বিশ্বজমিন

বাংলাদেশে গণতন্ত্র রক্ষায় ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি ৬ কংগ্রেসম্যানের আহ্বান

মানবজমিন ডেস্ক

১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, বুধবার, ১০:২২ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশে ‘গণতন্ত্রের নেতিবাচক গতিবিধি’ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস। একই সঙ্গে বাংলাদেশে গণতন্ত্রে হুমকির বিষয়ে নজর দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি। বিশেষ করে ৩০ শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ‘ভোট জালিয়াতির গুরুত্বর অভিযোগের’ বিষয়ে দৃষ্টি দেয়ার কথা বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান এলিয়ট এল এনজেলসহ ৬ জন প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যান এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি পেন্টাগন থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ৬ কংগ্রেসম্যান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনকে বাংলাদেশের গণতন্ত্র সুরক্ষায় প্রশাসনিক পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তারা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওয়ের কাছে একটি চিঠি লিখেছেন। তাতে বাংলাদেশে সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জালিয়াতি, ভোট কারচুপি ও ভোটারদের ওপর নিষ্পেষণের কথা উল্লেখ করা হয়। এলিয়ট এল এনজেলের নিজের ওয়েবসাইটে ওই চিঠি এবং এ সংক্রান্ত বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। এর শিরোনাম ‘হাউস ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি কলস ফর অ্যাডমিনিস্ট্রেশন একশন টু প্রটেক্ট ডেমোক্রেসি ইন বাংলাদেশ’। যার অর্থ দাঁড়ায় বাংলাদেশে গণতন্ত্র রক্ষায় প্রশাসনিক পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে হাউজ ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটি। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওয়ের কাছে যে ৬ জন প্রভাবশালী কংগ্রেসম্যান স্বাক্ষরিত চিঠি পাঠানো হয়েছে তাতে স্বাক্ষর করেছেন প্রতিনিধি পরিষদের হাউস কমিটি অন ফরেন অ্যাফেয়ার্সের চেয়ারম্যান প্রতিনিধি এলিয়ট এল এনজেল। প্রতিনিধি মাইকেল টি ম্যাকল (টেক্সাসের রিপাবলিকান)। তিনি কমিটির র‌্যাংকিং মেম্বার। প্রতিনিধি ব্রাড শারমান (ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্রেট)। তিনি এশিয়া প্যাসিফিক সাব কমিটির চেয়ারম্যান। মিশিগানের ডেমোক্রেট দলীয় প্রতিনিধি অ্যান্ডি লেভিন ও মিসৌরি থেকে নির্বাচিত রিপাবলিকান দলের প্রতিনিধি অ্যান ওয়াগনার।
তারা মঙ্গলবার লেখা ওই চিঠিতে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য যেসব হুমকি তার বিষয়ে দৃষ্টি দিতে। বিবৃতিতে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে আরো বলা হয়, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জালিয়াতি, অনুপযুক্তভাবে নির্বাচনে কারচুপি ও ভোটারদের দমিয়ে রাখার বিষয়ে যেসব রিপোর্ট পাওয়া গেছে তা জোরালোভাবে তুলে ধরেছেন ওই সদস্যরা। তারা এসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ‘অ্যাকশন’ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এতে বলা হয়, এ বছর আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডসহ এশিয়ার কিছু দেশে ধারাবাহিকভাবে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহতভাবে যে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে এবং সম্মান দেখিয়ে যাচ্ছে তা অব্যাহতভাবে প্রদর্শন করে যেতে হবে। আর তা শুরু করতে হবে বাংলাদেশকে দিয়েই। এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
চিঠিটি নিচে তুলে ধরা হলো-
জনাব সেক্রেটারি
বাংলাদেশে গণতন্ত্রের নেতিবাচক গতিবিধির বিষয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এমন প্রবণতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিভাবে সাড়া দিচ্ছে সে বিষয়ে একটি রূপরেখার অনুরোধ করছি, বিশেষ করে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের নির্বাচনে সিরিয়াস সব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, যেখানে বলা হয়েছে নির্বাচনে বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব রয়েছে। আপনি যেমনটা জানেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকারে সমর্থন দেয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক নির্বাচনে যেসব গুরুতর অনিয়মের রিপোর্ট এসেছে তা এসব গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থের জন্য মারাত্মক হুমকি।
বাংলাদেশের আছে একটি শক্তিশালী ও গর্বিত গণতান্ত্রিক প্রবণতা।  তাই বিশেষ করে আমরা আতঙ্কিত, নির্বাচনকে সামনে রেখে যে প্রচারণা হয়েছে তা বাধাগ্রস্ত হয়েছে সহিংসতা, গণগ্রেপ্তার ও মুক্ত মতপ্রকাশের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন দ্বারা। আওয়ামী লীগ দাবি করেছে, তারা নির্বাচনে প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা হয়েছে যেসব আসনে তার মধ্যে শতকরা ৯৬ ভাগ আসনে বিজয়ী হয়েছে, যা ২০১৪ সালে এই দল ও তার মিত্রদের জয়ী আসনের চেয়েও বেশি। ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল মূল বিরোধী দল। আর তাই অর্ধেকের বেশি আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হয়েছিলেন।
যদিও সরকার নিয়োজিত নির্বাচন কমিশন বলেছে, নির্বাচন ন্যায়সঙ্গত হয়েছে। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি ব্যাপক জালিয়াতি ও ভোটারদের দমিয়ে রাখার অভিযোগগুলো অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া উচিত। প্রেস থেকে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে যখন নির্বাচন হয়েছে সরকারিভাবে তা ছিল উন্মুক্ত। তবে সাংবাদিকরা দেখতে পেয়েছেন, কিছু ব্যালটবাক্স সন্দেহজনকভাবে ব্যালটে পূর্ণ দেখা গেছে। আরো রিপোর্ট আছে যে, কিছু মানুষকে ভোট দেয়া থেকে বিরত রেখেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। বলা হয়েছে, মধ্যাহ্নভোজের জন্য ভোটকেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। অথবা বলা হয়েছে ব্যালট শেষ হয়ে গিয়েছে। অনেক ভোটার বলেছেন, তাদের ভোট আগেই দেয়া হয়ে গেছে। বিষয়টিকে আরো খারাপ করতে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সুবিধা দিয়ে যাদের পাঠানোর কথা তারাসহ আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের ক্রেডেন্সিয়াল ও ভিসা অনুমোদনে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
এ বছর আফগানিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডসহ এশিয়ায় সিরিজ নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রতিশ্রুতি ও সম্মান তা প্রদর্শন করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ কাজটি শুরু করতে হবে বাংলাদেশ থেকে।
এ বিষয়ে আপনার মনোযোগের জন্য ধন্যবাদ। সময়মতো এ বিষয়ে সাড়া দেবেন বলে আমরা প্রত্যাশায় রইলাম।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status