বাংলারজমিন

মণিরামপুরে ৬ লাখ মানুষের জন্য ৬ জন চিকিৎসক

মো. মাসুম বিল্লাহ, মণিরামপুর (যশোর) থেকে

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ৯:০১ পূর্বাহ্ন

যশোরের মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। একদিকে চিকিৎসক সংকট, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য উপকরণের অভাব, অন্যদিকে চিকিৎসক-কর্মচারীদের সেবা কার্যক্রমে অবহেলার কারণে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। এদিকে, ভুক্তভোগী এসব রোগী ও স্বজন চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং তাদের মধ্যস্বত্বভোগীদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খুইয়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের অন্যতম বৃহত্তর এ উপজেলায় ১৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার অন্তর্গত ২৬১ টি গ্রামে অন্তত ৬ লাখ মানুষ রয়েছে। এ  বিশাল জনগোষ্ঠীর একমাত্র স্বাস্থ্যসেবার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১৯৬২ সালে স্থাপিত হয়। স্বাস্থ্যসেবাকে ত্বরান্বিত করতে স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সটি ১৫ শয্যা থেকে ৩১ শয্যা, বর্তমানে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনগণের স্বাস্থ্যসেবা বা সেবার মানের তেমন  কোনো উন্নতি হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
 উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সটি ইতিমধ্যে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনবল কাঠামো ৩১ শয্যারই রয়ে গেছে। সে মোতাবেক ২৬ জন চিকিৎসকের অনুমোদিত পদ থাকলেও বর্তমানে কর্মরত চিকিৎসক আছেন মাত্র ৬ জন। যার মধ্যে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার, কনসালটেন্ট এনেসথেসিয়া, কনসালটেন্ট সার্জারির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে কোনো চিকিৎসক নেই। তাছাড়া মেডিকেল টেকনোলোজি (ল্যাব), মেডিকেল টেকনোলোজি (রেডিওগ্রাফার), ফার্মাসিস্ট, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ সহকারী, পরিসংখ্যানবিদ, অফিস সহকারীর মতো গুরুত্বপূর্ণ অন্তত শ’খানিক চিকিৎসক-কর্মচারীর পদশূন্য রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে প্রায় ১০ বছর ধরে এক্স-রে  ও আল্ট্রাসনো মেশিনটি অকোজো হয়ে পড়ে আছে। মান্ধাতার আমলের একমাত্র এম্বুলেন্সটি জীর্ণ-শীর্ণ হয়ে বেশ কিছুদিন গ্যারেজবন্দি হয়ে পড়েছিল। যা বর্তমানে মেরামত করে কোনোরকমে চালানো হচ্ছে। প্যাথলজিক্যাল সাইডেও ভালো কোনো রি-এজেন্ট নেই হাসপাতালে। এমনকি রক্তের গ্রুপ কিংবা ডায়াবেটিস পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার রি-এজেন্টও হাসপাতালে সরবরাহ নেই বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী রোগী ও রোগীর স্বজনরা। উপজেলার শেখপাড়া খানপুর গ্রামের আসলাম হোসেন নামের এক রোগী জানান, ‘হাসপাতালে  এসেছিলাম ডায়াবেটিস আছে কি না তা পরীক্ষা করাবার জন্যি। এখানে এসে শুনলাম পরীক্ষা করার জিনিসপত্র নেই।’
ভরতপুর গ্রামের লিয়াকত আলী জানান, ‘আমার স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে আনার সঙ্গে সঙ্গে ইমারজেন্সির ডাক্তাররা যশোরে রেফার করে  দিলেন। যশোরে নেয়ার পথে আমার স্ত্রী মারা গেল।’ বাঙ্গালীপুর গ্রামের বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘হাসপাতালে এসেছিলাম আমার স্ত্রীর ডেলিভারি করানোর জন্য। কিন্তু হাসপাতালে ডাক্তার না থাকার কারণে এক লোকের মাধ্যমে স্থানীয় মনোয়ারা ক্লিনিকে ভর্তি করালাম। সেখান থেকে মা ও  শিশুর অসুবিধা হলো। পরে যশোরে নিয়ে চিকিৎসা করাতে আমি সর্বস্বান্ত হয়ে গেছি।’
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শুভ্রা রানী দেবনাথ বলেন, রোগীরা স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেটা সঠিক নয়। চিকিৎসকেরা আন্তরিকভাবে সেবা দিচ্ছেন, তবে জনবল সংকটের কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে। চিকিৎসক, পরীক্ষা-নিরীক্ষার উপকরণ ও এম্বুলেন্সেসহ সামগ্রিক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যাপারে যথাযথ মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status