দেশ বিদেশ

গাজীপুরে হামলা, মামলা, গ্রেপ্তার বিপর্যস্ত ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর থেকে

১৮ ডিসেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ৯:৫০ পূর্বাহ্ন

প্রতীক বরাদ্দের পর ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে নেমে মামলা, হামলা আর গ্রেপ্তারের মুখে পড়ছেন। গ্রেপ্তার হয়েছেন একজন প্রার্থী, অপর প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দ। হামলা হয়েছে প্রার্থীর গণসংযোগে, মারধর করা হয়েছে প্রার্থীকে। এ ছাড়াও নানা ধরনের হুমকি-ভয়ভীতিতে থাকা, পোস্টার ছেঁড়া, নির্বাচনী অফিস ভাঙচুরসহ নানা অভিযোগও রয়েছে। এতে করে নির্বাচনের মাঠে টিকে থাকাই দুষ্কর হচ্ছে তাদের। এমন অভিযোগ ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের। অন্যদিকে অভিযোগের বিষয়ে বিভিন্ন আসনের আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা বলছেন, তাদের কাজই হলো শুধু মিথ্যা অভিযোগ তুলে পরিবেশ ঘোলা করার অপচেষ্টা। নির্বাচনের মাঠে নামতে পারছে না নিজেদের নানা সংকটের কারণে। তারাই নানা অপকর্ম করে মামলার আসামি হচ্ছে। আর নাটক সাজাচ্ছে।
বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট নেতারা জানান, প্রথমদিনে নির্বাচনী গণসংযোগে নেমেই গাজীপুর-১ আসনের প্রার্থী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য চৌধুরী তানবীর আহমেদ সিদ্দিকী সফিপুরে হামলার মুখে পড়েছেন। তাদের ওপর হামলা করে, তাদের গাড়ি ভাঙচুর করে, উল্টো কালিয়াকৈর পৌরমেয়র মজিবুর রহমানসহ তাদের ৬৬ জন নেতাকর্মীর নামে থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মামলা দেয়া হয়েছে। প্রথম দিনের গণসংযোগে হামলা-মামলায় থমকে যায় বিএনপি নেতাকর্মীরা। অবশ্য আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, ওই স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের ওপর হামলা চালায়।
গাজীপুর-৫ আসনের প্রার্থী বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হক মিলন গত বৃহস্পতিবার প্রথম এসেছিলেন তার নির্বাচনী এলাকায়। এর দুদিন আগে তার স্ত্রী ক’জন নারীকর্মীকে নিয়ে নেমেছিলেন নির্বাচনী মাঠে। নানা বাধার মুখে পড়ে তিনি প্রচার কাজ ছেড়ে উঠে যান নির্বাচনী মাঠ থেকে। নির্বাচনের মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ফজলুল হক মিলন তার নিজ বাড়িতে বসে উপজেলার বিএনপি নেতাদের নিয়ে নির্বাচনী মাঠে গণসংযোগ শুরু করা বিষয়ে পরিকল্পনা করতে থাকেন। এরই মাঝে হানা দেয় পুলিশ। ঢাকার দু’টি থানার মামলায় গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় ঢাকায়। গত ১০ বছরেও বিএনপি কালীগঞ্জে কোনো ধরনের রাজনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারেনি। মামলায়-মামলায় কাবু হয়ে আছে উপজেলা, ইউনিয়ন থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা, এমন কি সমর্থকরা পর্যন্ত। এই অবস্থায় অনেকেটাই লুকিয়ে, পালিয়ে নির্বাচনে আছে তাদের কর্মী-সমর্থকরা। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মতো করে নির্বাচনী সভা, পথসভা, দলবেঁধে মিছিল তুলে গণসংযোগ তো দূরের কথা- মাথা উঁচু করে, বিএনপির পক্ষে বর্তমানে কথা বলার অবস্থায়ই নেই তারা। বিএনপি নেতাদের দাবি, নানা কারণে বিএনপির সাবেক এই এমপি ফজলুল হক মিলনের জয়ের পথ এবার ছিল অনেকটাই সুগম। সে জন্যেই পরিকল্পিতভাবে নির্বাচনী মাঠ থেকে দূরে রাখা হচ্ছে তাদের।
