দেশ বিদেশ

শিশুধর্ষণ কমাতে প্রয়োজন দৃষ্টান্তমূলক বিচার

রাশিম মোল্লা

১২ জানুয়ারি ২০১৯, শনিবার, ৯:৫১ পূর্বাহ্ন

বেড়েই চলেছে ধর্ষণ। এ থেকে বাদ পড়ছে না কেউ। ধর্ষকরা শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না। ধর্ষণের পর তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে। এ থেকে রেহাই পাচ্ছে না ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুও। নানা প্রলোভনে ফেলে তাদের প্রথমে ধর্ষণ করা হয়। এরপর অমানুষিকভাবে হত্যা করা হয়। এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় অভিভাবকরা। কিন্তু কেন এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটছে। কোন পথে রয়েছে এর সমাধান? এই সমস্যার সমাধান করতে না পারলে বিপর্যয়ের মুখে পড়বে সমাজ। এ সমস্যার আশু সমাধানে প্রয়োজন কঠোর দৃষ্টান্তমূলক বিচার ও সর্বস্তরের লোকজনকে এগিয়ে আসতে হবে। শিশুদের মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন, সামাজিক মূল্যবোধের উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব হলেই এই অবস্থার উত্তরণ সম্ভব।
বাংলাদেশে শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যানুযায়ী, গত বছর দেশে শিশুহত্যা হয়েছে ৪১৮টি। যেখানে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে ৬০ শিশুকে। ওই সংগঠনটির মতে, শিশুহত্যার বিচারে তেমন কোনো দৃষ্টান্ত না থাকায় থামছে না অপরাধীরা। একই মত সমাজবিজ্ঞানীদের। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা ও কঠোর শাস্তির দৃষ্টান্ত না থাকার কারণেই দেশে শিশুধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা কমছে না বলে তাদের মত। তবে শিশুহত্যা বন্ধ করতে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি নাগরিকদের সচেতনতাও জরুরি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এ ব্যাপারে কথা হয় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ এর সঙ্গে । তিনি বলেন, শিশু ধর্ষনের মামলাগুলো দ্রতু বিচিার ট্রাইব্যুনালে হলেও নির্দিষ্ট সময়ে মামলাগুলি শেষ হয়না । তাই মামলাগুলি যাতে নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয় তার উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সাথে পিপিদের মামলাগুলি নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আরো মনোযোগী হতে হবে।  একই মত দেন সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইবরাহিম আবির ইবু। তিনি বলেন, আদালতে শিশুধর্ষণের মতো আলোচিত মামলাগুলোও বাদী পক্ষের তদারকির অভাবে কিছুদিন পর আর চলমান থাকে না। ফলে এসব ঘটনার তেমন কোনো দৃষ্টান্তমূলক বিচার হয় না। এজন্য মামলাগুলোর তদারকিতে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন।  একই মত দেন
সমাজবিজ্ঞানী সাদেকা হালিম মানবজমিনকে বলেন, বাংলাদেশে আইনের জায়গাটা অনেক পলিটিক্যাল হয়ে গেছে। আইন ঠিকই আছে, তবে যারা আইন প্রয়োগ করেন তারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে যান। আর যারা অপরাধ করে এসব সন্ত্রাসী বা দুর্বৃত্তদের রাজনৈতিক একটা সম্পৃক্ততা থাকে। ফলে তারা বারবারই হত্যাকাণ্ড, নির্যাতন করেই যায় এবং ছাড় পেয়ে যায়। দেশের পুলিশ অন্যান্য কাজ যত দ্রুততার সঙ্গে করতে পারে যখন কোনো হত্যাকাণ্ড বা ধর্ষণের ঘটনা ঘটে তখন তাদের এত দ্রুততা আমরা দেখতে পাই না। পাশাপাশি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে দিয়ে দৃষ্টান্তমূলক বিচার নিশ্চিত করতে হবে। না হলে এসব অপরাধ কমবে না। এ ছাড়া এসব ঘটনা কমাতে হলে মাদকের ভয়াবহতা কমাতে হবে বলে মনে করেন এই সমাজবিজ্ঞানী।
গত ৭ই জানুয়ারি রাজধানীর ডেমরায় নির্মম বর্বরতার শিকার হয় দুই অবুঝ শিশু। নুসরাত জাহান ও ফারিয়া আক্তার দোলা। নুসরাতের বয়স  ৪ আর দোলার বয়স ৫। এ বছরই তারা স্থানীয় একটি স্কুলে নার্সারিতে ভর্তি হয়। প্রথম দিন যথারীতি স্কুলে যায় তারা। দুপুরে নতুন বই নিয়ে স্কুল থেকে আনন্দে বাড়ি ফিরে আসে শিশু দুটি। সন্তানের এমন আনন্দে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে দুই পরিবারসহ স্বজনরা। আর্থিক অবস্থা যতই খারাপ হোক সন্তানদের নিয়ে স্বপ্ন দেখতে এতটুকু কমতি ছিল না খেটে খাওয়া পরিবার দুটির। তাদের প্রত্যাশা ছিল, একদিন অনেক বড় হবে তাদের সন্তানরা। পড়াশোনা শেষে প্রকৃত মানুষ হয়ে কাজ করবে দেশ ও জাতির কল্যাণে।
কিন্তু হঠাৎ করে পরিবার দুটির স্বপ্নকে দুঃস্বপ্নে পরিণত করে দেয় মানুষরূপী দুই অমানুষ। বিকৃত মানসিকতার এই দুই পাষণ্ডের যৌন লালসা থেকে মুক্তি মেলেনি এতটুকুন দুটি শিশুর। লিপস্টিক দিয়ে সাজিয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বাসায় ডেকে নিয়ে যায় শিশু দুটিকে। পরে যৌন লালসা চরিতার্থ করতে গেলে চিৎকার করে ওঠে অবুঝ শিশু দুটি। তখনই ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে গলা টিপে ধরে ও গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে শিশু দুটিকে।
এর আগে গত ৫ই জানুয়ারি রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় ঘটে আরো একটি ঘটনা। দুই বছরের এক কন্যাশিশুকে ধর্ষণের চেষ্টার পর তিনতল ভবন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করে নাহিদ (৪৫) নামের এক মাদকসেবী। খিচুড়ি খাওয়ানোর প্রলোভন দেখিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে শিশুটিকে ধর্ষণের পর  ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়।
শিশুধর্ষণের এসব ঘটনা কোনো খণ্ডচিত্র নয়। রাজধানীসহ সারা দেশে ভয়ঙ্করভাবে বেড়ে গেছে শিশু নির্যাতন ও শিশুর প্রতি সহিংসতা। চলতি বছর শুরু হওয়ার পর গত ১০ দিনে রাজধানীসহ সারা দেশে শিশুর প্রতি সহিংসতার অন্তত ১০টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় অন্তত চারজনকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করা হয়েছে। এনাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক ডা. বাবুল হোসেনের মতে, নেতৃস্থানীয় থেকে সমাজের প্রতিনিধি,  শিক্ষক,  স্থানীয় নেতা,  সমাজের সকলকে সচেতন করাই হবে উত্তম পদক্ষেপ। শুধু প্রশাসন দিয়ে হবে না। এটা আমাদেরকে সবাই মিলে প্রতিরোধ করতে হবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status