এক্সক্লুসিভ

টিআর, কাবিটা বিশেষ বরাদ্দ বাতিল হচ্ছে

দীন ইসলাম

১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ন

গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের কর্মসূচি টেস্ট রিলিফ (টিআর) এবং কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) কর্মসূচির বিশেষ বরাদ্দ বাতিল করতে যাচ্ছে সরকার। এখন থেকে এসব কর্মসূচির অর্থ দিয়ে গৃহহীন পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। যার নাম দেয়া হয়েছে ‘দুর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ’। সহসাই এর কার্যক্রম শুরু হবে। মূলত টিআর ও কাবিটা বরাদ্দ নিয়ে নানা সময়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় এসব বিশেষ বরাদ্দ বাতিলের চিন্তাভাবনা করা হয়। আজ সকাল দশটায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ কামাল মানবজমিনকে বলেন, দুর্নীতি বন্ধ করতে যে কোনো কঠিন পদক্ষেপ নিতে আমরা বদ্ধপরিকর। যেসব কর্মসূচি নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে সেগুলো বাতিলের চিন্তাভাবনা করছি। দুর্নীতি প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্পষ্ট নির্দেশনার প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রতি বছর টিআর খাতে ২০০ কোটি টাকা এবং কাবিটা খাতে একশ’ কোটি টাকা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে বরাদ্দ দেয় অর্থ বিভাগ। তাই এমপিদের বরাবরে টিআর ও কাবিটা বরাদ্দের আদেশ বাতিল হলে ৬৪ জেলায় ৬৪ হাজার ঘর নির্মাণ করে দেবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে এ বছরের জুনের মধ্যে প্রতি জেলায় পাঁচশ’টি অর্থাৎ ৬৪ জেলায় ৩২ হাজার ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। এরপর ডিসেম্বরের মধ্যে ৬৪ জেলায় আরো ৩২ হাজার সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। সব মিলিয়ে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ৬৪ জেলায় ৬৪ হাজার ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে। তিন থেকে চারশ’ বর্গফুটের সেমিপাকা প্রতিটি ঘরে দুইটি রুম, একটি বাথরুম ও একটি রান্না ঘর থাকবে। যাদের জমি আছে কিন্তু ঘর নেই তাদের বিষয়টি প্রথমেই চিন্তা করবে মন্ত্রণালয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, স্থানীয় পর্যায়ে গৃহহীন ঠিক করবেন জনপ্রতিনিধিরা। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা সদস্যরা গৃহহীনদের তালিকা পৌঁছে দেবেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের কাছে। এরপর ওই তালিকা
অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন ইউএনওরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণের কর্মসূচি হচ্ছে টিআর। বিভিন্ন সময় গ্রামে কাজের সুযোগ কমে যায়। এ সময় গ্রামের বেকার হয়ে পড়া মানুষের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেয়ার জন্য টিআর কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হয়। রাস্তা সংস্কার, বাঁশের সাঁকো তৈরি, নালা-নর্দমা খনন ও সংস্কার, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন করা হয় এ কর্মসূচির মাধ্যমে। তবে এসব কাজ ঠিকভাবে না হওয়ার অভিযোগ অনেক পুরনো। এর আগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গেল বছরের মার্চে প্রাক-বাজেট আলোচনায় টিআর, কাবিটা বন্ধের প্রস্তাব করেন। ওই সময় বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতিসহ অনেকেই তার এ প্রস্তাব সমর্থন করেন। ওই বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেন, টিআর ও কাবিটা কর্মসূচিতে সবচেয়ে বেশি চুরি হয়। তাই এখনই টিআর ও কাবিটা বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও টিআর, কাবিটা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের বলেন, টিআর এবং কাবিটা কর্মসূচিতে কোটি কোটি টাকা চুরি হচ্ছে। বরাদ্দের কিছুই সাধারণ মানুষের হাতে পৌঁছে না। এমপি, আমলা ও ইউপি চেয়ারম্যানরা এ খাতে চুরির চক্র তৈরি করেছেন। এটাকে দূর করতে হবে। মন্ত্রীদের নানা কথাবার্তার পরও টিআর, কাবিটা কর্মসূচি বন্ধ হয়নি। দেরিতে হলেও টিআর, কাবিটা বিশেষ বরাদ্দ বাতিলের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status