প্রথম পাতা

আওয়ামী লীগের আরো ৫ বছর ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার

১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:৫২ পূর্বাহ্ন

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আরো পাঁচটি বছর ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন আওয়ামী লীগের। কারণ, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড শেষ করতে আরেকবার ক্ষমতায় যাওয়া প্রয়োজন। আর এ সময়ে বাংলাদেশে হতদরিদ্র বলে কিছু থাকবে না। প্রত্যেকটি মানুষের খাদ্য, চিকিৎসা, বাসস্থান যেটুকু বাকি আছে, সেটাও আমরা করতে সক্ষম হবো।

সেজন্য আমাদের আরে ৫টি বছর সরকারে থাকা একান্তভাবে প্রয়োজন। দেশবাসীর কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চেয়ে তিনি বলেন, দেশকে আরো উন্নত করতে চাই। এজন্য নৌকা মার্কায় ভোট চাই। আমার বিশ্বাস ও আস্থা আছে আগামী ৩০শে ডিসেম্বর বাংলাদেশের জনগণ নৌকা মার্কায় ভোট দেবে। বাংলাদেশের জনগণ কখনও ভুল করে না। সে জন্যই বিজয় দিবসে, বাংলাদেশের জনগণের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। এই অগ্রযাত্রা যেন কেউ কেড়ে নিতে না পারে। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিজয় দিবসের আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের ভোটের অধিকার, তাদের সাংবিধানিক অধিকার আর কখনো কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।

সেই সাহসও পাবে না। নৌকা মার্কা জনগণের মার্কা। এই নৌকা মার্কা দিয়ে এদেশের স্বাধীনতা এসেছে। এই নৌকা মার্কা দিয়েই বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার পেয়েছি। এই নৌকা মার্কার ফলে বাংলাদেশ উন্নয়নের গতিতে এগিয়ে বিশ্বে আজকে উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। এই নৌকা মার্কা আছে বলেই আজকে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। নৌকা মার্কা ছিল বলেই আজকে আমরা মহাকাশ জয় করেছি পাশাপাশি বিশাল সমুদ্র সীমা অর্জন করেছি। আমাদের ল্যান্ড বাউন্ডারি অর্জন করেছি। আজ বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ২১ ভাগে নেমে এসেছে।

ইনশাআল্লাহ, আগামী ৫ বছর যদি আবার আমরা নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারি এই দারিদ্র্যের হার অন্তত আরও ৫/৬ ভাগ কমিয়ে আনতে সক্ষম হবো। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দশ বছরে আমরা যে পরিবর্তনটা এনেছি, সেই পরিবর্তনটা অনেকের চোখে পড়ে না। যখন মানুষ ভালো থাকে, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়, তখন তারা বলে এটা নাকি স্বেচ্ছাচারিতা। স্বেচ্ছাচারিতা কী করে হলো- এটা আমার প্রশ্ন। কি দেখতে পেল তারা? শেখ হাসিনা বলেন, তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দেখলাম, তারা ঘোষণা করেছে-স্বেচ্ছাচারিতাকে নাকি পরিবর্তন করবে। এ পরিবর্তন কি জঙ্গিবাদ সৃষ্টি, বাংলা ভাই সৃষ্টি, মানি লন্ডারিং, দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন, আবার সন্ত্রাস, আবার ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার তালিকা, আবার নির্বাচনের নামে প্রহসন, দেশের সমস্ত উন্নয় ধ্বংস করে দিয়ে দেশকে সম্পূর্ণভাবে আবার অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাওয়া? এই পরিবর্তন তারা আনতে চান? ছিল তো ক্ষমতায়। ৪৭ বছর তো দেশ স্বাধীন হয়েছে।

এই ৪৭ বছরের মধ্যে ৩৯ বছর তো এরা ক্ষমতায় ছিল। কী দিয়েছিল মানুষকে? কী পেয়েছে মানুষ? মানুষ কিছু না পেলেও বিএনপি-জামায়াত জোটের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাদের কথা শুনেছি, ভাঙা স্যুটকেস ছাড়া কিছুই নেই, তারা কত সম্পদের মালিক। সম্পদ শুধু দেশে নয়, দেশে আবার বিদেশে তাদের সম্পদের মালিকানার বিরাট হিসাব চলে আসছে। ঘুষ-দুর্নীতি করে তারা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেছে। আর আমদের ওপর দুর্নীতির অভিযোগ যখন এনেছিল ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম, সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করেছি, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক দুর্নীতি পায়নি। কানাডার ফেডারেল কোর্ট স্পষ্ট বলে দিয়েছিল, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সব অভিযোগ ভুয়া, বানোয়াট, মিথ্যা।

