শেষের পাতা

ভোলাগঞ্জে বোমার তাণ্ডব, ৫০ কোটি টাকার পাথর লুট

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

২১ জানুয়ারি ২০১৯, সোমবার, ১০:১৬ পূর্বাহ্ন

প্রতীকী ছবি

পাথরখেকোদের থাবায় ছিন্ন-ভিন্ন এখন ভোলাগঞ্জের এলসি ডাম্পিং স্টেশন। প্রতিদিন এখান থেকে কোটি টাকার পাথর লুটপাট করা হচ্ছে। গত দুই মাসে অন্তত অর্ধশত কোটি টাকার পাথর উত্তোলন করা হয়েছে। পাথর লুটপাটের ফলে ডাম্পিং স্টেশন পড়েছে হুমকির মুখে। ভারত থেকে আমদানি  করা চুনাপাথর রাখার জায়গা বিলীন হয়ে যাওয়ায় আমদানি ও রপ্তানিকারকরা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। পাশাপাশি নয়াবাজার এলাকার ব্যবসায়ীরাও আতঙ্কে রয়েছেন। ২-৩ বার করে দোকান বদল করেও এখন হাট-বাজার টিকিয়ে রাখা দায় হয়ে পড়েছে।

সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকায় রয়েছে ভোলাগঞ্জ এলসি স্টেশন। পাশেই ডাম্পিং স্টেশন। ভারত থেকে চুনাপাথর এনে ব্যবসায়ীরা ওই এলাকায় চুনাপাথর ডাম্পিং করে রাখেন। পরে ওখান থেকে তারা চুনাপাথর বিক্রি করেন। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে সরকার প্রতি বছর প্রায় শত-কোটি টাকা রাজস্ব পায়। পাশেই হচ্ছে গুচ্ছগ্রাম (আদর্শ গ্রাম)। এরশাদের জমানায় এখানে কাজের সন্ধানে আসা মানুষদের পুনর্বাসন করে ওই গ্রাম তৈরি করা হয়। এই গ্রামে এখন হাজারো পরিবার। কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকার পর থেকে আদর্শ গ্রামের ওই ডাম্পিং স্টেশনে নজর পড়ে পাথরখেকোদের। এরপর থেকেই ওই এলাকায় শুরু হয় পাথর লুটপাট।

প্রায় তিন মাস কোম্পানীগঞ্জের তখনকার ইউএনও আবুল লাইছের নজরে পড়েছিল ওই এলাকাটি। ওই সময় ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানি কারক গ্রুপের কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেন। গ্রুপের কর্মকর্তারা জানান, অবাধে পাথর উত্তোলনের ফলে তাদের ডাম্পিং স্টেশনের পরিসর ছোট হয়ে আসছে। এতে করে ওই এলাকায় ডাম্পিং করা যাচ্ছে না। তারা জানিয়েছেন, তখনকার ইউএনও অভিযান জোরদার করায় ওই স্থানে পাথর উত্তোলন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গত দুই মাস ধরে আবার পাথর উত্তোলন শুরু হওয়ায় ডাম্পিং স্টেশন হুমকির মুখে পড়েছে।

ভোলাগঞ্জ চুনাপাথর আমদানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান মিন্টু জানিয়েছেন, এভাবে পাথর উত্তোলন অব্যাহত থাকলে ধীরে ধীরে ডাম্পিং এলাকা বিলীন হয়ে যাবে। তিনি এজন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আগের ইউএনও আবুল লাইছ অভিযানকালে তিনটি মামলা করেছিলেন। বেশ কয়েকজন আসামিকে আটক করা হয়েছিল। আসামিরা গ্রেপ্তার হওয়ার কারণে পাথর উত্তোলন বন্ধ ছিল। এখন তারা জামিনে বেরিয়ে আবার পাথর উত্তোলন শুরু করেছে।

ভোলাগঞ্জ নয়াবাজারে রয়েছে ৩০০-৪০০ দোকানঘর। ওই বাজারের দোকানিরা বারবার স্থান বদল করলেও বাজার রক্ষা হচ্ছে না। দিনে দিনে এখানে দোকানপাট বিলীন হয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় ভুসিমালের দোকানি আব্দুল লতিফ জানিয়েছেন, তিনি তিনবার স্থান পরিবর্তন করেছেন। আগের তিনটি স্থান ইতিমধ্যে পুকুরে পরিণত হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি সময়ে পাথর উত্তোলনের ফলে নতুন করে তারা উচ্ছেদ আতঙ্কে পড়েছেন। এখন বাজারের একেবারে পাশ ঘেঁষে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে তারা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছেন।

আর্দশ গ্রামের ওই স্থানে শুধু ডাম্পিং স্টেশন নয়, বিজিবির একটি স্থায়ী ক্যাম্প করারও প্রস্তাবনা রয়েছে। কিন্তু পাথরখেকোদের কারণে সেই ক্যাম্প স্থাপনের জমিও শেষ মুহূর্তে বিলীন হয়ে যাবে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে প্রতিদিন আদর্শগ্রামের ওই স্থান থেকে প্রায় কোটি টাকার পাথর লুটপাট করা হচ্ছে। এতে ব্যবহার করা হচ্ছে শতাধিক বোমা মেশিন। ওই মেশিনগুলোর শব্দে রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে এলাকাবাসীর। তারা প্রতিবাদ করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। এদিকে পাথর উত্তোলন অব্যাহত থাকলে সিলেট-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক হুমকির মুখে পড়বে। সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও বিজেন ব্যানার্জি মানবজমিনকে জানিয়েছেন, তিনি দু-একদিনের মধ্যে ভোলাগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালাবেন। আগেও ওই এলাকায় অভিযান চালিয়েছিলেন। কিন্তু রাতের আঁধারে ওখানে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে বলে শুনেছেন। তিনি বলেন, ডাম্পিং এলাকায় ব্যবসায়ীদেরও উচ্ছেদ করা হবে। এরপর ওখানে নতুন করে পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status