এক্সক্লুসিভ
কুয়েতে পাচার
সিন্ডিকেটে হয়রানিতে শতাধিক বাংলাদেশি
দীন ইসলাম
১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার, ৯:২৮ পূর্বাহ্ন
কুয়েতে পাচারকারী চক্রের কারসাজিতে হয়রানিতে পড়েছেন শতাধিক বাংলাদেশি। এসব বাংলাদেশির মধ্যে অনেকেই কুয়েত ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদের মধ্যে অনেকেই কুয়েত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এখন মামলা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সিন্ডিকেটের নানা কাজে বাধা সৃষ্টির কারণেই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা। তাদের মধ্যে গণমাধ্যম কর্মীও আছেন। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ১৬ই জানুয়ারি কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। দেশটির লেসকো কোম্পানিতে কর্মরত বাংলাদেশিরা বেতন না পেয়ে দূতাবাস ঘেরাও করে। এরপর কিছু উচ্ছৃঙ্খল বাংলাদেশি নিজেদের দূতাবাস ভাঙচুর করে। বিষয়টি দূতাবাসের ভিডিও ফুটেজে সংরক্ষিত রয়েছে। ঘটনার পর পরই কুয়েত পুলিশ তিন শতাধিক বাংলাদেশিকে আটক করে। ঘটনা এখানেই শেষ হয়। আটক বাংলাদেশিদের বাইরেও দূতাবাসের পক্ষ থেকেও একটি তালিকা পাঠানোর অভিযোগ উঠে। ওই তালিকা অনুযায়ী কর্মস্থলে গিয়ে আটক করে কুয়েত পুলিশ। ফলে কর্মস্থলে হেনস্থার শিকার হয়েছেন অনেক বাংলাদেশি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভিসা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সঙ্গে দূতাবাসের কিছু অসাধু কর্মচারীর যোগসাজশ রয়েছে। কারণ কোম্পানি বেতন না পেলে বা আকামা নেই বলে দূতাবাসে অভিযোগ দিলে তারা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেন না। বরং এ বিষয়ে কুয়েতের কোম্পানির পক্ষ নেয় বাংলাদেশ দূতাবাস। অভিযোগকারী সম্পর্কে তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে নানা ছুুতোয় আবেদনকারীকে দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। দূতাবাস ভাঙচুরের পরও এমন ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ দূতাবাসের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ভুল বুঝিয়ে নিরীহ বাংলাদেশিদের হয়রানি করা হচ্ছে। যমুনা টিভির কুয়েত প্রতিনিধি শেখ এহছানুল হক খোকনসহ আরো কয়েক সংবাদ কর্মীর বিরুদ্ধে কুয়েত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ জানায় বাংলাদেশ দূতাবাস। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, কুয়েতে বর্তমানে তিন লাখের ওপর প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মরত রয়েছেন। গত দুই থেকে তিন বছরে প্রায় এক লাখ বাংলাদেশি ভিসা নিয়ে কুয়েত ঢুকেছে। এদের বেশির ভাগই কোম্পানি ভিসায় কুয়েত গিয়েছে। বাংলাদেশে এক একটি ভিসা ৬-৭ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাই বাংলাদেশে চাহিদার কথা বিবেচনা করে কুয়েতের নতুন কোম্পানিগুলো ভিসা বিক্রির জন্য মরিয়া হয়ে উঠে। এদের মধ্যে অনেকেই অবৈধ উপায়ে ভিসা বের করে সেই ভিসা বাংলাদেশিদের কাছে বিক্রি করছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, কুয়েতের ভিসা কারবারের জন্য একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি হয়েছে। ওই চক্রের সদস্যরাই অবৈধ ভিসা কেনাবেচায় জড়িয়ে গেছে। এজন্য কুয়েতে অবস্থানরত সাধারণ বাংলাদেশিদের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ব্যবহার করছে। কুয়েত দূতাবাসের সাবেক এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে বলেন, কুয়েতে পাঁচ বছর আগেও নিজের খাবার যোগাতে হিমশিম খেত কিছু প্রবাসী বাংলাদেশি। অ্যাম্বাসিতে তারা পাসপোর্ট করার দালালি নিয়ে ঘুর ঘুর করতো। এখন নাকি তারা দামি ব্র্যান্ডের গাড়ি হাঁকিয়ে চলেন। বসবাস করেন লাক্সারিয়াস অ্যাপার্টমেন্টে। তিনি বলেন, অসাধু ভিসা ব্যবসায়ীদের অপকর্মের কারণে অনেক প্রবাসী মানবেতর জীবনযাপন করছেন।