দেশ বিদেশ

গাজীপুরে স্ত্রীর পরকীয়ার বলি মেয়ে

ইকবাল আহমদ সরকার, গাজীপুর থেকে

১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:০৫ পূর্বাহ্ন

গাজীপুরের শ্রীপুরে পর পুরুষের সঙ্গে স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্ক থাকার সন্দেহ নিয়ে পারিবারিক কলহের জেরে বলি হয়েছে শিশুকন্যা। পাষণ্ড পিতা হত্যা করেছে তার একমাত্র শিশু সন্তানকে। শিশুকে হত্যার পর নিজেও আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত তা করতে পারেন নি। ধরা পড়েছেন পুলিশের হাতে, আর ঠাঁই হয়েছে কারাগারে। কারাগারে যাওয়ার আগে গতকাল সোমবার বিকালে গাজীপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামীমা খাতুনের আদালতে হত্যার ঘটনার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ঘাতক রফিকুল ইসলাম।
শ্রীপুর থানার ওসি জাবেদুল ইসলাম জানান, শ্রীপুর পৌরসভার  কেওয়া এলাকার ইয়াসিন আলীর ভাড়াটিয়া রফিকুল ইসলামের বাসার খাটের নিচে এলুমিনিয়ামের বড় হাঁড়ির ভেতর থেকে রোববার দিবাগত রাতে শিশু মনিরা খাতুনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত মনিরা খাতুন (৬) জেলার কাপাসিয়া উপজেলার হাইলজোড় গ্রামের রফিকুল ইসলামের মেয়ে। সে স্থানীয় মোহাম্মদ আলী কিন্ডারগার্টেনের প্লে শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। মনিরার বাবা রফিকুল ইসলাম ও মা নাসরিন আক্তার কেওয়া এলাকার ইয়াসিন মিয়ার বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করে স্থানীয় ডেনিম্যাক পোশাক কারখানার ওয়াশিং সেকশনে চাকরি করতো। তিনি আরো জানান, অন্যান্য দিনের মতো ওই দিন শিশুটির মা নাসরিন আক্তার দুপুরের খাবার বিরতির পর আবারো ডিউটি করতে যায় কারখানায়।
সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে মেয়েকে ঘরে এবং আশেপাশে খুঁজে না পেয়ে এবং স্বামীর সন্ধান না পেয়ে মোবাইলফোনে মনিরার নিখোঁজ থাকার বিষয়টি জানান শ্রীপুর থানায়। পরে পুলিশ তাদের বাসায় গিয়ে তাদের ঘরের ভেতর খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে খাটের নিচে এলুমিনিয়ামের বড় হাঁড়ির ভেতর মনিরার মরদেহ পান। নিহতের গলায় শ্বাসরোধে হত্যার আলামতও পাওয়া গেছে। মরদেহ উদ্ধার করে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নির্ণয়ের স্বার্থে ময়নাতদন্ত করাতে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠান। হত্যার ঘটনায় শিশুর মা নাসরিন আক্তার বাদী হয়ে তার স্বামীর নামে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। ঘটনার পর রাতেই ওই এলাকা থেকে শিশুটির ঘাতক বাবা রফিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে শ্রীপুর থানা পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মাহমুদুল হাসান প্রাথমিক তদন্ত ও রফিকুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ধারণা করেন, নাসরিনের পরকীয়া সম্পর্ক ও দাম্পত্য কলহের জেরে শিশুটিকে হত্যা করা হতে পারে। এ ছাড়া বিকালে গাজীপুরের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শামীমা খাতুনের আদালতে হত্যার ঘটনার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে ঘাতক রফিকুল ইসলাম। তিনি আরো জানান, রফিকুলের সঙ্গে একই এলাকার নাসরিনের বিয়ে হয় প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে। রফিকুলের সঙ্গে বিয়ের আগে ও পরে নাসরিনের আরো তিনটি বিয়ে হয়। প্রায় দুই বছর আগে তারা আলাদা হয়ে যান। গত ছয়মাস ধরে আবার তারা একত্রে বসবাস শুরু করেন। বিয়ে বিচ্ছেদ হওয়া পুরনো স্বামীদের কারো সঙ্গে বা অন্য কোনো পুরুষের সঙ্গে নাসরিনের পরকীয়ার সম্পর্ক ছিল- এমন বিষয় টের পেয়ে রফিকুল তার স্ত্রীর সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া করতো। এ ছাড়া টাকা-পয়সা নিয়েও এই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াঝাটি হতো। তাদের মধ্যে কলহ ছিল দীর্ঘদিন ধরে। গত শুক্র ও শনিবার তাদের মধ্যে ঝগড়াঝাটির পর মারামারিও হয়েছে। এসব অশান্তি থেকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে রফিকুল তার নিজের শিশু সন্তানকে হত্যা করে নিজেও আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেয়। সন্তানকে হত্যা করে বড় হাঁড়ির ভেতর ভরে ঠিকই কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিজে আত্মহত্যার করতে পারেনি সে। পুলিশের হাতে ধরা পড়ে এখন ঠাঁই হয়েছে কারাগারে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status