বাংলারজমিন

দাম নেই কৃষকের ধানের, চাল জিম্মি মজুতদারদের হাতে

প্রতীক ওমর, বগুড়া থেকে

১৬ জানুয়ারি ২০১৯, বুধবার, ১০:১০ পূর্বাহ্ন

অস্থির চালের বাজার। লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে দাম। কৃষক এবং ভোক্তারা জিম্মি হয়ে আছে হাতেগোনা কিছু অসৎ ব্যবসায়ীর হাতে। বাজার প্রশাসন অন্য যেকোনো বারের মতো এবারো নীরব ভূমিকা পালন করছে। কোথাও বাজার মনিটরিং সেলের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ চোখে পড়েনি। চালের দাম কোথায় কীভাবে বাড়ছে এসব খোঁজ নিতে উত্তরের জেলা রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন হাটবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী, এসব এলাকার ছোট-বড়  মিলার, কৃষক এবং ভোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে এসেছে নানা তথ্য। স্বর্ণা-৫ জাতের চাল বাজারে রঞ্জিত নামে পরিচিত। এই ধান কৃষকের কাছে মিলাররা কিনছে প্রতি দেড় মণ ৯৫০ টাকা থেকে ১০৫০ টাকায়। দেড় মণ ধানে চাল হচ্ছে ৩৯ কেজি থেকে ৪০ কেজি। মিলাররা এই চাল পাইকারি বিক্রি করছেন ১১০০ থেকে ১১২০ টাকায়। এতে মিলারদের তেমন কোনো লাভ না হলেও আড়তদার এবং খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করছে ১৬০০ টাকা থেকে ১৮০০ টাকায়।
কৃষক চাষাবাদ করে কোনো রকম খরচের টাকা তুলতে পারলেও লাভের মুখ কখনোই দেখছে না। অথচ রাতারাতি আড়তদার, স্টক ব্যবসায়ী এবং খুচরা বিক্রেতারা প্রতিদেড় মণ ধানের বিপরীতে একমণ চালে লাভ করছেন ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা।
মিলাররা জানিয়েছেন, পুরাতন মিনিকেট চাল তারা মিল থেকে পাইকারি বিক্রি করছেন প্রতিকেজি ৪১.৮০ টাকায়। সেই চাল শহরের বাজারে এসে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। লাল পাইজাম মিল রেট প্রতিকেজি ৪৬ টাকা হলেও খুচরা বাজারে ৬৫-৭০ টাকা, বিআর-৪৯ মিল রেট প্রতিকেজি ৩৩ টাকা। খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪২ টাকায়। বিআর-২৮ মিল রেট প্রতিকেজি ৩৮.৫০ টাকা। খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকায়। এই দাম ঢাকার খোলা বাজারে আরো বেশি।
এমন বাজার বৈষম্যে কৃষকদের পাশাপাশি ভোক্তারাও হতাশ। বগুড়া শহরের সবচেয়ে বড় খুচরা চালের বাজার রাজাবাজার। এই বাজারে চাল কিনতে আসা শাহনাজ পারভীন অভিযোগ করে বলেন, খুচরা ব্যবসায়ীরা তাদের ইচ্ছেমতো চালের দাম বৃদ্ধি করেছেন। বাজার মনিটরিং সেলের কোনো কর্মকর্তাকে বাজারে এসে খোঁজখবর নিতে তিনি দেখেন নি।
এমন অভিযোগ তুলে আরেক ক্রেতা আখতারুজ্জামান বলেন, গরিবের মোটা চাল নিয়েও অবৈধ ব্যবসা করছেন ব্যবসায়ীরা। মোটা চাল এই সময় সর্বোচ্চ ৩০ টাকা দাম থাকার কথা থাকলেও ৩৮-৪০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। চালের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বললে তারা বাজারে আমদানি কমের অজুহাত দেখিয়ে দাম বৃদ্ধিকে বৈধতা দিয়েছেন। বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার মাঝারি হাসকিং মিল ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ বলেন, খুচরা বিক্রেতা এবং চাল সিন্ডিকেটরা মিলারদের দুষলেও আসলে চালের বাজার অস্থির করে তুলছেন তারাই (আড়তদার, স্টক ব্যবসায়ী ও খুচরা ব্যবসায়ী)। তিনি আরো বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের হাতেগোনা কয়েকজন আড়তদারের হাতে দেশের অধিকাংশ চাল বন্দি হয়ে আছে। তারা বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ইচ্ছেমতো দামে চাল বিক্রি করছেন। তারা তাদের অপরাধ ঢাকার জন্যই মিলারদের দোষ দিচ্ছেন। তিনি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেন, মিলারদের ঘরে গিয়ে প্রশাসন যদি চাল পায় তাহলে সব দোষ মাথা পেতে নেবো। তিনি এও বলেন, বাজার প্রশাসন জানেন, কোথায় চাল আছে। তারা যদি ইচ্ছে করেন চালবাজির মূল রহস্য একদিনেই বের করতে পারবেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status