বিশ্বজমিন

বিক্ষোভ-কেলেঙ্কারিতে টালমাটাল ম্যাক্রনের সরকার

মানবজমিন ডেস্ক

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:২২ পূর্বাহ্ন

ফ্রান্সকে বাম-ডান ঘরানার গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে নতুন কিছুর স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন ইম্যানুয়েল ম্যাক্রন। কিন্তু তার দৃশ্যত প্রগতিশীল সরকারের বিরুদ্ধেই তুঙ্গে উঠেছে ‘হলুদ ভেস্ট’ বিক্ষোভ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ক্ষমতার অপব্যবহারের কেলেঙ্কারি। যার দরুন এলিজি প্রাসাদ থেকে পদত্যাগ করতে হয়েছে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী কর্মকর্তাকে। এর মধ্যে সর্বশেষ পদত্যাগ করলেন প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বিশেষ উপদেষ্টা ইসমাইল এমেলিয়েন। এ খবর দিয়েছে গার্ডিয়ান।
খবরে বলা হয়, এমেলিয়েন ছিলেন ২০১৭ সালে ম্যাক্রনের সফল নির্বাচনী প্রচারণার নেপথ্যে অন্যতম মূল মস্তিষ্ক। গতানুগতিক রাজনৈতিক দলকে পেছনে ফেলে সেবার ক্ষমতায় আসে ম্যাক্রনের আনকোরা নতুন দল। ক্ষমতায় আসার পর এলিজি প্রাসাদে বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পান এমেলিয়েন। তার কাজ ছিল, নতুন নতুন ধ্যান-ধারণার মাধ্যমে গতানুগতিক রাজনীতিকে ‘উলটপালট’ করা অব্যাহত রাখা।
প্রেসিডেন্ট এখন তার ঘনিষ্ঠ সার্কেলে পরিবর্তন আনতে চান। তার তরুণ দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নভেম্বরে নতুন জ্বালানি করের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া ইয়েলো ভেস্ট আন্দোলন সম্পর্কে তারা আগেভাগে কিছুই টের পাননি। এই আন্দোলন এখন পুরোদমে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। প্রেসিডেন্টের তরুণ উপদেষ্টারা চতুর ডিজিটাল বার্তা ও কৌশল প্রণয়নে দক্ষ হলেও মাঠের রাজনীতিতে অপরিপক্ব বলে অনেকে বলছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে ইসমাইল এমেলিয়েনের নাম উঠে আসে প্রেসিডেন্টের সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা আলেক্সান্দ্রে বেনালার বিরুদ্ধে চলমান এক তদন্তে। তবে এমেলিয়েন ও প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, এর সঙ্গে তার পদত্যাগের কোনো সম্পর্ক নেই।
গত গ্রীষ্মে মূলত বেনেলাকে নিয়ে কেলেঙ্কারি শুরু। তখন দেখা যায়, বেনেলা পুলিশ কর্মকর্তার পোশাক পরে মে দিবসের প্রতিবাদ বিক্ষোভে মানুষকে পেটাচ্ছেন। যদিও তার কোনো পুলিশি প্রশিক্ষণ বা ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল না। এই অবৈধ কাণ্ডের পর তাকে বরখাস্ত করা হয়। তবে বিরোধী দলগুলো ততদিনে বলাবলি শুরু করেছে যে, প্রেসিডেন্টের দপ্তর এলিজি প্রাসাদ থেকে এই কেলেঙ্কারি দামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চলছে।
কেলেঙ্কারি আরো জটিল হয় যখন দেখা যায়, নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদ থেকে বরখাস্তের পরও বেনালা কূটনৈতিক পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশে যাচ্ছেন। এই ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর তার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে কূটনৈতিক পাসপোর্ট ব্যবহারের অভিযোগ গঠন করা হয়।
তাকে বরখাস্তের পর মিডিয়াপার্ট নামে একটি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিষয়ক ওয়েবসাইট তার কথোপকথনের রেকর্ডিং প্রকাশ করে। এতে তাকে বলতে শোনা যায়, বরখাস্ত হলেও প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা এমেলিয়েনসহ প্রশাসনের অনেক কর্তাব্যক্তির কাছ থেকে সহায়তা ও সমর্থন তিনি পেয়ে যাচ্ছেন। এই কথোপকথন ফাঁসের পর ফরাসি সরকারি কৌঁসুলিরা মিডিয়াপার্টের কার্যালয়ে তল্লাশি চালানোর চেষ্টা করে। তবে ওয়েবসাইটটির সম্পাদকরা তাতে সম্মতি দেননি।
সম্প্রতি এই বেনালার বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ উঠেছে। মিডিয়াপার্ট তদন্ত করে বের করেছে, প্রায় ২২ লাখ ইউরো সমমূল্যের দু’টি নিরাপত্তা চুক্তির মধ্যস্থতায় জড়িত থেকে থাকতে পারেন বেনালা। ওই নিরাপত্তা চুক্তি দু’টি ছিল দুই রাশিয়ান ধনকুবেরের, যাদের সঙ্গে রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এই তথ্য সত্য হলে আইনসভার এক কমিটিকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন বলেও প্রমাণিত হবে। এরপর ফরাসি কৌঁসুলিরা বেনেলার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার তদন্ত শুরু করে।
এদিকে জুলাইয়ে বেনেলাকে ঘরে দাওয়াত দিয়েছেন এই খবর ফাঁস হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী এডুয়ার্ড ফিলিপের নিরাপত্তা প্রধান পদত্যাগ করেছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status