সেই ডি মারিয়াতে ঘায়েল ম্যানইউ

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড থেকে অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়ার বিদায়টা সুখকর ছিল না। মাত্র এক মৌসুম খেলেই ২০১৫ সালে প্যারিসে পাড়ি দেন এ আর্জেন্টাইন উইংগার। ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ দিয়ে মঙ্গলবার ওল্ড ট্রাফোর্ডে প্রত্যাবর্তন হয় ডি মারিয়ার। আর ম্যানইউ সমর্থকদের বিরূপ আচরণের মুখেও ম্যাচসেরা নৈপুণ্য দেখান তিনি। এতে তাদেরই মাঠে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হতাশায় ডোবায় প্যারিস সেইন্ট জার্মেই (পিএসজি)। এদিন   ডি মারিয়ার প্রতি ক্ষোভ আর ঘৃণা প্রকাশ করে ইউনাইটেড সমর্থকরা। গ্যালারি থেকে পানি এবং বিয়ারের বোতল ছোড়া, চিৎকার করে গালি দেয়া কিছুই বাদ রাখেনি স্বাগতিক দর্শকরা। প্রথমার্ধে সাইডলাইনে বল দখলের লড়াইয়ে ডি মারিয়াকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন ম্যানইউ অধিনায়ক অ্যাশলে ইয়াং। তবে পিএসজির হয়ে মাঠের পারফরম্যান্সেই এর দাঁতভাঙা জবাব দেন ডি মারিয়া। তাতেই ঘায়েল উড়ন্ত ফর্মে থাকা ওলে গানার সুলশারের ম্যানইউ। শেষ ষোলো রাউন্ডের প্রথম লেগে ম্যানচেস্টার থেকে ২-০ গোলের জয় নিয়ে ফেরে নেইমার-কাভানিহীন পিএসজি। প্রেসনেল কিমপেম্বে ও কিলিয়ান এমবাপ্পের  দু’টি গোলেই অ্যাসিস্ট করেন ম্যাচসেরা খেলোয়াড় ডি মারিয়া। ম্যাচের ৮৯ মিনিটে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ম্যানইউ তারকা পল পগবা। আর গত ডিসেম্বরে হোসে মরিনহোর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার পর প্রথম হার দেখেন সুলশার। তার অধীনে টানা ১১ ম্যাচ অপরাজিত (১০ জয়, ১ ড্র) ছিল ম্যানইউ। প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে এবারই প্রথম মুখোমুখি হয় ম্যানইউ ও পিএসজি। আর ডি মারিয়া ঝলকে ফ্রান্সের প্রথম ক্লাব হিসেবে ওল্ড ট্রাফোর্ডে জয়ের ইতিহাস গড়ে পিএসজি। বিপরীতে ভোগান্তির এক রেকর্ডে নাম লেখায় ম্যানইউ। নিজেদের ক্লাব ইতিহাসে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় ঘরের মাঠে এই প্রথম একাধিক গোল হজম করলো ইংলিশ ফুটবলের সবচেয়ে সফল ক্লাবটি। ইনজুরির কারণে নেইমার, এডিনসন কাভানি ও রাইটব্যাক টমাস মুনিয়েরকে ছাড়াই মাঠে নামে টমাস টুকেলের পিএসজি। আর জয় শেষে পিএসজি স্ট্রাইকার এমবাপ্পে বলেন, ‘এবার আমাদের ডর-ভয়ের গল্প  (নেইমার-কাভানির ইনজুরি) বন্ধ করা উচিত।’ ম্যাচের প্রথমার্ধ ছিল অনেকটাই ম্যাড়মেড়ে। আর প্রথমার্ধেই জেসে লিনগার্ড ও অ্যান্তোনি মার্শিয়ালের চোট নিয়ে মাঠ ছাড়া সুলশারের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে। বিরতির পর ৫৩ মিনিটে স্বাগতিকদের স্তব্ধ করে দেয় পিএসজি। ডি মারিয়ার দারুণ কর্নার কিক থেকে পায়ের টোকায় গোলরক্ষক ডেভিড ডি গেয়াকে সুযোগ দেননি কিমপেম্বে। পেশাদার ক্যারিয়ারে পিএসজির হয়ে ৯৭তম ম্যাচে এসে প্রথম গোল উদযাপন করেন এই তরুণ ফরাসি ডিফেন্ডার। ৭ মিনিট পরই ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে সুলশারের শিষ্যরা। ডি-বক্সের বাম পাশ দিয়ে ডি মারিয়ার নিখুঁত পাসে দু’জনের মাঝ থেকে বল জালে পাঠান বিশ্বকাপ জয়ী ফরাসি তারকা এমবাপ্পে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগে লুইস এনরিকে ও এডিন জেকোর পর তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে ইংল্যান্ডে নিজের তৃতীয় অ্যাওয়ে ম্যাচেও গোলের কীর্তি গড়েন এমবাপ্পে। আর চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ক্যারিয়ারে এ নিয়ে তৃতীয়বার ম্যাচে দু’টি অ্যাসিস্টের নৈপুণ্য দেখান ডি মারিয়া। আর ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্সে মাঠেই ম্যানইউ সমর্থকদের দিকে তাকিয়ে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাতেও ছাড়েননি তিনি। বিয়ারের বোতল কুড়িয়েও খাওয়ার ভঙ্গিতে ব্যঙ্গ করেন ৩০ বছর বয়সী এই প্লে-মেকার। পুরো ম্যাচে ৪৪% বল দখলে রেখে গোলমুখে ১০টি শট নেয় ম্যানইউ। কিন্তু অনটার্গেটে ছিল মাত্র ১টি শট। আর পিএসজির ১২ শটের মধ্যে ৫টি ছিল অনটার্গেটে। দু’টি অ্যাওয়ে গোল নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে এক পা দিয়ে রাখলো পিএসজি। আগামী ৬ই মার্চ শেষ ষোলো রাউন্ডের দ্বিতীয় লেগ মাঠে গড়াবে। চ্যাম্পিয়ন্স লীগের নকআউট পর্বে নিজ মাঠে প্রথম লেগে ২ বা তার বেশি গোলের ব্যবধানে হেরে শেষ ৩৪টি দলের কেউ পরবর্তী রাউন্ডে যেতে পারেনি। আর প্যারিসে পর্বত পাড়ি দিতে হবে বলে কঠিন চ্যালেঞ্জ দেখছেন সুলশার। ম্যাচ শেষে তিনি বলেন, ‘প্রথম গোল করেই পিএসজি ছন্দ পেয়ে যায় এবং ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয়। আমরা তাদের লেভেলে খেলতে পারিনি। এই অভিজ্ঞতা থেকে আরো শিখতে হবে। যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এটা আমাদের জন্য বাস্তবতার পরীক্ষা ছিল। এখন আমাদের প্যারিসে গিয়ে পর্বত পাড়ি দিতে হবে। নিজেদের ফুটবল খেলে আজকের চেয়ে উন্নতি করাই আমাদের লক্ষ্য।’