প্রথম পাতা

মালদ্বীপে চীন-ভারতের লড়াই যে কারণে

মিসবাহুল হক

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, শুক্রবার, ১০:২৪ পূর্বাহ্ন

 গত বছরের সেপ্টেম্বরে মালদ্বীপের নির্বাচনে বিরোধী জোটের প্রার্থী ইব্রাহীম ইবু মোহাম্মদ সলিহ অবাক করা জয় পেয়েছেন। এই নির্বাচনের ফল খুবই সাধারণ একটি ভূ-রাজনৈতিক বাক্যের মাধ্যমে বর্ণনা করা সম্ভব। তা হলো- নির্বাচনে ভারত জিতেছে, পরাজিত হয়েছে চীন। পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিনের অধীনে মালদ্বীপ গণতন্ত্র ও আইনের   শাসনকে পরিহার করেছে। এর মধ্য দিয়ে দেশটি শুধু নয়াদিল্লি থেকে দূরে সরেছে এমন না। একই সঙ্গে চীনের থেকে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ঋণও নিয়েছে।

নির্বাচনের পরবর্তী মাসগুলোতে, বিশেষ করে গত নভেম্বরে সলিহ’র নেতৃত্বে নতুন সরকার যাত্রা শুরুর পর থেকে দেশটি শুধু এটা যাচাই করার চেষ্টা করছে যে, ইয়ামিনের অধীনে ঠিক কি পরিমাণ চীনা ঋণ নেয়া হয়েছে। গত সপ্তাহে সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে এই যাচাই প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি, অর্থ লুট ও চুরির অভিযোগ এনেছে। নতুন প্রেসিডেন্ট সলিহ অভিষেক বক্তৃতায় চীনের দেয়া ‘সার্বভৌম ঋণ’ নিয়ে উদ্বেগের কথা বলেছিলেন। সার্বভৌম ঋণের অর্থ হলো- ঋণ প্রদানকারী দেশ সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সকল ক্ষেত্রে সার্বভৌমত্বের সুযোগ ভোগ করতে পারবে। অর্থাৎ চীনা অর্থায়নে মালদ্বীপে যেসব প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে, সেগুলোতে মালদ্বীপ সরকার হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।  ঋণের শর্ত হিসেবে চীন এতে একক কর্তৃত্ব ভোগ করবে।

নতুন সরকারের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার সামনেই সলিহ পূর্ববর্তী সরকারের নির্বিচারে চীনা ঋণ গ্রহণের সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেন। পুরোপুরি রাজনৈতিক স্বার্থ সিদ্ধির জন্য গৃহীত এসব মেগা উন্নয়ন প্রকল্পগুলোকেই তিনি মালদ্বীপের শোচনীয় অর্থনৈতিক অবস্থার জন্য দায়ী করেন। সলিহ বলেন, ব্যাপক অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির কারণে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বিলিয়ন বিলিয়ন রুপি কমে গেছে। এই অর্থ মালদ্বীপের জনগণের। যা জনগণের ভালোর জন্য খরচ করার কথা ছিল।

যাই হোক, ইয়ামিনের শাসনামলে মালদ্বীপ চীনা ঋণের জালে ঠিক কতোটা জড়িয়েছে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব প্রকাশিত হয়নি। ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের নতুন একটি রিপোর্টে এ বিষয়ে কিছুটা জবাব পাওয়া যায়। মালদ্বীপের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য উল্লেখ করে রিপোর্টে হিসাব দেখানো হয়েছে, চীনের কাছে মালদ্বীপের ঋণ ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি হবে। শুধু তাই না, বেশির ভাগ ঋণের ক্ষেত্রেই মালদ্বীপ চীনকে সার্বভৌমত্বের গ্যারান্টি দিয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদ পৃথক একটি হিসাবে এই ঋণের পরিমাণ ৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি দেখিয়েছেন। যদিও তার এই তথ্য প্রমাণিত না।

এমন পরিস্থিতিতে সলিহ’র নেতৃত্বাধীন সরকারকে ঋণের বিষয়ে চীনের কাছ থেকে আরো অনুকূল শর্ত খুঁজতে হবে। তার অর্থ হলো, দ্রুতই প্রেসিডেন্ট সলিহ চীনের আর্থিক সহায়তায় চলমান প্রকল্পগুলো থেকে সরাসরি তার দেশকে সরিয়ে নেয়ার মতো অবস্থায় নেই। তাই  সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে ভারত জিতেছে বলা হলেও ভবিষ্যৎ সময়ে মালদ্বীপ চীনা বলয় থেকে নিজেকে কতটা মুক্ত করতে পারে- সেটাই দেখার বিষয়।

   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status