বাংলারজমিন

মেহেরপুরে এসআই’র বিরুদ্ধে মামলা

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি

২৪ জানুয়ারি ২০১৯, বৃহস্পতিবার, ৮:৫৩ পূর্বাহ্ন

মেহেরপুর শহরের দিঘিরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মেহেদী হাসান বাকের নামের এক আসামিকে না পেয়ে আসামির অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী’র ওপর নির্যাতন, বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোটরসাইকেল লুটের অভিযোগে লস্কর লাজুল ইসলাম ওরফে জিয়া নামের এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা জিয়া মেহেরপুর সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।  
গতকাল বুধবার দুপুরে বাকের হোসেনের স্ত্রী মারিয়া খাতুন বাদী হয়ে মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ২য় আদালতের বিচারক হাদিউজ্জামানের আদালতে এস আই জিয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
অপরদিকে, মেহেরপুরের পুলিশ সুপার এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত কমিটিকে ৩ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওসি ওবায়দুর রহমান, ডিআইও ওয়ান ফারুক হোসেন। মামলার বিবরণে বাকেরের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী মারিয়া খাতুন বলেন, গত মঙ্গলবার দুপুরে বাদী বাড়িতে একা ছিলেন এবং দুপুরের রান্না করছিলাম। এমন সময় এসআই জিয়া আরো দুইজন পুলিশ কনস্টেবল নিয়ে বাড়ির দরজায় ডাকাডাকি শুরু করেন। বাড়িতে কেউ নাই বলাতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে টিনের দরজায় লাথি মারলে দরজা খুলে যায়। তখন তিনি  ভেতরে প্রবেশ করেন। এসময় গালিগালাজ করতে করতে ঘরের মধ্যে ঢুকে ঘরের আসবাবপত্র তছনছ করা শুরু করেন। চেয়ার- টেবিলসহ বিভিন্ন জিনিস ভাঙচুর করে এবং আলমারিতে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করেন। পরে রান্নাঘরে মোটরসাইকেল দেখে চাবি চান। চাবি দিতে না চাইলে তখন তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় এবং বিভিন্ন হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে চাবি দিলে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের এ্যাপাচি আরটিআর ব্র্যান্ডের  মোটরসাইকেলটি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান এবং বলেন টাকা নিয়ে গিয়ে মোটরসাইকেল ফেরত নিয়ে আসতে। এজাহারে আরো উল্লেখ রয়েছে, ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে থাকা নগদ ৮৫ হাজার টাকা, ৯১ হাজার টাকা মূল্যের স্বর্ণালংকার  লুট করে নিয়ে গেছেন।
মেহেদী হাসান বাকের বলেন, সোহেল নামের এক অটোচালকের সঙ্গে পূর্বের একটি বিরোধ থেকে সে থানায় আমার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করে। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসআই জিয়া আটক করতে আসেন। তিনি অভিযোগ করে জানান, অপরাধ করলে আমি করেছি। আমার স্ত্রী কোনো অপরাধ করেনি। আমার বাড়িঘর কোনো অপরাধ করেনি। আমার বাবাও একজন পুলিশ কর্মচারী। পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে এ ধরনের ব্যবহার তিনি করতে পারেন না। আমরা এ ঘটনার বিচার চাই। প্রতিবেশী আনজিরা খাতুন জানান, তিনজন পুলিশের  লোক এসে বাড়ির ভেতরে সবকিছু ভেঙেচুরে মোটরসাইকেলটি নিয়ে চলে গেল। যাওয়ার সময় আজেবাজে গালিগালাজ করেছে। বাকেরের পোয়াতি (অন্তঃসত্ত্বা) বউকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।
বাকেরের নানী সফুরা খাতুন জানান, বার বার করে মোটরসাইকেলটি না নিয়ে যাওয়ার জন্য হাতজোড় করলাম, তবুও শুনলো না ওই পুলিশটা। মোটরসাইকেল নিয়ে গেল আবার টাকা নিয়ে গিয়ে ছাড়িয়ে আনতেও বললো। এদিকে অভিযুক্ত এসআই লস্কর লাজুল ইসলাম জিয়া বলেন, তার বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তবে স্বীকার করে তিনি বলেন, বাড়িতে একটি অনটেস্ট (লাইসেন্সবিহীন) মোটরসাইকেল ছিল সেটি নিয়ে এসেছি। মোটরসাইকেল কোন অপরাধে নিয়ে আসলেন এমন প্রশ্নে তিনি কোনো জবাব দেননি।
মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও পুলিশ প্রশাসনের তদন্ত কমিটির প্রধান শেখ জাহিদুল ইসলাম জানান, তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রসঙ্গত, মেহেদী হাসান বাকেরের পিতা সামসুল ইসলাম একজন পুলিশ কর্মচারী। তিনি রংপুরে কর্মরত রয়েছেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status