প্রথম পাতা

মার্কিন কংগ্রেসের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চিঠি

বাংলাদেশে গণতন্ত্র রক্ষায় পদক্ষেপ নিতে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান

মানবজমিন ডেস্ক

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ১০:২০ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে ‘গণতন্ত্রের নেতিবাচক গতিবিধি’ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মার্কিন কংগ্রেসের হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি। একই সঙ্গে ভোট কারচুপির গুরুতর অভিযোগসহ বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য যেসব হুমকি রয়েছে, সে বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান এলিয়ট এল এনজেলসহ ৬ জন প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যান এ আহ্বান জানান। পাশাপাশি পেন্টাগন থেকেও অভিন্ন উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।

৬ কংগ্রেসম্যান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র সুরক্ষায় প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর কাছে একটি চিঠি লিখেছেন। তাতে বাংলাদেশে সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম, ভোট কারচুপি ও ভোটারদের ওপর নিষ্পেষণের কথা উল্লেখ করা হয়। হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির পাশাপাশি এলিয়ট এল এনজেলের নিজের ওয়েবসাইটেও ওই চিঠি এবং এ সংক্রান্ত বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।

এর শিরোনাম ‘হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি কলস ফর অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যাকশন টু প্রটেক্ট ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ’। যার অর্থ দাঁড়ায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র রক্ষায় প্রশাসনিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর কাছে যে ৬ জন প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যান স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়েছে তাতে স্বাক্ষর করেছেন প্রতিনিধি পরিষদের হাউস কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যান এলিয়ট এল এনজেল, র‌্যাংকিং মেম্বার মাইকেল টি ম্যাকল (টেক্সাসের রিপাবলিকান), এশিয়া প্যাসিফিক সাব-কমিটির চেয়ারম্যান ব্রাড শারমান (ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্রেট), মিশিগানের ডেমোক্রেট প্রতিনিধি অ্যান্ডি লেভিন ও মিসৌরি থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান দলের প্রতিনিধি অ্যান ওয়াগনার।

মঙ্গলবার লেখা ওই চিঠিতে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য যেসব হুমকি তার বিষয়ে দৃষ্টি দিতে। এতে বলা হয়, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জালিয়াতি, অনুপযুক্তভাবে নির্বাচনে কারচুপি ও ভোটারদের দমিয়ে রাখার বিষয়ে যেসব রিপোর্ট পাওয়া গেছে তা জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন ওই সদস্যরা। তারা এসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ‘অ্যাকশন’ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এতে বলা হয়, এ বছর আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার কিছু দেশে ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহতভাবে যে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে এবং সম্মান দেখিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহতভাবে প্রদর্শন করে যেতে হবে। আর তা শুরু করতে হবে বাংলাদেশকে দিয়েই। এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চিঠিটি নিচে তুলে ধরা হলো- জনাব সেক্রেটারি
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নেতিবাচক গতিবিধির বিষয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এমন প্রবণতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কীভাবে সাড়া দিচ্ছে সে বিষয়ে একটি রূপরেখার অনুরোধ করছি, বিশেষ করে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের নির্বাচনে গুরুতর সব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বিগ্ন, যেখানে বলা হয়েছে নির্বাচনে বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব রয়েছে। আপনি যেমনটা জানেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকারে সমর্থন দেয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক নির্বাচনে যেসব গুরুতর অনিয়মের রিপোর্ট এসেছে তা এসব গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থের জন্য মারাত্মক হুমকি।

বাংলাদেশের আছে একটি শক্তিশালী ও গর্বিত গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য। তাই আমরা বিশেষভাবে এ বিষয়ে নির্বাচনকে সামনে রেখে যে প্রচারণা হয়েছে তা সহিংসতা, গণগ্রেপ্তার ও মুক্ত মতের ওপর দমনপীড়নের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগ দাবি করেছে, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে যেসব আসনে তার মধ্যে শতকরা ৯৬ ভাগ আসনে বিজয়ী হয়েছে তারা। এটা ২০১৪ সালে এই দল ও তার মিত্রদের জয়ী আসনের চেয়েও বেশি। ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল মূল বিরোধী দল। আর তাই অর্ধেকের বেশি আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছিলেন।

যদিও সরকার নিয়োজিত নির্বাচন কমিশন বলেছে, নির্বাচন ন্যায়সঙ্গত হয়েছে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি ব্যাপক জালিয়াতি ও ভোটারদের দমিয়ে রাখার অভিযোগগুলো অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া উচিত। প্রেস থেকে বলা হয়েছে, ভোট গ্রহণ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর সময় সাংবাদিকরা বেশকিছু ব্যালট বাক্স সন্দেহজনকভাবে পরিপূর্ণ দেখতে পেয়েছেন। আরো রিপোর্ট আছে যে, মধ্যাহ্নভোজের বিরতি বা ব্যালট শেষ হওয়ার কথা বলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কিছু মানুষকে ভোট প্রদানে বাধা দিয়েছেন। অনেক ভোটার বলেছেন, তাদের ভোট আগেই দেয়া হয়ে গেছে। বেশির ভাগ বিদেশী পর্যবেক্ষককে পরিচয়পত্র ও ভিসা দিতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্ত পর্যবেক্ষকরাও রয়েছেন।

এ বছর আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডসহ এশিয়ায় সিরিজ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি অব্যাহত প্রতিশ্রুতি ও সম্মান প্রদর্শন করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ কাজটি শুরু করতে হবে বাংলাদেশ থেকে।

এ বিষয়ে আপনার মনোযোগের জন্য ধন্যবাদ। সময়মতো এ বিষয়ে সাড়া দেবেন বলে আমরা প্রত্যাশায় রইলাম।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status