শিক্ষাঙ্গন

জাবির হলে হলে আগ্নেয়াস্ত্রের ঝনঝনানি

শাহাদাত হোসাইন স্বাধীন, জাবি থেকে

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ৮:৫০ পূর্বাহ্ন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দেশি-বিদেশি নানা ধরনের অস্ত্রের সম্ভার। গত ১৩ই ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষই প্রশাসনের সামনে দেশি-বিদেশি অস্ত্রের মহড়া দেয়। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে দু’পক্ষ থেকে সাত রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। এই সংঘর্ষে সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের পক্ষে নেতৃত্ব ছিলেন ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক নীলাদ্রি শেখর মজুমদার। অন্য পক্ষে ছিল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন। সংঘর্ষ স্থানে সাধারণ সম্পাদকের ঘনিষ্ঠ এক ছাত্রলীগ কর্মী ও সম্পাদক পদধারী এক নেতাকে অস্ত্র হাতে দেখা যায়। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হলের শাখা ছাত্রলীগের এক সহ-সভাপতিও সেদিন নিজ হাতে গুলি ছোড়েন। তাছাড়া সেদিন অন্তত ৭০-৮০ জন ছাত্রলীগ কর্মীর হাতে ছিল ধারালো রামদাসহ নানা দেশীয় অস্ত্র। এর আগে  গত অক্টোবর মাসে আল-বেরুনী ও মীর মশাররফ হোসেন হলের মধ্যে সংঘর্ষে ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজনকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে মহড়া দিতে দেখা যায়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু নিয়োগ হাতিয়ে নেওয়া ও মেগা প্রজেক্টের টেন্ডারে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের মধ্যে বেশ কয়েকটি গ্রুপ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে এসব গ্রুপের পেছনে কয়েকজন শিক্ষকও কলকাঠি নাড়ছেন। এই বিবদমান গ্রুপের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে প্রশাসনের অবস্থানও রহস্যময়। তাই নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখতে হলগুলোতে প্রতিনিয়ত ঢুকছে দেশি-বিদেশি নানা অস্ত্র। আগ্নেয়াস্ত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে দেশি- বিদেশি রিভলবার, নাইনএমএম বন্দুক, রামদা, জিআই পাইপ, হকস্টিক অন্যতম।
ছাত্রলীগ সূত্রে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে পোষ্য কোটার হয়েও অবৈধভাবে হলে থাকা শাখা ছাত্রলীগের এক সাংগঠনিক সম্পাদকের হাতে রয়েছে বেশ কয়েকটা আগ্নেয়াস্ত্র।  এছাড়া ওই হলে শাখা ছাত্রলীগের এক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও হল কমিটির এক পদ প্রত্যাশীর কাছে অস্ত্র থাকার কথা নিশ্চিত করেছে বেশ কয়েকটি সূত্র।
অন্যদিকে শহীদ রফিক-জব্বার হলে ছাত্রলীগের এক সহ-সভাপতি ও একজন সাংগঠনিক সম্পাদকের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র থাকার কথা জানিয়েছে সূত্র। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে ছাত্রলীগের দুই সহ-সভাপতির কাছে বিদেশি রিভলবার থাকার কথা ছাত্রলীগ সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মওলানা ভাসানী হলে ছাত্রলীগের এক  সাংগঠনিক সম্পাদক ও আল-বেরুনী হলে একজন সহ-সভাপতির কাছেও রয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র। এছাড়া মীর মশাররফ হোসেন হলে দুই কর্মীর কাছেও অস্ত্র রয়েছে। শহীদ সালাম বরকত হলে একজন সহ-সভাপতি ও একটি সম্পাদকীয় পদধারী ছাত্রলীগ নেতার কাছে অস্ত্র আছে বলে জানা গেছে। কামাল উদ্দীন হলে এক সহ-সভাপতিসহ ছাত্রলীগের অন্তত দুই শীর্ষ নেতার কাছে রয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র।
যোগাযোগ করা হলে শহীদ রফিক জব্বার হলের প্রভোস্ট ও প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক সোহেল রানা বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) আমরা প্রভোস্ট কমিটি জরুরি সভা ডেকেছিলাম। ক্যাম্পাসে এভাবে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া নিয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করি।  হলগুলোতে যাতে  এই ধরনের অস্ত্র  না রাখে, পাশাপাশি সাবেক শিক্ষার্থীরা যাতে হল ছাড়ে, বহিরাগতদের যাতে কেউ হলে আশ্রয় না দেয় এবং সবাইকে আইডি কার্ড রাখার  জন্য ইতিমধ্যে বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া যেকোন মুহূর্তে হলগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে রেইড দেয়া হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ক্যাম্পাসের শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পুলিশ মোতায়েন করা আছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাথে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে অস্ত্র উদ্ধার ও বহিরাগতরা যদি থাকে তবে তাদের  হল থেকে বিতাড়িত করার জন্য যেকোন সময় হলে হলে রেইড দেয়া হবে।’ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, হলগুলোতে বহিরাগত ও পোষ্য কোটার অনেকে আছে। ক্যাম্পাসের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে প্রশাসন যে উদ্যোগ নিবে আমরা তাকে স্বাগত জানাই।
শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চল বলেন, জাবি ছাত্রলীগ কোন ধরনের সংঘর্ষের পক্ষে না। প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করলে ছাত্রলীগ প্রশাসনের পাশে থাকবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status