ইলেকশন কর্নার

উচ্চ আদালতে গিয়ে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন যারা

নাজমুল আহসান রাজু

১৭ ডিসেম্বর ২০১৮, সোমবার, ৯:০৯ পূর্বাহ্ন

নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে সংক্ষুব্ধ প্রার্থীরা আইনি প্রতিকার লাভে উচ্চ আদালতে গিয়েও তেমন সুফল পাননি। ভাগ্য খুলেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চার প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির (জাপা) এক প্রার্থীর। সবচেয়ে ভাগ্যবান স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। হাইকোর্টের আদেশে বৈধ প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী লড়াইয়ে ফিরেছেন স্বতন্ত্র ৮ প্রার্থী। হতাশ হতে হয়েছে বিচারিক আদালতে দণ্ডিত বিএনপির ৯ প্রার্থীকে। এদের দুজন হাইকোর্টে মনোনয়ন বৈধ বলে আদেশ পেলেও শেষ পর্যন্ত আটকে গেছেন আপিলে। বাকি ৭ জনের রিট আবেদনই টিকেনি।
ওদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী মহাজোট ও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর রিটে প্রার্র্থিতা হুমকিতে পড়েছে বিএনপির চার বৈধ প্রার্থীর। এখন আপিল বিভাগে তাদের প্রার্থিতার বিষয়টি ফয়সালা হবে। ঋণখেলাপি জাতীয় পার্টির (জাপা) রুহুল আমিন হাওলাদারের প্রার্থিতা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। কিন্তু তার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা-৯ আসনের মনোনীত প্রার্থী মির্জা আব্বাসের মনোনয়নপত্র ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যাচাই-বাছাইয়ের হাইকোর্টের আদেশ বহাল থাকে আপিল বিভাগে। গত ৬ই ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। পরে মির্জা আব্বাসের মনোনয়ন বৈধ হিসেবে বহাল থাকে। ঢাকা-২০ আসনের বিএনপি প্রার্থী তমিজ উদ্দিনের মনোনয়নপত্র গ্রহণের সিদ্ধান্ত স্থগিত করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ স্থগিত করে নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ফলে তমিজ উদ্দিন আপাতত প্রার্থিতা ফিরে পান। কাল সোমবার আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে তার প্রার্থিতার ফয়সালা হবে। তমিজ উদ্দিন ধামরাই উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে গত ২৮শে নভেম্বর পদত্যাগ করেন। সেই পদত্যাগপত্র প্রাজ্ঞাপন আকারে বের হওয়ার আগেই তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। এর বিরুদ্ধে তিনি আপিল করলে নির্বাচন কমিশন তাকে বৈধ প্রার্থী ঘোষণা করে। ইসির এ সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তমিজ উদ্দিনের প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী বেনজীর আহমেদ হাইকোর্টে রিট করেন। আদালত আবেদনের শুনানি নিয়ে ইসির সিদ্ধান্ত স্থগিত করে।
ঋণখেলাপির দায়ে ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনে বিএনপির প্রার্থী মো. আলী আজগরের মনোনয়ন স্থগিত করে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বহাল রেখেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গত ১২ই ডিসেম্বর ফারমার্স ব্যাংক রিট মামলা প্রত্যাহার করে নেয়ায় প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি। আলী আজগরের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির অভিযোগ এনে হাইকোর্টে রিট করেছিল ফারমার্স ব্যাংক। এ রিটের শুনানি শেষে গত ৯ই ডিসেম্বর তার মনোনয়নপত্র স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আলী আজগর আপিল বিভাগে যান। আপিল বিভাগ তার আবেদন খারিজ করে দেন। ফলে তিনি আর নির্বাচন করতে পারছেন না বলে জানানো হয়েছিল। এর পরপরই রিটটি প্রত্যাহার করে ফারমার্স ব্যাংক। একই আসনে বিএনপির অপর প্রার্থী আফজাল এইচ খানের মনোনয়নও গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট; তবে তিনি দলের তালিকায় বিকল্প প্রার্থী।
রংপুর-৫ আসনে ২০ দলীয় জোট সমর্থিত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী অধ্যাপক মো. গোলাম রব্বানীর মনোনয়নপত্র গ্রহণ করে যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ নির্দেশ প্রতিপালন করতে বলা হয় রংপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসককে। নির্বাচন কমিশনের আপিলে তার প্রার্থিতা বহাল থাকে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী সিলেট-২ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী তাহসিনা রুশদীর লুনা প্রার্থিতা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। একই আসনে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহহিয়া চৌধুরী এহিয়ার করা এক রিট আবেদনের শুনানি শেষে গত ১৩ই ডিসেম্বর বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলম সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ স্থগিতাদেশ দেন।
সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেয়ার তিন বছর পর সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হওয়ার বিধান থাকলেও তাহসিনা রুশদীর লুনা ৬ মাস আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদ থেকে অব্যাহতি নেন। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) বিধান অনুযায়ী, লুনার প্রার্থিতা অবৈধ দাবি করে রিট আবেদন করেন ইয়াহহিয়া চৌধুরীর আইনজীবী। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থগিতাদেশ দেন হাইকোর্ট।
মানিকগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী বেগম আফরোজা খান রিতার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্ত তিন মাসের জন্য স্থগিত করেন হাইকোর্ট। ফলে তার প্রার্থিতা আটকে যায়। তিনি এর বিরুদ্ধে আপিলে গেলে এখনো শুনানি হয়নি।
জামালপুর-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য এম রশিদুজ্জামান মিল্লাতের মনোনয়ন হাইকোর্টে স্থগিত হয় গত ১৩ই ডিসেম্বর। প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাবেক তথ্যমন্ত্রী আবুল কালাম আজাদের করা রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলম এ স্থগিতাদেশ দেন। রিট আবেদনে বলা হয় রশিদুজ্জামান মিল্লাত দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন।
টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী কাজী আশরাফ সিদ্দিকীর মনোনয়ন গত ৯ই ডিসেম্বর গ্রহণের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
স্বতন্ত্র: স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে মোট ভোটারের ন্যূনতম ১ শতাংশ ভোটারের সমর্থন থাকতে হয়। এ ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ওই শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়া ও স্বাক্ষরে গরমিল থাকায় তাদের প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়। হাইকোর্টে রিট করে প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন ৮ জন।
ঢাকা-৪ (শ্যামপুর-কদমতলী) আসনে ড. মো. আওলাদ হোসেন, কড়িগ্রাম-৪ আসনে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার, বগুড়া-৪ আসনে আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম, সিলেট-২ (ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ) আসনে প্রার্থী ড. এনামুল হক সরদার ও বিশ্বনাথ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান, মৌলভীবাজার-৩ আসনে জাসদ নেতা আবদুল মোসাব্বির, নওগাঁ-৪ আসনে আফজাল হোসেন ও নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে রেহান আফজাল।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status