শেষের পাতা

সিলেটে আলোচিত ইয়ালিছ খুন

রিমান্ডে মুখ খুলেছে আসামিরা

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১৬ জানুয়ারি ২০১৯, বুধবার, ১০:০৩ পূর্বাহ্ন

রিমান্ডে মুখ খুলেছে সিলেটের ইয়ালিছ খুনের আসামিরা। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে পুলিশকে দিয়েছে নানা তথ্য। পুলিশ আজ-কালের মধ্যে তাদের আদালতে হাজির করবে। পুলিশ জানিয়েছে, আসামিরা আলোচিত এ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে পারে। ইতিমধ্যে তারা খুনের ঘটনা সম্পর্কে অনেক তথ্য দিয়েছে। এদিকে ওসমানীনগর থানার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ঘাতক কামরুল  এরই মধ্যে খুনের দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে। তার দেয়া তথ্য মতে পুলিশ মামলার আসামি বশিরের বাড়ি থেকে রক্তমাখা ছোরা উদ্ধার করেছে।

ওসমানীনগর কুরুয়া এলাকায় অপরাধ সম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল আওয়ামী লীগ নেতা আনহার মেম্বার ও তার সহযোগীরা। তারা কুরুয়া এলাকায় নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিজস্ব বাহিনী গড়ে মাদক বিক্রি, জুয়ার বোর্ড পরিচালনা, জমি দখলসহ নানা ঘটনা ঘটাতো। এসব ঘটনায় এলাকায় প্রতিবাদী ছিলেন প্রবাসী রুহেল আহমদ ও তার স্বজন ইয়ালিছ মিয়া। অপরাধ কর্মে বাধা দেয়ার কারণে গত ২৭শে সেপ্টেম্বর রাতে কুরুয়া এলাকার সিএনজি ফিলিং স্টেশনের ভেতরে আনহার মেম্বার ও তার সহযোগীরা দা, রামদা দিয়ে নির্মমভাবে কুপিয়ে খুন করে ইয়ালিছ মিয়াকে। এ সময় প্রবাসী রুহেলের বন্ধু সিলেটের ব্যবসায়ী কামরুজ্জামানকে নির্মমভাবে কোপায়। কামরুজ্জামানের পায়ের রগ কেটে দেয়। এ ঘটনায় কামরুজ্জামান প্রাণে বাঁচলেও এখন পঙ্গু জীবন যাপন করছেন।

ঘটনার পরপরই এলাকা ছেড়ে পালায় আনহার মেম্বার ও সহযোগীরা। পুলিশ ওই সময় তাদের গ্রেপ্তার করতে একাধিক অভিযান পরিচালনা করলেও খুঁজে পায়নি। এ ঘটনায় নিহত ইয়ালিছের স্বজন ফারুক মিয়া বাদি হয়ে সিলেটের ওসমানীনগর থানায় হত্যা মামলা করেন। এ মামলায় প্রধান আসামি করা হয় অপরাধ সম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রক আনহার মেম্বার, তার সহযোগী বশির আহমদ, জামাল খান, কামাল খান ও কামরুলকে। এদিকে খুনের ঘটনায় প্রায় দুই সপ্তাহ পর পুলিশ কামরুলকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে কামরুল খুনের দায় স্বীকার করে। এবং তার দেয়া তথ্য মতে পুলিশ খুনে ব্যবহৃত রক্তমাখা ছোরা আরেক আসামি বশিরের বাড়ি থেকে উদ্ধার করে।

এদিকে- প্রায় আড়াই মাস পালিয়ে থাকা অবস্থায় ওসমানীনগর থানার এসআই মুমিনুল ইসলাম প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গত ৪ঠা ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জ থেকে আনহার মেম্বার ও কমলগঞ্জের ভানুগাছ এলাকা থেকে জামাল খানকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আনহার মেম্বার ও জামাল খান খুনের ঘটনা স্বীকার করলেও পরবর্তীতে তারা এ ব্যাপারে মুখ বন্ধ রাখে। পাশাপাশি পলাতক থাকা কামাল খান আদালতে আত্মসমর্পণ করলে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এ কারণে ওসমানীনগর থানা পুলিশ তাদের রিমান্ডে নিতে আদালতের কাছে প্রার্থনা করে। আদালত আনহার মেম্বার, জামাল খান, কামাল খানের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে সোমবার বিকেলে পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

ওসমানীনগর থানার ওসি আল মামুন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, রিমান্ডে থাকা আসামিরা পুলিশের কাছে অনেক তথ্য দিয়েছে। এখন তাদের আদালতে পাঠানো হবে। আদালতে তাদের জবানবন্দি গ্রহণ করা হতে পারে। আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডের এখন অনেক কিছুই পরিষ্কার বলে জানান তিনি। মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন- রিমান্ডে থাকা আসামিরা ইতিমধ্যে খুনের দায় স্বীকার করেছে। খুনের মিশনে নেতৃত্ব দিয়েছে আনহার মেম্বার নিজেই। আর খুনের ঘটনার পরপরই তাদের গ্রেপ্তার এড়াতে পালিয়ে যায়। তবে পুলিশ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের গ্রেপ্তার করেছে।

এদিকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী ও গুরুতর আহত হওয়া সিলেটের ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, ঘটনার দিন তারা সিলেট থেকে কুরুয়া যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তাদের থামায় আনহার মেম্বার। এরপর তারা হামলা করে। আনহার মেম্বার নিজে প্যান্টের ভাজ থেকে চাকু বের করে ইয়ালিছ মিয়াকে উপর্যুপরি কুপায়। এরপর তার দিকে তেড়ে আসে। আনহারসহ কয়েকজন মিলে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপায় বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, খুনিদের মূল টার্গেট ছিলেন তার বন্ধু লন্ডন প্রবাসী রুহেল আহমদ। তিনি ওই সময় সঙ্গে না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status