দেশ বিদেশ

জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা বন্ধ, মানুষের ভোগান্তি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

২২ জানুয়ারি ২০১৯, মঙ্গলবার, ১০:০১ পূর্বাহ্ন

কোনো ঘোষণা ছাড়াই ১২ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) তথ্য সংরক্ষণকারী সার্ভার। সার্ভার বিকল থাকায় জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নিবন্ধন সংক্রান্ত সব সেবা বন্ধ আছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার মানুষ এই সেবা নিয়ে থাকেন। সে হিসাবে গত ১২ দিনে ৬০ হাজার লোক সেবা নিতে পারেননি। অবশ্য এই ঘটনার পর থেকে প্রতিদিনই বলা হচ্ছে, দু-একদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ঠিক হয়নি। নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলছেন, সার্ভার ডাউন, এটা হতেই পারে। আবার আপ হয়ে যাবে। ইসি থেকে বলা হয়েছে, আগামীকাল ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আগারগাঁওয়ের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) এনআইডি শাখায় গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে এনআইডি সেবা নিতে আসা নাগরিকরা সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কবে সার্ভার চালু হবে তা তাদের জানানো হচ্ছে না। ভুক্তভোগীরা জানান, সার্ভার বন্ধ থাকবে বা এনআইডি সংক্রান্ত সেবা দেয়ার কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে, এমন একটি বিজ্ঞপ্তি দেয়া জরুরি ছিল। কিন্তু ইসি বা তাদের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগ থেকে এ জাতীয় কোনো বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। যে কারণে ১০ই জানুয়ারি থেকে প্রতিদিনই ঢাকাসহ সারা দেশের হাজার হাজার মানুষকে ফিরে যেতে হয়েছে। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংক্রান্ত হেল্‌প লাইনের নম্বর ১০৫। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এই নম্বরে ফোন করে যথাযথ সাড়া পাওয়া যায় না। গাজীপুর থেকে এসেছেন মানিক সরকার। তিনি এনআইডি হারিয়ে ফেলেছেন। এনআইডি জরুরিভাবে দরকার। তিনি বলেন, থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি ও ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েছি। নতুন কার্ড তোলার জন্য দু’বার এলাম। বন্ধ আছে বিজ্ঞপ্তি টাঙানো থাকলে হয়রানির শিকার হওয়া লাগতো না। ঢাকার বাড্ডা থেকে আসা পারুল বেগম জানান, তার বাবা মারা গেছেন। তিনি সরকারি চাকরি করতেন। এখন সরকারের কাছ থেকে প্রাপ্য সুবিধা পেতে হলে তথ্য হালনাগাদ করা দরকার। কিন্তু তা করা যাচ্ছে না।  
ইসি সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, সার্ভারটি ২০০৯ সালে ওরাকলের কাছ থেকে কেনা হয়। তাই সার্ভারটি রক্ষণাবেক্ষণ সংক্রান্ত সেবা দিয়ে থাকে ওরাকল। এই সার্ভারের মাধ্যমেই ইসি প্রতিদিন সারা দেশের কমবেশি ৫ হাজার লোককে সেবা দিয়ে থাকে। ১০ বছরের পুরনো এই সার্ভারটি এখন আর আগের মতো কাজ করছে না। তা ছাড়া ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটারের তথ্য সংরক্ষণের পর এই সার্ভারে এখন আর যথেষ্ট পরিমাণে জায়গাও নেই। যন্ত্রটি ১০ই জানুয়ারি বিকল হয়ে পড়ে। এরপর যতবার তথ্য আপলোড করার জন্য দেয়া হয়েছে ততবারই অর্ধেক কাজ করার পর তা ভণ্ডুল হয়ে গেছে। যে কারণে নতুন ভোটার হওয়া, ভোটার তথ্য সংশোধন এবং হারানো এনআইডি নতুন করে তোলাসহ নিবন্ধন সংক্রান্ত সব ধরনের সেবা দেয়ার কাজ বন্ধ আছে। তবে আর্থিক ও টেলিকমসহ অন্যান্য ১০৩টি প্রতিষ্ঠানকে সেবা দেয়ার কাজ এখনো অব্যাহত আছে।
নির্বাচন কমিশনার শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ২০০৯ সালে সার্ভারটি কেনা হয়েছে। ১০ বছরের পুরনো। যে কারণে এটি আগের মতো কাজ করছে না। নতুন সার্ভার বসানো জরুরি হয়ে গেছে। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের (অপারেশন্স) এক কর্মকর্তা বলেন, পার্লামেন্ট ইলেকশন গেলো, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, নতুন যারা ভোটার হচ্ছেন তাদের কাজ করা, তারপর মাইগ্রেশন হচ্ছে সেগুলোর কাজ করা। সবগুলোই এই সার্ভারের মাধ্যমে হচ্ছে। তিনি বলেন, সার্ভারে আমাদের কয়েকটি সার্ভিস প্রয়োজন হয়। ওরাকল থেকে যে সার্ভিসটি আমরা নিচ্ছি এ সার্ভিসটিতে কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। আমাদের একটি রিকভারি সার্ভারও আছে। ওরাকলে সমস্যা দেখা দিলে ওই সার্ভারেও কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। ওরাকলে সমস্যা দেখা দিলে নির্বাচন কমিশনের যে টেকনিক্যাল টিম আছে তারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর প্রায় ১০৩টি কোম্পানি এরমধ্যে ডেলকো কোম্পানি আছে, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও আছে, এসব সেবা চালু রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি। জনসাধারণের হয়রানি বন্ধে এ বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, কখন ঠিক হবে তা নিশ্চিত বোঝা যাচ্ছিল না। তাই কোনো বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়নি। তিনি জানান, সার্ভারে জায়গা বাড়ানোর জন্য বিদ্যমান সার্ভারকে হালনাগাদ এবং নতুন আরও একটি সার্ভার কিনতে হবে। এজন্য সরকারের কাছে শিগগিরই প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রকল্প নিয়েই মূলত জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহের কার্যক্রম শুরু করে নির্বাচন কমিশন। যার ভিত্তিতেই বর্তমানে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ডও সরবরাহ করছে নির্বাচন কমিশন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status