বাংলারজমিন
মনু প্রতিরক্ষা বাঁধে ফাটল
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
১৬ জানুয়ারি ২০১৯, বুধবার, ৮:২৩ পূর্বাহ্ন
মৌলভীবাজারের মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। কয়েক স্তরের এই দীর্ঘ ফাটল নদী তীরবর্তী বাঁধকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বর্ষা মৌসুমের আগেই এটি মেরামত করা না হলে বাঁধ ভেঙে বন্যার ঝুঁকি তৈরি করবে। এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের দাবি নদী থেকে নিয়ম না মেনে মেশিন (বল্ডগেজ) লাগিয়ে বালি উত্তোলনের কারণে এই সমস্যা দেখা দিয়েছে। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্র জানায় জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে সদর উপজেলার কনকপুর, দর্লভপুর, বালিকান্দি, কোমারবাড়িসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের বামে (ঢালু জায়গায়) ফাটল দেখা দিয়েছে। গতকাল সরজমিন গিয়ে দেখা গেছে কনকপুর ইউনিয়ন পরিষদের দুর্লভপুর গ্রামের জামে মসজিদের সামনে থেকে ঈদগাহ মাঠ পর্যন্ত এলাকায় মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধের ঢালু অংশে (বামে) ফাটল দেখা দিয়েছে। এই কারণে নদী পাড়ের কিছু অংশ ধসে পড়েছে। নদীর কূলের একটি পাকাবাড়ির একাংশ ইতিমধ্যে ডেবে গেছে। এর দক্ষিণ এবং উত্তর পাশে নদীতে মেশিন বসিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। স্থানীয় কয়েকজন এই সময় বলেন, মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে নদী তীরে ফাটল দেখা দিয়েছে। একপাশ ডেবে যাওয়া বাড়ির বাসিন্দা মাজেদা বেগম (৩৫) জানান নদীর পানি কমে যাওয়ার পর থেকেই এই ফাটল দেখা দিয়েছে। তবে ঝুঁকি থাকার পরও যাওয়ার জায়গা নেই বলে ওই এলাকার দিনমজুর ৪ পরিবার এখানে বসবাস করছেন। একই বাড়ির আরেক বাসিন্দা আসমা বেগম (৪০) বলেন, তাদের বাড়ি আজমিরিগঞ্জ। স্বামী দিনমজুরি করেন। প্রতিদিন ফাটল বাড়ছে চোখের সামনে। দুর্লভপুর ইউনাইটেড ক্লাবের উপদেষ্টা আবদুল কাইয়ূম (৫৫) জানান, প্রতিরক্ষা বাঁধের ফাটল দেখা দিয়েছে জানুয়ারির ৭-৮ তারিখ থেকে। দেখার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। তিনি জানান এই ফাটল এখনই মেরামতের উদ্যোগ নেয়া না হলে সারা ইউনিয়নের সবক’টি গ্রাম বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে। কনকপুর ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউর রহমান জানান, বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে। তার দাবি ঝুঁকিপূর্ণ এই বাঁধ দ্রুত মেরামত বা ফাটল প্রতিরোধের কার্যকর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এদিকে অভিযোগ আছে নদী থেকে মেশিন (বল্ডগেজ) দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। একটি সূত্র জানায় নিয়ম অনুযায়ী কোনো স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন বারণ থাকলেও মানা হচ্ছে না। বল্ডগেজ মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর মাঝখানে গর্ত হয়ে যায়। এই সব জায়গার বোল্ডারগুলো সরালে উপরের মাটিসহ নিয়ে চলে আসে। এর ফলে এই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজার কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী গতকাল মানবজমিনকে মুঠোফোনে জানান, প্রতিরক্ষা বাঁধের বার্মে (ঢালু জায়গায়) ফাটল বাঁধের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। আর এটি হচ্ছে আইন না মেনে নদী থেকে মেশিন (বল্ডগেজ) দিয়ে বালু উত্তোলনের ফলে। এ ব্যাপারে থানায় জিডি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসককে অবহিত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, একপক্ষ বারবার অপরাধ করবে আর পানি উন্নয়ন বোর্ড লাখ লাখ টাকা খরচ করবে কোথা থেকে। এ ব্যাপারে সবাইকে সচেতন হওয়া দরকার।