প্রথম পাতা

ঐক্যফ্রন্টের জাতীয় সংলাপ ৬ই ফেব্রুয়ারি

স্টাফ রিপোর্টার

১৮ জানুয়ারি ২০১৯, শুক্রবার, ৯:৫৯ পূর্বাহ্ন

আগামী ৬ই ফেব্রুয়ারি নাগরিক সমাজ, পেশাজীবী ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব। তিনি বলেন, ৩০শে ডিসেম্বর যে নির্বাচন হয়েছে তাতে জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না। এই নির্বাচন বাতিলের দাবিতে ঐক্যফ্রন্ট আন্দোলন চালিয়ে যাবে। আন্দোলনে সব মানুষের অংশগ্রহণের অংশ হিসেবে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ, অবস্থান কর্মসূচি পালনের কথাও ভাবছে ঐক্যফ্রন্ট। এছাড়া নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলার প্রক্রিয়াও চলছে। আ স ম রব বলেন, ৩০শে ডিসেম্বর যে তাহাজ্জতের নামাজের নির্বাচন হয়েছে।

এটা জাতিকে একেবারে হতবাক করে দিয়েছে। সর্বস্তরের মানুষকে হতবাক করে দিয়েছে। আমরা মনে করি, এর বিরুদ্ধে যারা আছেন, যারা মতপ্রকাশ করবেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ খুঁজে দেবেন, বাংলাদেশের এমন সব মানুষের এই সংলাপে দাওয়াত। তিনি বলেন, ধানের শীষে ভোট দেয়ায় নোয়াখালীর সুবর্ণচরে একজন নারীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শুধু ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয়নি। ১০ কোটি ভোটারকে ধর্ষণ করা হয়েছে। সারা পৃথিবীর মানুষ আজ অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে, কী হলো বাংলাদেশে। জামায়াতকে ঐক্য থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে কি না- সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের জবাবে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, জামায়াতে ইসলামী ঐক্যফ্রন্টে আগেও ছিল না, এখনো নেই। জাতীয় সংলাপেও জামায়াত থাকছে না। জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব বলেন, এটা একটা পুরনো প্রশ্ন। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর এই প্রশ্নের সমাধান হয়ে গেছে। এখন বারবার এই প্রশ্ন তুলে ইস্যু তৈরি করা উচিত নয়। আমরা মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম।

আ স ম আবদুর রব, মোস্তফা মোহসিন মন্টু ও মাহমুদুর রহমান মান্না মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে যেতে পারে না। এক প্রশ্নের জবাবে গণফোরাম সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেসব দল অংশ নিয়েছে তাদের সবাইকে সংলাপে আমন্ত্রণ জানানো হবে। জামায়াত এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তাই তাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে না। এর আগে ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের মতিঝিল চেম্বারে বিকাল ৪টায় বৈঠক শুরু হয়, চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। তবে বৈঠকে ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শরিক দল বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত ছিল না। এ বিষয়ে আ স ম রব বলেন, বিএনপি ঐক্যফ্রন্টে ছিল, আছে এবং থাকবে। আজকের বৈঠকে তাদের একজন আসছেন, এখনো পৌঁছাতে পারেননি। রব বলেন, আমাদের প্রত্যেকের কাজ আছে। ট্রাইব্যুনালে মামলা করার জন্য কিছু কাজ রয়েছে। এই জন্য দেরি না করে আমরা চলে যাচ্ছি। এ বিষয়ে গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু বলেন, বিএনপির সঙ্গে আমাদের আলাপ-আলোচনা হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অসুস্থ। এই জন্য আসতে পারেননি।

আজকের বৈঠকে অংশ নেয়ার কথা ছিল দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ড. আবদুল মঈন খানের। কিন্তু যানজটে আটকে যাওয়ায় এখনো পৌঁছাতে পারেননি। বিএনপির সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের কোনো দূরত্ব তৈরি হয়েছে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্টু বলেন, ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির মধ্যে কোনো দূরত্ব তৈরি হয়নি। আমরা প্রথম দিন যেমন ছিলাম, এখনো আমাদের ঐক্য তেমনি আছে। মন্টু বলেন, আজকের বৈঠকের আলোচনার মূল বিষয় ছিল- জাতীয় সংলাপ। আমরা আগামী ২৮শে জানুয়ারি একটি জাতীয় সংলাপ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেটার ভেন্যু নিয়ে জটিলতার কারণে দিনটি পরিবর্তন করেছি। আজ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে ভেন্যু পাওয়া সাপেক্ষে আগামী ৬ই ফেব্রুয়ারি আমরা জাতীয় সংলাপ করব। তিনি বলেন, আমরা মনে করি- ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণ পরাজিত হয়েছে। তাদের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। সুতরাং এর বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ জনগণকে নিয়েই আমাদের করতে হবে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কোনো জটিলতা নেই, দূরত্বও তৈরি হয়নি। এ বৈঠকে বিএনপির দুজন প্রতিনিধির অংশগ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু রাস্তায় যানজটে পড়ে তাদের বিলম্ব হয়েছে বলেই তারা বৈঠকে অংশ নিতে পারেননি। আমি নিজেও যানজটের কারণে এক ঘণ্টা বিলম্বে বৈঠকে উপস্থিত হয়েছি। এখানে অন্য কিছু খোঁজা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, আমরা যে জাতীয় সংলাপটি করতে চাই, সেটার জন্য একটি স্থান বা হলের প্রয়োজন। কিন্তু পুলিশের অনুমতিও পাওয়া যাচ্ছে না, আবার হল কর্তৃপক্ষও বুকিং নিতে চাইছে না। ফলে আমরা জাতীয় সংলাপটির দিন-তারিখ পিছিয়ে দিয়েছি। তবে অনুমতি না পেলে আমরা জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রাস্তায় হলেও সংলাপটি করব। ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমরা এখন ব্যস্ত হচ্ছি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা নিয়ে। আগামী ৩০শে জানুয়ারির মধ্যে মামলা করতে হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা সকল আসন থেকে ইন্ডিভিজ্যুয়ালি মামলা করবেন।

ড. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে বৈঠকে জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতা সুলতান মোহাম্মাদ মনসুর ও নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় নেতা শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ অংশ নেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status