প্রথম পাতা

ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল

১ কোটি ২০ লাখ টাকার ওষুধ নষ্ট ব্যবস্থা নেয়ার দাবি

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

২০ জানুয়ারি ২০১৯, রবিবার, ১০:১৮ পূর্বাহ্ন

স্থগিত হওয়া ভিটামিন-এ ক্যাম্পেইন কর্মসূচির এক কোটি ২০ লাখ টাকার ওষুধ নষ্ট হয়েছে। সারা দেশে বহুল আলোচিত ভিটামিন-এ ক্যাম্পেইন চলতি মাসেই দেশীয় ওষুধ দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। শনিবার দেশব্যাপী ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী এবং ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর দিনক্ষণ নির্ধারিত ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ভারতের একটি কোম্পানি থেকে আমদানিকৃত ভিটামিন-এ ক্যাপসুলের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্মসূচিটি স্থগিত করে। ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খেয়ে শিশুদের অসুস্থ হওয়ার অভিযোগ ছিল ২০১৩ সালেও। এর পরেও বিচ্ছিন্নভাবে অভিযোগ এসেছে। রাতকানা রোগ প্রতিরোধে জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচির আওতায় দেশে এই কর্মসূচি পালন করে আসছে সরকার।

স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবার ওষুধ না খাইয়ে সরকার ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। তবে, যেহেতু আগেই মানের প্রশ্ন এসেছে তাই ঘটনার সঠিক তদন্ত করে যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারা দেশের  শিশুরদের সম্মিলিত একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এ বিষয়ে এ ধরনের হেলাফেলা অনিয়মে যারা জড়িত তাদের শাস্তি হওয়া উচিত দৃষ্টান্তমূলক।

এদিকে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম মানবজমিনকে বলেন, ভিটামিন-এ নিয়ে অভিভাবকদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সম্পূর্ণ নতুন ওষুধ দিয়ে সম্ভাব্য ২৬শে জানুয়ারি এই পর্বের ভিটামিন-এ ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হবে। ভয়ের কোনো কারণ নেই। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়ানো হবে না। দেশীয় প্রতিষ্ঠানের সরবরাহকৃত ক্যাপসুল দিয়ে এই প্রচারাভিযান চলবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এই ক্যাম্পইনে দেশীয় রেনেটা লিমিটেডের ওষুধ খাওয়ানো হবে। তিনি আরো জানান, ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের ক্যাপসুলের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। তাই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের ক্যাপসুল শিশুদের খাওয়ানো হবে না। এক প্রশ্নের জবাবে মহাপরিচালক বলেন, ১ কোটি ২০ লাখ টাকার ওষুধ নষ্ট হয়েছে। আগেও ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ার ফলে শিশুর অসুস্থ হওয়ার অভিযোগ বাংলাদেশে ছিল- এ প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, গণমাধ্যমের খবরের কারণেই সন্দেহ  তৈরি হয়।

জাতীয় পুষ্টি কর্মসূচির আওতায় প্রতিবছর দু’বার দুই রাউন্ডে ৬ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুদের নীল এবং ১২ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের লাল রঙের ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। মূলত রাতকানা রোগ প্রতিরোধের জন্য ১৯৯৪ সাল থেকে দেশের শিশুদের ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। এই পর্বে দু’কোটির উপরে শিশুকে ভিটামিন খাওয়ানো হবে।

আগেও ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ার ফলে শিশুর অসুস্থ হওয়ার অভিযোগ বাংলাদেশে ছিল- এই প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ও চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. দীন মোহাম্মদ নুরুল হক মানবজমিনকে বলেন, ভিটামিন-এ ক্যাপসুল খাওয়ার ফলে শিশু অসুস্থ হওয়ার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত হয়েছিল। প্রতিটি ক্ষেত্রে তদন্ত হয়েছে। সারা দেশে এখন ভিটামিন-এ ক্যাম্পেইন-এর প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করেন না এই চক্ষু বিশেষজ্ঞ।
বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন  (বিএমএ) সাবেক সভাপতি এবং ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব এই ব্যাপারে মানবজমিনকে বলেন, এবার ওষুধ না খাইয়ে সরকার ভালো উদ্যোগ নিয়েছে। এই ওষুধ যারা সরবরাহ করেছে দায় তাদের। তবে, যেহেতু আগেই মানের প্রশ্ন এসেছে তাই ঘটনার সঠিক তদন্ত করে যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। জনগণ ও রাষ্টের স্বার্থের কথা চিন্তা করতে হবে। আদালত গুণগতের কথা চিন্তা করেন নি, করেছেন প্রক্রিয়ার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের মার্চ মাসে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ১ লাখ ৪১ হাজার ডলারে (বাংলাদেশি ১ কোটি ২০ লাখ টাকা) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন সেন্ট্রাল মেডিসিন স্টোর (সিএমএসডি) মাধ্যমে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল কেনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিশ্ব ব্যাংকের শর্তানুসারে ভিটামিন এ ক্যাপসুল কেনার জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। শর্তানুসারে দরপত্র আহ্বান করলে ভারতের অ্যাজটেক নামে একটি প্রতিষ্ঠান সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কার্যাদেশ পায়। সেখানে আরো শর্ত ছিল ভিটামিন-এ ক্যাপসুল সরবরাহের ক্ষেত্রে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের কাছ থেকে এনওসি সংগ্রহ করতে হবে। নিয়মানুসারে তাদের এনওসি পাওয়ার কথা। এই বিষয়ে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক রুহুল আমিন মানবজমিনকে বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুসারে যে কোম্পানি পেয়েছে ওই কোম্পানিকে ওষুধ প্রশাসন এনওসি দিয়েছে।

সূত্র জানায়, ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর একটি নির্দেশনা ও পরবর্তীতে পিপিআরে ভিটামিন-এ ক্যাপসুল কেনার ক্ষেত্রে দেশীয় প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেয়ার নির্দেশনা রয়েছে। এ কারণে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ভারতের ওই প্রতিষ্ঠানকে এনওসি দিতে অস্বীকৃতি জানালে মালামাল সরবরাহ করা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। সর্বশেষ আদালত ভারতীয় প্রতিষ্ঠানকে এনওসি দিতে নির্দেশ দেয়।

শনিবার থেকে ভিটামিন-এ ক্যাপসুলের জাতীয় কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত সপ্তাহে তারা বিভিন্ন জেলা থেকে খবর পান সরবরাহকৃত ভিটামিন-এ ক্যাপসুল একটি আরেকটির গায়ে লেগে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা সরজমিন গিয়ে এ তথ্যের প্রমাণও পান। এ কারণে ভিটামিন-এ ক্যাম্পেইন স্থগিত করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের মার্চে দিকে ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল ও কৃমিনাশক বড়ি খেয়ে শিশুদের অসুস্থ হয়ে পড়ার ব্যাপক অভিযোগ ছিল দেশব্যাপী। এই নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। নিকটস্থ হাসপাতালে শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের ভিড় বাড়ে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status