বিনোদন

‘আমি চাই ভালো গানগুলো ভাইরাল হোক’

স্টাফ রিপোর্টার

২৭ জানুয়ারি ২০১৯, রবিবার, ৮:১৮ পূর্বাহ্ন

গুণী সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমন। নিজের দীর্ঘ ও সফল ক্যারিয়ারে অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান উপহার দিয়েছেন তিনি। বিশেষ করে চলচ্চিত্রের গানে তার অবদান অনস্বীকার্য। ধারাবাহিকভাবে ইমন প্রায় ৪০০ চলচ্চিত্রে গানের কাজ করেছেন। এরমধ্যে ৩০০টির সব গানের কাজই করেছেন তিনি। চলচ্চিত্রে তার তৈরিকৃত গানের সংখ্যা ২০০০ এর ওপরে। এরমধ্যে জনপ্রিয় গানের তালিকাটাও বেশ দীর্ঘ। সর্বশেষ তার সুর ও সংগীতে ‘দিল দিল দিল’ গানটি ব্যাপক শ্রোতাপ্রিয়তা পায়। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন ইমরান ও কনা। এদিকে দীর্ঘ সময় পার করে এলেও এখনো ইমন প্রতিদিনই নতুন উদ্যমে কাজ করে যাচ্ছেন। নিজের স্টুডিওতে বসে চলচ্চিত্র ও অডিওর জন্য গান তৈরি করছেন। সব মিলিয়ে কেমন আছেন? দিনকাল কেমন কাটছে? উত্তরে শওকত আলী ইমন বলেন, এমনিতে ভালো আছি। তবে বুলবুল ভাই চলে যাওয়ার পর থেকে একটা শূন্যতা অনুভব করছি। তার সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। আমি প্রায় পাঁচবছর তার সহকারী হিসেবে কাজ করেছি। আমি আজকে যা তার ৮০ ভাগই বুলবুল ভাইয়ের কারণে। কিন্তু্তু এত দীর্ঘ সময় তার সঙ্গে আমার সখ্য, কখনো তাকে উচ্চস্বরে কথা বলতে দেখিনি। বুলবুল ভাই চলে গেলেন। এদিকে আবার আলাউদ্দিন ভাইও গুরুতর অসুস্থ। এর আগে আইয়ুব বাচ্চু, শাম্মী আক্তার, বারী সিদ্দিকীর মতো গুণীজনরা চলে গেছেন। আসলে একে একে বটবৃক্ষরা বিদায় নিচ্ছেন। মনে হচ্ছে ছায়া মাথার ওপর থেকে সরে যাচ্ছে। এখন হয়তো আট দশজন মুরব্বি আছেন। মুরব্বিরা যদি এভাবে একে একে চলে যান হুমকির মুখে পড়বো আমরা। এবার একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। আপনার গানের ব্যস্ততা কেমন? ইমন বলেন, ব্যস্ততা তো সব সময় থাকে। তবে এখন চলচ্চিত্রের কাজ অনেক কমে গেছে। এটা শুধু আমার নয়, সবারই। চলচ্চিত্রের অবস্থাইতো এখন শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। তারপরও আমি কিছু ছবির কাজ করছি। পাশাপাশি অন্য শিল্পীদের সিঙ্গেলস করছি।  চলচ্চিত্রের গানের এমন অবস্থার কারণ কী মনে করেন? ইমন বেশ আত্মবিশ্বাসের সুরে বলেন, আসলে নীতিমালা মেনে চলা হচ্ছে না। তারপর আবার দেশের ছবি কমে গেছে। একটা গ্রুপের আন্ডারে অনেক হল ও ছবি চলে গেছে। আমরা অনেকটাই ভারত নির্ভর হয়ে গেছি। সেখান থেকে ছবি এনে চালানো হচ্ছে। তারপর আবার যৌথ ছবির নীতিমালা মানা হচ্ছে না। যৌথ ছবি হলে দেখা যাচ্ছে বেশির ভাগ শিল্পীই ভারতের। গানের ক্ষেত্রে তো আরো বেশি। আমি এসব বিষয়ে আগেও মুখ খুলেছি। কিন্তু আমাদের নিজেদের মধ্যেই একাত্মতা নেই। যে কারণে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিচ্ছে। বুলবুল ভাই মারা গেলেন। তাকে শ্রদ্ধা জানাতে বিভিন্ন এসোসিয়েশন থেকে ফুল দিতে এসেছে। কিন্তু সেখানে সংগীতের কোনো সমিতি কিংবা সংগঠন ছিল না। এটা আমাদের সবার ব্যর্থতা। এই সময়ে আমাদের গান কোন পর্যায়ে আছে। কোন দিকে যাচ্ছি আমরা? ইমন বলেন, এখন আমরা গান নিয়ে অস্থির পর্যায়ে আছি। তবে সাম্প্রতিক সময়ের ভাইরাল গান নিয়ে আমি চিন্তিত নই। কারণ তৃতীয় শ্রেণির গানও ভাইরাল হতে পারে। আমি চাই প্রকৃত ভালো গানগুলো ভাইরাল হোক। আর এখনো কিন্তু ভালো গান হচ্ছে। কিন্তু দর্শক-শ্রোতাদের কাছে সেগুলো পৌঁছাচ্ছে না সেভাবে। দেশে আগে ৮৫০টি সিনেমা হল ছিল। এখন সে সংখ্যা ১০০ থেকে ১৫০টিতে নেমে এসেছে। রিমোট চাপলেই ১০০টি টিভি চ্যানেল। প্রতিযোগিতাও বেশি। তবে পার্শ্ববর্তী দেশের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। আর দেশের সংস্কৃতিকে মন থেকে ভালোবাসতে হবে। তরুণ প্রজন্মের অবস্থা কেমন দেখছেন? উত্তরে ইমন বলেন, এ প্রজন্মের অনেক শিল্পী কম্পোজার ভালো কাজ করছে। তবে সিনিয়র হিসেবে আমি বলবো, গুরুমুখী বিদ্যাটা থাকা দরকার। শেখার মানসিকতা থাকতে হবে। এখন হিট হওয়ার প্রবণতা বেশি। সেখান থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এমন অনেকে আছেন নিজেই গান লিখছেন, সুর-সংগীত করছেন, নিজেই শুনছেন, নিজেই প্রশংসা করছেন। এটা আসলে হতে পারে না। বের হতে হবে এখান থেকে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status