অনলাইন

ধর্ষণের অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত, মানিকগঞ্জে দুই পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেপ্তার

রিপন আনসারী,মানিকগঞ্জ থেকে

১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার, ১১:৪২ পূর্বাহ্ন

মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক সেকেন্দার হোসেন  ও সহকারী উপ-পুলিশ পরিদর্শক মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধে ডাকবাংলোতে  আটকিয়ে রেখে  তরুণীকে ধষর্ণ ও জোর করে ইয়াবা সেবন করানোর অভিযোগের  প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছেন পুলিশের তদন্ত কমিটির সদস্যরা। সোমবার রাতে ওই তরুণী পুলিশের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা করেন। রাতেই ওই তরুণীর ডাক্তারী পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া মধ্যরাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পুলিশের ওই দুই অভিযুক্ত কর্মকর্তাকে।
নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী রোববার পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মানিকগঞ্জ সদর সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান ও ডিএসবির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হামিদুর রহমান সিদ্দিকী সোমবার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করেন। মানিকগঞ্জ সদর সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান জানান, সাটুরিয়া থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয় নিয়ে সোমবার তদন্ত করা হয়। তদন্ত কমিটির কাছে নির্যাতনের শিকার ওই তরুণী তার উপর নির্যাতনের বর্ণনা দেন। দিনভর প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে ওই তরুণী পুলিশ সুপারের কাছে যে অভিযোগ করেছেন তার সত্যতা রয়েছে। এ ব্যাপারে ওই তরুণী সাটুরিয়া থানায় উপ-পুলিশ পরিদর্শক সেকেন্দার হোসেন  ও সহকারী উপপুলিশ পরিদর্শক মাজহারুল ইসলামকে আসামী করে মামলা করেছেন। মামলাটি তদন্ত করবেন সাটুরিয়া থানার (ওসি তদন্ত)  আবুল কালাম আজাদ। ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণের জন্য ওই তরুণীর  মেডিকেল পরীক্ষাসহ প্রয়োজনে ডিএনএ টেস্ট করা হবে। অপরাধীকে পুলিশ সদস্য হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে।
সাটুরিয়া অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আমিনুর ইসলাম জানান, ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী বাদি হয়ে সাটুরিয়া থানায় উপপুলিশ পরিদর্শক সেকেন্দার হোসেন  ও সহকারী উপ-পুলিশ পরিদর্শক মাজহারুল ইসলামকে আসামী করে মামলা করেছেন। আসামীরা বর্তমানে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত  রয়েছেন। তবে মধ্যরাতে তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক লুৎফর রহমান  জানান, সোমবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ওই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়। ধর্ষণের শিকার ওই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষার সময় তিনি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন গাইনী কনসালটেন্ট নাসিমা আক্তার, দন্ত সার্জেন্ট ডাক্তার রফিকুল ইসলাম,  রেডিওলজিষ্ট ডাক্তার হেলাল উদ্দিন ভূইয়া। এই মেডিকেল বোর্ড  দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি রিপোর্ট দেবেন।
মানিকগঞ্জ সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান জানান, সোমবার রাতেই ওই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার পর তিনি বাড়ি চলে গেছেন।
উপ-পুলিশ পরিদর্শক সেকেন্দার হোসেন আশুলিয়া থানায় কর্মরত থাকার সময় এক নারীর কাছ থেকে ১ লাখ টাকা ধার নিয়ে জমি কেনেন। কথা ছিল, জমি বিক্রির লাভ তাকে দেওয়া হবে। সেই হিসাবে তিনি সেকেন্দার হোসেনের কাছে প্রায় তিন লাখ টাকা পাবেন। কিন্তু টাকা না দিয়ে ঘুরাতে থাকেন তিনি। সাটুরিয়া থানায় বদলি হয়ে আসার পরও সেকেন্দারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। বুধবার বিকেলে প্রতিবেশী ভাগ্নিকে নিয়ে সাটুরিয়া থানায়  যান ওই নারী। এরপর সেকেন্দারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি টাকা দেবেন বলে তাদের সাটুরিয়া ডাকবাংলোতে নিয়ে যান। সন্ধ্যার পর সাটুরিয়া থানার এএসআই মাজহারুল ইসলামকে ডাকবাংলোতে নিয়ে যান সেকেন্দার হোসেন। সেখানে  ডাকবাংলোর একটি কক্ষে দুই পুলিশ কর্মকর্তা ইয়াবা সেবন করে ও তার সঙ্গে যাওয়া ওই তরুণীকে  জোর করে ইয়াবা সেবন করান। দুই পুলিশ কর্মকর্তা  ওই তরুণীকে দুই দিন আটকে রেখে ধর্ষণ করেন।  
নির্যাতনের শিকার  মামলার বাদি ওই তরুণী জানান,  মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপারের কাছে রোববার লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর সোমবার বিকেলে পুলিশের তদন্ত কমিটি তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। তদন্ত কমিটির কাছে তিনি কিভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তার বর্ণনা দেন। সোমবার সন্ধ্যায় তিনি বাদি হয়ে তার উপর ধর্ষণের অভিযোগে সাটুরিয়া থানায় উপপুলিশ পরিদর্শক সেকেন্দার হোসেন ও সহকারী উপপুলিশ পরিদর্শক মাজহারুল ইসলামকে আসামী করে মামলা করেছেন। ওই তরুণী আরো জানান পুলিশ সুপারের কারণে তিনি এখন ন্যায়বিচার পেতে যাচ্ছেন ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status