গাজীপুর-৪ আসনের বিএনপির প্রার্থী দলের প্রয়াত স্থায়ী কমিটির সদস্য হান্নান শাহ’র ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নানের নির্বাচনী গণসংযোগ চলাকালে শুক্রবার হামলা করা হয়েছে। এ সময় রিয়াজুল হান্নানকেও মারধর করা হয়। ভাঙচুর ও মারধরে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছে বলে তাদের অভিযোগ। অবশ্য, আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, রিয়াজুল হান্নানের নেতত্বে বাজারের লোকজনের ওপর হামলা করা হয়, এতে এলাকাবাসী তাদের ধাওয়া দিলে পালিয়ে যান বিএনপির লোকজন। আওয়ামী লীগের কেউ তাদের ওপর হামলা করেনি। এই হামলার ঘটনা ছাড়াও এর আগে দুদিনে দলের ৮১ জন নেতাকর্মীর নামে দুটি মামলা হয়েছে। মামলার আসামিদের তালিকা ধরে চলছে গ্রেপ্তার অভিযান। গ্রেপ্তার এড়াতে এলাকা ছাড়ছেন নেতৃবৃন্দ। রাজনীতিতে নবীন রিয়াজুল হান্নান আওয়ামী লীগের অত্যন্ত শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হলেও মামলা, হামলায় হাফিয়ে উঠছেন নির্বাচনের মাঠে টিকে থাকতে।
গাজীপুর-৩ আসনের ঐক্যজোটের প্রার্থী কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল সিদ্দিকী। প্রতীক বরাদ্দের পর কয়েকটি কর্মিসভা করে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে মূলত বিএনপিনির্ভর হয়ে পুরোদমেই মাঠে নেমেছিলেন তিনি। কয়েকদিন ভালোই জমিয়ে তুলেন। তার নির্বাচনী সভায় বিপুল লোকজনের সমাগম হতে থাকে। বিএনপির স্থানীয় নেতৃত্ব একাট্টা হয়ে মাঠে নামেন ইকবাল সিদ্দিকীর পক্ষে। ভোটের মাঠ গরম হতে শুরু হতেই বিপত্তি আসতে থাকে। গত বুধবার রাতে ইকবাল সিদ্দিকীর নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির দুজন যুগ্ম আহ্বায়ক জেলা বিএনপির সহসভাপতি হুমায়ূন কবির এবং উপজেলা বিএনপির ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল মোতালেবকে নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার গণসংযোগ শেষে ফেরার পথে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রায় ৮০ বছর বয়সি পীরজাদা রুহুল আমীনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্য নেতাদের মতো পালিয়ে না থেকে তিনি সব সময়ই থাকতেন শ্রীপুরের নিজ বাড়িতে। এর আগে অন্য দুজনও মামলা-মোকদ্দমা না থাকায় তাদের বাড়িতেই বসবাস করতেন। স্বাভাবিকভাবে সবধরনের কাজকর্মও করতেন। প্রার্থীর অভিযোগ, নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে, নেতা কর্মীদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চলছে এই গ্রেপ্তারের ষড়যন্ত্র।
গাজীপুর-২ আসনের বিএনপির অনেক নেতাই এখন আছেন কারাগারে কিংবা মামলায় জড়িয়ে এলাকা ছাড়া। আর যারা আছেন, তারাও আছেন নানা ভয়ে-আতঙ্কে। মাঠ পুরোপুরি গুছিয়ে এই আসনের প্রার্থী সালাউদ্দিন সরকার গতকাল ঐক্যফ্রন্টের এক নির্বাচনী সভার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার শুরু করলেও এখনো পুরোদমে নামতে পারেননি নির্বাচনী মাঠে। দলীয় নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার, হুমকি ও ভয়ভীতির মধ্যে রয়েছেন। এই অবস্থায় ভোটের মাঠে শেষ পর্যন্ত কতটুকু টিকে থাকতে পারবেন, তাই এখন তাদের কাছে প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status