শেষের পাতা

ইসিতে অভিযোগ

পুলিশ, প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ বিএনপির প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার

১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, রবিবার, ৮:৪২ পূর্বাহ্ন

নির্বাচনে পুলিশ, প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা ও নেতাকর্মীদের হামলার বিষয়ে গতকাল বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল নির্বাচন কমিশন সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এসময় গণফোরাম সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান ড. কামাল হোসেনের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি জানায় প্রতিনিধিদল।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে আরো ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আতাউর রহমান ঢালি। ইসি সচিবের সঙ্গে সাক্ষাতের পর আলাল সাংবাদিকদের বলেন, সব জায়গায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপির প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রশাসন, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা। এই তিন বাহিনীর মোকাবিলা করা আমাদের কাজ নয়। আমাদের কাজ হচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে যাওয়া। এই তিন বাহিনীকে মোকাবিলা করতে তো আমরা পারবো না।

তারা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এগুলো করছেন। গত শুক্রবার সারা দেশে বিভিন্ন আসনে যেসব হামলা ও সহিংসতা হয়েছে, সে বিষয়গুলো আমরা ইসিকে জানিয়েছি। আক্রমণ বন্ধ করতে ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে অনুরোধ  করছি।
আলাল বলেন, যে সব বিতর্কিত পুলিশের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগ করেছি, সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে একজন পুলিশকেও বদলি বা ক্লোজ করা হয়নি। একথাগুলো আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলেছি। আমরা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে ফিরে যাচ্ছি। কিন্তু তারা তো আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে এই সুযোগে দ্বিগুণ উৎসাহে ক্ষমতার অপব্যবহার করছে। তিনি বলেন, সাবেক নির্বাচিত সংসদ সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদের স্ত্রী ও সিরাজগঞ্জে বিএনপি প্রার্থী রোমানা মাহমুদের নির্বাচনী প্রচারণায় গুলি করা হয়েছে। তিনি আহত এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। তার কর্মীরাও গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। আমরা মামলা করতে গিয়েছি, পুলিশ মামলা নেয়নি। এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। এ ঘটনায় সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার টুটুল চক্রবর্তী ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু দাউদকে প্রত্যাহার করতে বলেছি।

আলাল বলেন, বড় কিছুই চাইনি নির্বাচন কমিশনের কাছে। তাদের ক্লোজ করার জন্য বলেছি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কয়েকদিন আগে বললেন- নির্বাচনের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি। আমরা তো জীবন নিয়েই বাঁচতে পারছি না।
তিনি আরো বলেন, ড. কামাল হোসেনের ওপর হামলার বিষয়ে ইসি সচিব বলেছেন, উনারা নাকি অবহিতই না। এটা খুব আশ্চর্য লাগে আমাদের কাছে। খুব কষ্ট লাগে। এটা আমাদের কাছে খুব বিস্ময়কর লাগে। এটা কীভাবে সম্ভব। নির্বাচন কমিশন সচিব বলেছেন, উনারা জানতেন না এবং টিভিতেও দেখতে পারেন নি। পরবর্তীতে উনারা ঘটনাটি শুনেছেন অফিস আওয়ারের পরে। উনারা কোনো ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন নি। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আলাল বলেন, ফলস ফ্ল্যাগ অপারেশনের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ যদি প্রচণ্ডভাবে সরকারের প্রতি অনুগত থাকে, সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য নিজেরা সাবোটাজ করে, প্রতিপক্ষের ওপর চাপিয়ে দেয়। এখন সেটা নির্বাচন কমিশন পর্যন্ত স্পর্শ করেছে কিনা, সেটা তো একটা প্রশ্ন থেকে যায়। না হলে একই সুরে কথা তো আমরা আশা করি না।

এত মারপিটের পরও আমরা মাঠে আছি। আমরা ৩০শে ডিসেম্বর পর্যন্ত থাকবো। এ ধরনের কথায় আমরা হতবাক, বিস্মিত হয়েছি। তিনি বলেন, আপনারা জেনেছেন আমরা মহামান্য প্রেসিডেন্টের সঙ্গে জাতীয় ঐকফ্রন্টের পক্ষ থেকে সাক্ষাৎ করার জন্য চিঠি দিয়েছি। কেননা, নির্বাচন কমিশন আমাদের বক্তব্য শুনেন। কিন্তু প্রতিকার তো পাই না। তাই সাংবিধানিকভাবে রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে আমরা উনার কাছেও বলবো। তাও কাজ না হলে জনগণের কাছে বিচারের দাবি ছেড়ে দেবো।

গোপালগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থীর প্রচারণায় বাধার অভিযোগ
গোপালগঞ্জ-৩ আসনে বিএনপির প্রার্থী এস এম জিলানীর সমর্থকদের নির্বাচনী প্রচারণায় আওয়ামী লীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাধা দিচ্ছে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেছেন ওই প্রার্থীর স্ত্রী রওশন আরা। গতকাল শনিবার দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ জানান ধানের শীষের এস এম জিলানীর স্ত্রী। গোপালগঞ্জ-৩ (কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া) আসনে বিএনপি নেতাকর্মীরা যাতে নির্বিঘ্নে প্রচারণা করতে পারে সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান বিএনপি প্রার্থীর স্ত্রী। রওশন আরা বলেন, তার স্বামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও গোপালগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি। এস এম জিলানী গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কাশিমপুর কারাগারে আছেন। পল্টন থানার বিস্ফোরক আইনের একটি মামলায় তিনি কারাগারে আছেন। এই মামলায় জিলানী এজাহারভুক্ত আসামি নয় বলেও জানান তার স্ত্রী। নির্বাচন কমিশন থেকে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করে এস এম জিলানীকে মুক্তি দিতে আহ্বান জানান তার স্ত্রী। উল্লেখ্য, গোপালগঞ্জ-৩ আসনে কারাবন্দি অবস্থায় ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এস এম জিলানী। তার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের প্রার্থী দলটির সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রচারণায় বাধার অভিযোগ
সারা দেশে অন্তত দশটি সংসদীয় আসনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলা ও পুলিশি বাধার অভিযোগ করেছে জোট। গতকাল দুপুরে বাম গণতান্ত্রিক জোটের কেন্দ্রীয় নির্বাচনী পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক ও সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম নির্বাচন কমিশনে গিয়ে লিখিত অভিযোগ জানান। তিনি বলেন, ‘আমরা কমিশনের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছি। কিন্তু সাক্ষাৎ পাইনি। তবে, আমরা প্রত্যাশা করবো অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে কমিশন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’

ঢাকা-৬, ঢাকা-১২, ঢাকা-১৩, ঢাকা-১৪, ঢাকা-১৭, পটুয়াখালী-৪, কুষ্টিয়া-৩, সাতক্ষীরা-১, জামালপুর-২ ও দিনাজপুর-৪ আসনে বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা, সরকার দলের কর্মীদের হামলা ও পুলিশি বাধার বিষয়ে বিস্তারিত অভিযোগ জানায় জোট। অভিযোগে বলা হয়, গত ১৩ই ডিসেম্বর ঢাকা-১২ আসনে জোটের প্রার্থী জোনায়েদ সাকির নির্বাচনী প্রচারণায় ফার্মগেট এলাকায় হামলা চালানো হয়। এ ছাড়া ১১ ও ১২ই ডিসেম্বর ওই আসনের মগবাজার, ইস্কাটন ও মণিপুর এলাকায় মই মার্কার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয় ও প্রচারণায় বাধা দেয়া হয়। কুষ্টিয়া-৩ আসনে মই মার্কার প্রার্থী শফিউর রহমান শফির প্রচারণায় পুলিশ বাধা দেয় বলে অভিযোগ করে শাহ আলম। তিনি বলেন, আগে থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবহিত করলেও পুলিশ অন্যায়ভাবে প্রচারণায় বাধা দেয়। এ ছাড়া, সাতক্ষীরা-১ আসনে জোটের প্রার্থী পথসভায় সরকার দলীয় জোটের কর্মীরা বাম জোটের প্রার্থী আজিজুর রহমানের পথসভায় হামলা চালায় বলে অভিযোগ জোটের।

কর্মী-সমর্থকদের পুলিশ হয়রানি করছে। গত শুক্রবার স্থানীয় খলিশখালী বাজারে কাস্তে মার্কার সমর্থকদের ওপর সরকার দলের কয়েকজন কর্মী হামলা চালায় বলে অভিযোগে তাদের নামও উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া বাকি আসনগুলো, বাম গণতান্ত্রিক জোটের কর্মীদের ওপর হামলা, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, মাইকের তার ছিঁড়ে ফেলা, প্রচারণায় বাধা ও পুলিশি হয়রানিসহ বেশকিছু বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানায়। নির্বাচন কমিশন সুনির্দিষ্ট এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে কমিশনের প্রতি অনুরোধ জানান সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status