এক্সক্লুসিভ

কোটি টাকার রাজস্ব আদায়, অবকাঠামো উন্নয়ন শূন্য

প্রতীক ওমর, বগুড়া/নাজির হোসেন, নন্দীগ্রাম থেকে

২৩ জানুয়ারি ২০১৯, বুধবার, ৯:০৬ পূর্বাহ্ন

রণবাঘা বাজার। বগুড়ার নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ড থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে। বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের দুই পাশেই খোলা আকাশের নিচে ধানের বাজার। ছোট্ট এই বাজার থেকে বছরে সরকারের রাজস্ব আদায় হয় কোটি টাকা। বৃটিশ আমলে জমিদাররা এই হাটটি চালু করলেও আজ পর্যন্ত এই হাটের অবকাঠমো উন্নয়নে নজর দেয়নি কেউ। নজর নেই স্থানীয় প্রশাসনেরও। যতটুকু সরকারি জায়গা আছে তার পুরোটাই অবৈধ দখলদারদের হাতে। ওই সব দখলদারদের উচ্ছেদও করা হয় না। এতে এই বাজারের মূল ব্যবসায়ীরা সুবিধা বঞ্চিত হচ্ছে। পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় মহাসড়কের উপরেই হাজার খানেক ধান শ্রমিক ট্রাক লোড আন লোড করছে প্রতিদিন। এতে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে অনেকেই। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা প্রশাসনকে অনেক বার জানালেও হাটের পরিধি বারানোর জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হয় নি। এখানকার ব্যবসায়ীরা      অভিযোগ তুলেছেন, প্রতি বছর এই হাট থেকে কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হলেও অবকাঠামো উন্নয়ন শূন্য।   

রণবাঘা হাটে গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের দুই ধারেই গড়ে উঠেছে ধানের আড়ত। রাস্তার উপরেই প্রতিদিনি হাজার হাজার টন ধান বস্তাজাত হচ্ছে। এসব ধান দেশের বিভিন্ন জয়গায় চলে যাচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে তাদের। বগুড়া-নাটোর মহাসড়কের উপর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে দশ হাজারের বেশি বাস-ট্রাক যাতায়াত করে। এর মধ্যে দূরপাল্লার বাসের সংখ্যাও কম নায়। হাটের মূল জায়গা দখলদারদের দখলে থাকায় নিরুপায় হয়ে ব্যবসায়ীরা রাস্তার দুই ধারকেই বেছে নিয়েছেন কারবার করার জন্য। তাছাড়া হাটের আয়তনও অনেক কম।

আগে শুধু শুক্রবারে এখানে হাট বসতো। ১৯৮৬ সালে স্থানীয় সমাজ সেবক নাজির হোসেনের উদ্যোগে শুক্রবারের পাশাপাশি সোমবারেও হাটের আয়োজন করেন। আস্তে আস্তে বেশ সাড়া পড়ে। দিন দিন ব্যবসায়ীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। এলাকায় বেকার যুবকরা বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ পায়। সময়ের ব্যবধানে রণবাঘা হাট এখন শুধু বগুড়া জেলা নয়, আশেপাশের জেলা থেকেও অনেক ব্যবসায়ী এখানে বেচাকেনা করার জন্য আসে।

হাটের টোল আদায়কারী হাবিবুর রহমান জানান, এখানে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি প্রতি হাটে নওগাঁ, দিনাজপুর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধার অনেক ব্যবসায়ী ধান কিনতে আসেন। উত্তরাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য হাটগুলোর অন্যতম একটি হাট হচ্ছে রণবাঘা। এখানে শুধু ধান ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ৩০০ ব্যক্তি। হাটের বিভিন্ন দায়িত্বে আছে ২৫-৩০ জন। এছাড়াও ধান শ্রমিক আছে আরো হাজার খানেক। এই হাট থেকেই তাদের পরিবার চলে।

রণবাঘা হাটের ইজারাদার ও শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি বেলাল হোসেন জানান, এই বাজারে প্রতিদিন প্রায় দুই কোটি টাকার ধান বেচাকেনা হয়। এখানে অবকাঠামোগত কোনো কোনো উন্নয়ন কখনোই হয়নি। হাজারো সমস্যার মধ্য দিয়ে ব্যবসায়ী এবং ক্রেতা-বিক্রেতারা লেনদেন করে আসছে। তিনি জানান, এখানে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হলেও প্রশাসনিক নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেই। এখানে একটি মাত্র সোনালী ব্যাংক আছে। সেই শাখায় পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় লেনদেন করতে পারে না ব্যাংকটি। এমন অভিযোগও করেছেন ব্যবসায়ীরা।

অপর ইজারাদার সাইবুর রহমান জানান, এই বাজার থেকে প্রতি বছর কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হয়। তারপর এখানে উন্নয়নের জন্য সেই টাকার একটাকাও খরচ করা হয় না। তিনি জানান, এই হাটের জায়গা সংকট। পানির ব্যবস্থা নেই। নেই একটি পাবলিক টয়লেটও। প্রতিদিন হাটে কোটি কোটি  টাকার ধান বেচাকেনা হলেও এ বাজারের উন্নয়ন হয়নি। একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। নেই পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশনের ব্যবস্থা।

ধানের পাশাপাশি জ্যৈষ্ঠ আষাঢ় এবং শ্রাবণ মাস জুড়ে এখানে পশুরহাট বসে। এই হাটও মহাসড়কের দুই ধারেই বসে থাকে। উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় গরুরহাট হিসেবেও রণবাঘা বেশ পরিচিত। পরিচিত মাছেরহাট হিসেবেও। ব্যবাসয়িক ভাবে সফল এই হাটটির আয়তন মাত্র সাত বিঘা। সেই সাত বিঘাও অবৈধ দখলে চলে গেছে।  
নন্দীগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম মণ্ডল জানান, যেহেতু ওই হাটের রাজস্ব আদায় বেড়েছে তাই হাটের উন্নয়নের পরিকল্পনা ইতিমধ্যেই নেয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, তিনি এমন পরিকল্পনার কথা পাঁচ বছর আগে থেকে বলে আসলেও বাস্তবে কোনো কাজ হচ্ছে না। হাটের রাজস্ব ঠিকই তোলা হচ্ছে। কিন্তু হাটের অস্তিত্ব নিয়ে কারো কোন মাথা ব্যথা নেই।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status