বিশ্বজমিন

অচল কানাডা

মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার সতর্কতা

মানবজমিন ডেস্ক

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বুধবার, ২:২১ পূর্বাহ্ন

আলবার্টা থেকে দক্ষিণাঞ্চলীয় অন্টারিও পর্যন্ত তুষারঝড়ে অচল কানাডা। যেন বরফের নিচে ঢাকা পড়ে আছে সব। মঙ্গলবার এমন ভয়াবহ আবহাওয়া বিরাজ করেছে দেশটির বেশির ভাগ এলাকায়। বিমানবন্দরগুলো যেন পরেছে বিধবা পোশাক। তুষারে সাদা হয়ে আছে সব। সঙ্গে তুষারসহ ঝড়ো বাতাস। রাস্তাঘাট তার নিচে ঢেকে আছে। কোনটা রাস্তা আর কোনটা খাদ বোঝার কোনো উপায় নেই। বিমানবন্দরগুলোতে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে বিমান। চলছে তুষার সরানোর কাজ। তাতেও কাজ হচ্ছে না। একপাশ থেকে সরানো হচ্ছে বরফ। অন্যপাশ থেকে আবার ঢেকে আসছে। এমন বিরূপ পরিবেশে বন্ধ রাখা হয়েছে অনেক স্কুল, কলেজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মানুষ একটু উষ্ণতার খোঁজে ঘরের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখছেন নিজেকে। অন্তত এ সময়টাতে তো প্রিয়জনকে একটু সান্নিধ্য দিতে পারছেন! এতেই যেন শান্তনা।
অনলাইন গ্লোব অ্যান্ড মেইলের খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সকালে গ্রেটার টরোন্টো এলাকায় ঘন্টা ৮০ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হচ্ছিল শক্তিশালী ঝড়ো হাওয়া। এর আগেই শহরটি ২০ সেন্টিমিটার বরফে ঢেকে যায়। সঙ্গে বৃষ্টি আর তুষারপাত তো ছিলই। সন্ধ্যায় পরিবেশ আরো খারাপ আকার ধারণ করে। টরোন্টোজুড়ে ট্রাফিক ব্যবস্থা ছিল অচল। দৃষ্টিসীমা ছিল একেবারে সীমিত। বিমানগুলোর উড্ডয়ন বিলম্বিত বা বাতিল করা হয়েছে।   
ওই শহরের বাসিন্দা স্কট মিলরয় বলেছে, কুইনস কুয়ে’তে কোনো গাড়িই নেই রাস্তায়। তিনি ডাউনটাউনে তার বাসায় অবরুদ্ধ হয়ে ছিলেন। সঙ্গে ছিল তার নিজের সন্তান ও অন্য ৩০টি বাচ্চা। এসব বাচ্চাকে তার কাছে রেখে যান পিতামাতারা। কানাডায় বাচ্চা রাখার জন্য একশ্রেণির মানুষ আছেন। তাদেরকে বলা হয় বেবিসিটার। মিলরয় তেমনই একজন।
এই মৌসুমে এরই মধ্যে ওই শহরের ওপর দিয়ে কয়েক দফা শীতকালীন ঝড় বয়ে গেছে। জানুয়ারিতে টরোনোতে দেখা গেছে ৬৩ সেন্টিমিটার তুষার। ডিসেম্বরে তা ছিল ৫ সেন্টিমিটার। এনভায়রনমেন্ট কানাডার আবহাওয়াবিদ জেরাল্ড চেং বলেছেন, এবারের শীতকালটা অস্বাভাবিকভাবে কঠিন। কারণ, চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া শুরু হয়েছে বিলম্বে। গত বছর ডিসেম্বরে যে ঝড় শুরু হয়েছে তা এখন শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, মঙ্গলবারের ঝড় সৃষ্টি হয়েছে ‘কলোরাডো লো’ থেকে। সেখান থেকেই আবহাওয়ার গতিপ্রকৃতি সৃষ্টি হয়। এর ফলে বাতাস প্রবাহিত হয় শক্তিশালী। পড়ে বিপুল পরিমাণে তুষার।

আর পড়ে খন্ড খন্ড বরফ। সঙ্গে ‘ফ্রিজিং’ বৃষ্টিপাত।
টরোন্টো ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ড সহ অনেক স্থানে সব ক্লাস ও বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয় মঙ্গলবার। অন্য যেসব বোর্ড স্কুলে ক্লাস বাতিল করেছে তার মধ্যে রয়েছে টেমস ভ্যালি ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ড, হ্যামিলটন-ওয়েন্টওয়ার্থ ডিস্ট্রিক্ট স্কুল বোর্ড, পিল রিজিয়নের বোর্ডগুলো ও ওয়াটারলু এলাকার বোর্ডগুলো। এর পাশাপাশি টরোন্টোর লাইব্রেরি, চিত্তবিনোদন কেন্দ্রগুলোও বন্ধ রয়েছে। গ্রেট টরন্টো এরিয়ার অধীনস্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের সব বন্ধ রয়েছে। টরন্টো শহরের পরিবহন সার্ভিসের সুপারভাইজার মার্ক মিলস বলেছেন, তাদের স্টাফরা সার্বক্ষণিক সড়কগুলো পরিষ্কার করার কাজ করে যাচ্ছেন। তারা রাস্তায় লবণ ছিটিয়ে তা পরিষ্কার করার কাজ করছেন।
বিদ্যুতের সঙ্কট দেখা দিয়েছে স্কারবরো, নর্থ ইয়র্ক, ইতেবিকোকে। টরন্টো হাইড্রোর মুখপাত্র টোরি গাস বলেছেন, এসব এলাকায় বিশাল বিশাল গাছ আছে। সেগুলো পড়ে গিয়ে তার ছিড়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে পারে।
অন্টারিও প্রভিন্সিয়াল পুলিশ রিপোর্ট করেছে যে, মঙ্গলবার বিকাল ৪টা নাগাদ গ্রেট টরন্টো এলাকায় ৬০টি গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটেছে। সার্জেন্ট কেরি শমিডট বলেছেন, এই সংখ্যা স্বাভাবিক সংখ্যার চেয়ে কিছুটা বেশি। রাস্তায় যদি আরো গাড়ি থাকতো তাহলে এ অবস্থা আরো খারাপ হতে পারতো।  
কাছাকাছির শহর যেমন হ্যামিলটনেও বিভিন্ন  খাতে সেবা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তীব্র বিরূপ আবহাওয়া শহরের প্রশাসনিক অফিস বিকেলের মধ্যে বন্ধ করে দিতে বাধ্য করেছে। অন্যান্য সেবাখাত বন্ধ রয়েছে।
দেশের পশ্চিমাঞ্চলে এনভায়রনমেন্ট কানাডা এক্সট্রিম কোল্ড সতর্কতা জারি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে আলবার্তার কিছু এলাকা। আবহাওয়া বিষয়ক এজেন্সিগুলো বলেছে, বাতাসে হিমেল ছোঁয়া নেমে যেতে পারে মাইনাস ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে মাইনাস ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ অবস্থা বিরাজ করতে পারে পুরো সপ্তাহ। বিশেষ করে রাতের শেষ ভাগে এবং সকালে এ অবস্থা প্রকট আকার ধারণ করতে পারে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status