুনের রং

স্টাফ রিপোর্টার

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ৯:০৬ পূর্বাহ্ন

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় লেগেছে ফাগুনের রং। হলুদ-কমলা রংয়ের পাঞ্জাবি-শাড়ি আর মাথায় ফুলের টোপর। পয়লা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবসের পরদিন শুক্রবারেও মেলায় ছিল এমন অগুনতি মানুষের ভিড়। শাহবাগ, দোয়েল চত্বর হয়ে মানুষের মিছিল গিয়ে এক হয় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলায়। মেলা প্রাঙ্গণ যেন হাজারো মানুষের মেলবন্ধনও। গতকাল শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে মেলায়। গেট দিয়ে ঢুকতেই মুঠোফোনে অন্য বন্ধুদের অবস্থান জেনে নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী তারেক আহম্মদ খান। কিছুক্ষণ হন্তদন্ত হয়ে খুঁজে নেন বন্ধুকে। আক্তারুজ্জামান ইলিয়াসসহ বেশ কয়েকজনের বই কেনার ফাঁকে ফাঁকে চলতে থাকে আলাপ। শুধু বই কেনাই নয়, প্রিয়জন বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে অনেকদিন পর দেখা করার মোক্ষম সুযোগও যেন প্রাণের মেলা। কুড়িগ্রামে সরকারি চাকরি করেন পবন চন্দ্র বর্মণ। মেলা থেকে বিশাল তালিকা ধরে বই কিনতে ছুটিতে এসেছেন ঢাকায়। মেলা প্রাঙ্গণে কথা হলো তার সঙ্গে। পবন চন্দ্র বর্মণ বলেন, সারা বছর ধরে ফেব্রুয়ারি মাসটার জন্য মুখিয়ে থাকি। মেলা শুরু হলে প্রকাশনী ধরে ধরে বইয়ের তালিকা করে ফেলি। মেলার শেষের দিকে এসে সংগ্রহ করি এসব বই। তালিকাটা বেশ বড় হয়ে গেলে অনলাইনেও বই সংগ্রহ করে নেন পবন চন্দ্র বর্মণ। তবে, স্বশরীরে কিংবা অনলাইনে যে মাধ্যমেই বই কিনেন না কেন মেলায় অন্তত দু’বার আসা চাই তার। জানান, মেলা শুধু বই কেনার জায়গাই নয়। বন্ধু, স্বজন আর সহকর্মীদের সঙ্গেও দেখা করার এক দারুণ সুযোগও। প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই হাজির হন তার আরেক সহকর্মী মোহাম্মদ সেফাতউল্লাহ। দু’জনে একই বিভাগে কাজ করলেও প্রাণ খুলে আড্ডাটা যেন জমে বইমেলাতে। আইনের বইয়ে আগ্রহ বেশি সেফাতউল্লাহ’র। হাতের ব্যাগ দেখে বোঝা গেল এর মধ্যে কিনেও ফেলেছেন বেশ কয়েকটি। ব্যাগ খুলতেই দেখা গেল, শিশুতোষ কিছু বইও আছে। জানালেন, সন্তানের জন্য বাংলায় বেশ কিছু ছড়া ও আঁকাআঁকির বই কিনে নিয়েছেন। প্রথমা প্রকাশনীর সামনে ভক্তদের অটোগ্রাফ দিতে দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় লেখক রাজীব হাসান। ‘বোকা বাবা ও কিডন্যাপার’ উপন্যাসের পাঠকদের ছবি তোলার আবদারও মেটাতে হলো তাকে। পাঠকদের সঙ্গে কথা বলার সময় মেলায় আরেকটা ভালো দিকের কথা জানালেন তিনি। বলেন, আমার অনেক পাঠক রয়েছে যাদেরকে আমি