এক্সক্লুসিভ

ফিরে দেখা

স্বর্ণার ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প

মরিয়ম চম্পা

১৬ জানুয়ারি ২০১৯, বুধবার, ৯:২৬ পূর্বাহ্ন

ভাগ্য বদলের পরিবর্তে বিপর্যয়। ভাঙচুর, তছনছ জীবন। বিদেশে যাওয়া বহু নারীর কপাল পোড়ার কাহিনী আমরা তুলে ধরেছিলাম মানবজমিনে। গত বছর ১লা অক্টোবর ‘নির্যাতনের দুঃস্বপ্নে ঘুম ভাঙে স্বর্ণার’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল সৌদি ফেরত এক তরুণীকে নিয়ে। এখন কেমন আছেন তিনি? আর কি বা করছেন?
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে সেই তরুণী জীবন সংগ্রামে পরাজিত হয়েও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। করছেন একটি স্কুলে শিক্ষকতা। স্কুলের বাচ্চাদের সঙ্গেই কাটে তার বেশিরভাগ সময়। কেমন আছেন জানতে চাইলে স্বর্ণা (ছদ্মনাম) বলেন, এই তো আছি বেশ। নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি। দ্বিতীয় জন্ম হয়েছে আমার। আবার নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছি। ঘুরে দাঁড়িয়েছি দ্বিগুণ উদ্যমে। ফোনের ওপ্রান্তে খানিকটা থেমে আবার বলতে শুরু করলেন তিনি। স্কুলের চাকরিটা না হলে কি যে হতো আমার! সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নাস্তা শেষে টুকটুক করে হেঁটে স্কুলে পৌঁছাই। ঘড়ির কাঁটায় যখন ঠিক সকাল ৮টা তখন শ্রেণিকক্ষে ঢুকে পড়ি। এরপর মজার ছলে বাচ্চাদের পড়া নেয়া, হোম ওয়ার্ক দেখা, হোম ওয়ার্ক দেয়া এই করেই সময় কীভাবে কেটে যায় টেরই পাই না। এর ভেতর তাদের অভিযোগ তো থাকেই। মিস (শিক্ষিকা) ‘ও আমাকে চিমটি কেটেছে, খামচি দিয়েছে আরো কত কি?

স্বর্ণা বলেন, স্কুলটা নানু বাড়ির কাছে হওয়ায় সেখানে থেকেই নিয়মিত ক্লাস নেই। সবাই খুব ভালো জানে আমাকে। বাবা- মায়ের কাছে যাওয়া হয় কিনা জানতে চাইলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তিনি বলেন, নাহ্‌। বাবা-মায়ের বাসায় খুব একটা যাওয়া হয় না। বাবা-মা অনেকবার বলেছিল আমাদের বাসার পাশের একটি বেসরকারি স্কুলে জয়েন করতে। কিন্তু আমি ইচ্ছা করেই জয়েন করিনি। জানেন! প্রতিবেশীদের কটু কথা ঠিক কলিজায় গিয়ে লাগতো। সুযোগ পেলেই তারা দুটো কথা শোনাতে একদম ছাড়তো না। দেখলেই বলতো ওই দেখো সৌদির ঝি..(মেয়ে) আইছে। কলেজের বন্ধুদের সঙ্গেও খুব একটা দেখা করি না। আর মুখোমুখি হয়ে গেলেও প্রাথমিক শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে আর কথা আগায় না। কারণ ওরাও যেমন কথা বলার টপিক খুঁজে পায় না। একই ভাবে আমিও চেষ্টা করি যত দ্রুত সম্ভব কথা শেষ করতে। যদিও জানি কলেজের বন্ধুরা অনেকেই আমার পেছনে টিপ্পনি কাটে। কিন্তু আমি ওসবে পাত্তা দেই না।

স্বর্ণার স্বপ্ন নতুন করে কলেজে ভর্তি হবেন। গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করবেন। একটি সরকারি স্কুলে চাকরি করবেন। ছোট্ট একটি সংসার হবে। অতীতের সব গ্লানিকে পেছন ফেলে নতুন করে বাঁচবেন। যে বাঁচার মধ্যে সৌদিতে তার জীবনে ঘটে যাওয়া ভয়াল দিনগুলো আর দুঃস্বপ্ন হয়ে তাড়া করবে না।
২০১৮ সালের শুরুর দিকে মেডিকেল ভিসায় সৌদি যান স্বর্ণা। তখন তিনি ইন্টারমিডিয়েট দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে পছন্দ করতেন স্বর্ণা। মেডিকেল ভিসায় সৌদি গেলে কাজের পাশাপাশি ঘোরা হবে এমনটাই ভেবেছিলেন তিনি। পরিবারের সকলের ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেকটা জোর জবরদস্তি করে বিদেশে যান স্বর্ণা। মেয়ের বিদেশ যাওয়া নিয়ে বাবা-মায়ের আক্ষেপের শেষ ছিল না। মা একা একা কাঁদতেন। আর বাবা তো বাসার বাইরে প্রায় বের হওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। স্বর্ণার ভাষায়, সবার সঙ্গে যেমন জেদ করে বিদেশ গিয়েছি তেমনি শাস্তি আমার কপালে জুটেছে। সৌদিতে বাড়ির মালিকের অত্যাচারে পা ভেঙে হাসপাতালে প্রায় ১ মাস ভর্তি ছিলাম। হাসপাতালে বাংলাদেশি ক্লিনারের মোবাইল দিয়ে বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করে বাংলাদেশের শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সহায়তায় দেশে ফিরে আসে স্বর্ণা।  
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status