এক্সক্লুসিভ

তামাকের ব্যবহার সাড়ে ১৮ শতাংশ কমেছে

স্টাফ রিপোর্টার

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৯:১১ পূর্বাহ্ন

গত আট বছরে দেশে তামাকের ব্যবহার সাড়ে ১৮ শতাংশ কমেছে। ২০০৯ সালে ১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে তামাকের ব্যবহার ছিল ৪৩ দশমিক ৩  শতাংশ। যা ২০১৭ সালে ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশে নেমে এসেছে। সমপ্রতি প্রকাশিত গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) গবেষণায় এই ফলাফল উঠে আসে। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনে অগ্রগতি, বাধা ও করণীয়: গ্যাটস ২০১৭ এর আলোকে একটি বিশ্লেষণ’ শীর্ষক আলোচনায় এই তথ্য জানান বিশেষজ্ঞরা। প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) যৌথভাবে ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস্‌-এর সহায়তায় এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে আয়োজকরা জানান, ২০০৯ এর তুলনায় ২০১৭ সালে সার্বিকভাবে তামাকের ব্যবহার ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ কমলেও নারীদের মধ্যে হ্রাস পেয়েছে মাত্র ১২ দশমিক ২ শতাংশ, যা খুবই হতাশাজনক। এসময়ে পুরুষদের মধ্যে তামাকের ব্যবহার কমেছে প্রায় ২১ শতাংশ। দেশে ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারী ২০ দশমিক ৬ শতাংশ (নারী ২৪ দশমিক ৮ শতাংশ, পুরুষ ১৬ দশমিক ২ শতাংশ) এবং ধূমপায়ী ১৮ শতাংশ (পুরুষ ৩৬ দশমিক ২ শতাংশ, নারী  শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ)। সিগারেট ব্যবহারকারীর হার প্রায় অপরিবর্তিত (১৪ শতাংশ) থাকলেও সিগারেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা (১৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন থেকে ১৫ মিলিয়ন) বেড়েছে যা খুবই উদ্বেগজনক। অতি উচ্চবিত্ত জনগোষ্ঠীর (২৪ শতাংশ) তুলনায় অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর (৪৮ শতাংশ) মধ্যে তামাক ব্যবহারের প্রবণতা দ্বিগুণ।

এ ছাড়া শহরের (২৯ দশমিক ৯ শতাংশ) তুলনায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর (৩৭ দশমিক ১ শতাংশ) মধ্যে তামাক ব্যবহারকারীর হার অনেক বেশি। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপান নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে ৮১ লাখ মানুষ কর্মক্ষেত্রে এবং আড়াই কোটি মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন, যা খুবই হতাশাজনক। বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন ৪ কোটি ৮ লাখ (৩৯  শতাংশ) মানুষ এবং এক্ষেত্রে নারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন অনেক বেশি (৩৬ দশমিক ৫ শতাংশ), অথচ নারী ধূমপায়ীর হার মাত্র  শূন্য দশমিক ৮ শতাংশ। গ্যাটস ২০১৭ অনুযায়ী, যত মানুষ ধূমপানবিরোধী তথ্য সম্পর্কে জেনেছেন (৫৫ দশমিক ৯ শতাংশ), প্রায় কাছাকাছি ৫৩ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ সিগারেট-বিড়ির বিজ্ঞাপন দেখেছেন। অর্থাৎ তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারণাও প্রায় একই গতিতে চলছে, যা খুবই উদ্বেগজনক। প্রায় ৭৯ শতাংশ সিগারেট ধূমপায়ী, ৭০ শতাংশ বিড়ি ধূমপায়ী, ৪১ শতাংশ ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারী প্যাকেট/কৌটায় স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা দেখে তামাক ব্যবহার ছেড়ে দেয়ার কথা ভেবেছেন, যা খুবই আশাব্যঞ্জক। অন্যদিকে বর্তমানে একজন সিগারেট ধূমপায়ীকে প্রতিমাসে সিগারেট বাবদ ব্যয় করতে হয় গড়ে প্রায় এক হাজার ৭৮ টাকা।

বর্তমান ই-সিগারেট ব্যবহারকারী শূন্য দশমিক ২ শতাংশ, যা প্রচলিত তামাকপণ্য ব্যবহারকারীর তুলনায় অতি সামান্য। তবে ই-সিগারেটের ব্যবহার এখনো ব্যাপক না হলেও এটি যে বাড়ছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারের চিত্র এখনো উদ্বেগজনক। কার্যকর তামাক কর ও মূল্য পদক্ষেপের অভাবে সস্তা তামাকপণ্য, তামাকপণ্যের সহজলভ্যতা, বিদ্যমান আইনের দুর্বল বাস্তবায়ন, তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ এবং আইনি দুর্বলতা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের পথে প্রধান অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে বলে তারা জানিয়েছেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণে আইন রয়েছে। কিন্তু সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয় না। তবে গত একদশকে বাংলাদেশে তামাক ব্যবহার কমেছে। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তামাকের ক্ষতিকারক দিকের প্রচারণা চালানোর ওপরে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন। আইন অমান্য করে ‘দেবী’ চলচ্চিত্র প্রদর্শনের ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, এটা আমি খোঁজ নিয়ে দেখবো। আইন ভঙ্গ করে কেউ এটা করতে পারবে না,  কেউ যদি আইন অমান্য করে প্রদর্শন করে, তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।  সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, অর্থনীতিবিদ ড. মাহফুজ কবীর, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস্‌ গ্রান্টস’র ম্যানেজার আব্দুস সালাম মিয়া, সাংবাদিক মর্তুজা হায়দার লিটন, প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। এটিএন বাংলার প্রধান প্রতিবেদক ও এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা’র কো-কনভেনর নাদিরা কিরণ-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে মূল উপস্থাপনা তুলে ধরেন হাসান শাহরিয়ার।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status