কখনোই দেখিনি, চিনি না। অথচ তারা আমার লেখা পড়ে মননে-মগজে ধরে রেখেছে। বইয়ের প্রতিটি পৃষ্ঠা, চরিত্র যেন তাদের মুখস্থ। এসব পাঠকদের সঙ্গে দেখা হওয়াটাও কম আনন্দের নয়। এবার বর্ষা দুপুর প্রকাশনী থেকে এসেছে রাওমান স্মিতার বই ‘ইনসাইড আউট লাইফ কোচিং: থিওরি অব হ্যাপিনেস’। মানুষের জীবনে সুখ খোঁজার পথকে বাতলে দিতে বইটি সহায়ক হবে বলেও জানালেন তিনি। ঐহিত্য প্রকাশনীর সামনে দেখা হলো মনোযোগী এক পাঠককে। মাদরাসা শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন নিবিষ্টমনে পড়ে যাচ্ছিলেন ‘লেনিনের রাষ্ট্র ও বিপ্লব’ নামে একটি বই। তিনি জানালেন, কোনো বই কেনার সময় শুধু নাম বা প্রচ্ছদ দেখে কেনাটা ঠিক নয়। বইয়ের বিষয় ও ভেতরের কন্টেন্ট ভালো করে জেনে-বুঝে নিলেই একটা ভালো বই কেনা যায়। ঐতিহ্যের স্টলের মানুষে প্রচণ্ড ভিড়। একটু সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা একজন তরুণ লেখকের সঙ্গে কথা হলো। এবারের মেলায় প্রথম বই লিখেছেন জীবরুল হাসান। জানালেন, যুক্তরাজ্যে প্রখ্যাত আইনজ্ঞ লর্ড ডেনিংয়ের ‘হোয়াট নেক্সট ইন দ্য ল’ বইটি অনুবাদ করেছেন তিনি। আইনের অনেক ইতিহাস আর ব্যাখ্যার বিষয়ে পাঠকদের মাতৃভাষায় পাঠে সহযোগিতা করতে অনুবাদটি কাজে লাগবে বলে জানান এই লেখক। এবার নিয়ে দু’বছর মেলায় অংশ নিচ্ছে অধ্যয়ন প্রকাশনী, কর্ণধার তাসনুভা আদিবা জানালেন, তাদের বেশিরভাগ বইয়ের লেখক-পাঠক তরুণরা। তিনি বলেন ফেসবুক-ইউটিউব প্রজন্মের তরুণদের মধ্যেও একটা বড় অংশ মেলায় আসছে, বই কিনছে। এটা আমাদের প্রকাশকদের জন্য বেশ ভালো লাগার খবর। বইয়ের বেচাকেনা নিয়ে ঐতিহ্য প্রকাশনীর নির্বাহী প্রধান আরিফুর রহমান নাঈম জানান, গতবারের চেয়ে প্রায় ৩৫ ভাগ বিক্রি বেড়েছে তাদের। শুক্রবার মেলার সকালের ভাগে ছিল শিশুপ্রহর। পরিবারের শিশুদের নিয়ে হাজির হন অভিভাবকরা। শিশুতোষ বই আর নানা কার্টুন-আঁকিবুকি ছিল তাদের পছন্দের তালিকায়। কেউ কেউ অবশ্য রূপকথার গল্প আর ভূতের বইও ব্যাগে ভরেছে। শিশুপ্রহরে বই পাঠের আয়োজন করে কৈশোর-তারুণ্যে বই ট্রাস্ট। বাতিঘর সাংস্কৃতিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লোকসংস্কৃতি গবেষক ড. আশরাফ সিদ্দিকীর রচনা পাঠ করে শোনান তার মেয়ে ড. তাসনিম সিদ্দিকী। আজ শনিবার এমন আরেকটি আয়োজন হবে শিশুপ্রহরে। অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদের শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা গল্প শোনাবেন তার কন্যা মৌলি আজাদ। একই সঙ্গে শিশুদের গল্প তৈরির ধরন নিয়ে কথা বলবেন নালন্দা বিদ্যালয়ের শিক্ষাকর্মী বহ্নি ব্যাপারি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status