বাংলাদেশের কোনো মানুষের মাথা হেঁট হোক- সেটা করি নাই কখনও। বরং বাংলাদেশের মানুষ বিদেশে গেলে সম্মান, মর্যাদা পাচ্ছে, সেইটুকু করতে সক্ষম হয়েছি। তাহলে স্বেচ্ছাচারিতা কোথায়? প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনারা কী পরিবর্তন করে ফেলবে? আজকে যারা এক হয়েছে তারা কারা? একদিকে স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, সে যুদ্ধাপরাধীরা কীভাবে নমিনেশন পায়, যারা বাংলাদেশই চায়নি। আমি আর কারো নাম নিতে চাই না। মনে হয়, যেন নামটাই নেয়া উচিত না। আমার তাদের জন্য করুণা হয়, কারণ তারা দিকভ্রষ্ট। তাদের আর কোনো নীতি নাই। নীতিভ্রষ্ট, আদর্শহীনরা কখনও মানুষকে কিছু দিতে পারে নাই এবং দিতেও পারবে না। আমি বলব, এরা বাংলাদেশের আদর্শে বিশ্বাস করে না।

টানা দুই মেয়াদ সরকারের নেতৃত্ব দেয়া শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কী দুর্ভাগ্য, যারা জ্ঞানগর্ভ ভাষণ দেন, যুক্তি দেখান, বুদ্ধি দেন, বড় বড় কথা বলে, আদর্শের বুলি আওড়ায়- আজকে তাদের সব ধরনের উচ্চবাচ্য কোথায় হারিয়ে গিয়ে হাত মিলিয়েছে খুনিদের সঙ্গে, দুর্নীতিবাজ অস্ত্র চোরাকারবারিদের সঙ্গে। কীসের স্বার্থে কেন- এটাই প্রশ্ন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যুদ্ধাপরাধীদের স্বজনদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। মানুষ পুড়িয়ে হত্যার রাজনীতিবিদদের ভোট চাওয়ার কোনো অধিকার নাই। যারা বাংলাদেশ চায়নি, তারা কীভাবে ভোট চায়। বিজয় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে লাখো শহীদের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়ের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, আজ বিজয় দিবসে, বাংলাদেশের জনগণের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাই।

ভোট এই কারণে যে, বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যেন কেউ কেড়ে নিতে না পারে। স্বাধীনতাবিরোধী, খুনি, রাজাকার, আলবদর, আল-শামস বাহিনী, বুদ্ধিজীবী হত্যাকারী, গ্রেনেড হামলাকারী, দুর্নীতিবাজ, অস্ত্র চোরাকারবারি, সাজাপ্রাপ্ত খুনি আসামি; এরা কখনো এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দেবে না। তিনি বলেন, আমি একটা কথাই বলবো, নৌকা মার্কায় ভোট চাই। দেশের সেবা করে দেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। যে বাংলাদেশের স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন এবং আমার বিশ্বাস আছে বাংলাদেশের জনগণ আমাদের ভোট দেবে। ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করার অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, ২০২০ থেকে ২০২১ এই বর্ষকে আমরা মুজিব বর্ষ হিসাবে ঘোষণা দিয়েছি।

আমরা তার বছরব্যাপী শতবার্ষিকী উদযাপন করেই উদযাপন করবো আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এই সুবর্ণজয়ন্তী যখন উদযাপন করবো বাংলাদেশ তখন বাংলাদেশকে আমরা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলবো, ইনশাল্লাহ। কোনো মানুষ গৃহহারা থাকবে না, ক্ষুধার্ত থাকবে না। বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে না। এটা আমাদের অঙ্গীকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেইভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আজ নব্বই ভাগ মানুষের ঘরে আলো জ্বালাতে পেরেছি। বাংলাদেশকে ক্ষুধামুক্ত করতে পেরেছি। বাংলাদেশ যে আজ এগিয়ে যাচ্ছে, বাংলাদেশের মানুষ আজকে খুশি। গ্রামের মানুষ বিশেষ করে সব থেকে নারীরা বেশি উৎসাহিত। আমাদের মেয়েদের উন্নয়নের ব্যাপক সার্বিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছি। পাশাপাশি দুস্থ মাতা, স্বামী পরিত্যক্ত ও বিধবা, বয়স্কভাতা চালুর উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ভাতার ফলে সংসারে তারা একটি স্থান পাচ্ছে।

তাদের আর ঘর সংসার ফেলে চলে যেতে হচ্ছে না। তাদের সমাজে একটা জায়গা হচ্ছে। এই সুযোগটা আমরা তাদের জন্য করে দিয়েছি। বাংলাদেশের যে ইতিহাস, যে চেতনা নিয়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের বিজয় দিবস এমন একটা সময়ে উদযাপন করছি, মানুষ আজ স্বাধীনভাবে মন খুলে এই বিজয়ের উল্লাস করতে পারছে। বিজয় দিবস তারা উদযাপন করতে পারছে। একটা সময় ছিল এটা উদযাপন করাই যেত না। ইতিহাস বলা যেত না। বিকৃত ইতিহাস বলতে হতো। এখন আর সেই অবস্থাটা নাই। সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে এবং এই ধারাবাহিকতাই বজায় থাকতে হবে। তাহলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আর কেউ বাংলাদেশকে পিছনে ফেলতে পারবে না।

আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন প্রমুখ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status