দেশ বিদেশ

ঢাকায় নামতে পারছেন না বিরোধী প্রার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার

১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, রবিবার, ৮:৩২ পূর্বাহ্ন

রাজধানীসহ সারা দেশে গণসংযোগকালে অব্যাহতভাবে বাধার মুখে পড়ছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীরা। বেশির ভাগ জায়গায় তারা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাধা ও হামলার মুখে পড়ছেন। কোনো কোনো জায়গায় সরাসরি বাধা দিচ্ছে পুলিশ। গতকাল প্রচারণা চালানোর সময় হামলার শিকার হয়েছেন ঢাকা-৮ আসনের বিএনপি প্রার্থী মির্জা আব্বাস। শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কৃষি মার্কেট এলাকায় আনুষ্ঠানিক প্রচারণার আয়োজন করেছিলেন ঢাকা-১৩ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী আবদুস সালাম। কিন্তু পুলিশের বাধায় তিনি সেটা করতে পারেননি। বৃহস্পতিবার প্রচারণাকালে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের হামলার মুখে পড়েছিলেন ঢাকা-৯ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী আফরোজা আব্বাস। শুক্রবার তিনি মাদারটেক এলাকায় প্রচারণা শুরুর পর তার চারপাশে অবস্থান নেয় পুলিশ। একপর্যায়ে পুলিশের বাধার কারণে তিনি ছাদখোলা গাড়িতে চড়ে প্রচারণা শুরু করেন। কিন্তু পুলিশের দুইটি গাড়ি আফরোজা আব্বাসের গাড়িকে কোথাও দাঁড়াতে দিচ্ছিল না। একপর্যায়ে ছাত্রদল নেতা আক্তারকে গ্রেপ্তার করলে পুলিশের অতি তৎপরতার কারণে গণসংযোগ বন্ধ করে ফিরে যান আফরোজা আব্বাস। অন্যদিকে ওয়ারীতে এদিন গণসংযোগে বেরিয়েছিলেন ঢাকা-৬ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ও গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী। সেখানে তিনিও পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। তার দুইজন প্রচারকর্মীকে আটক করে পুলিশ। পরে তিনিও প্রচারণা বন্ধ করে ফিরে যান। এ ছাড়া ঢাকা-১৪ আসনে ফ্রন্টের প্রার্থী সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিকও ক্ষমতাসীনদের হামলার মুখে পড়েন। ওদিকে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের গাড়িবহরে হামলা চালিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা। শুক্রবার সকাল পৌনে ৯টায় শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষস্থানীয় নেতা আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না ও জগলুল হায়দার আফ্রিক তার গাড়িবহরে ছিলেন। হামলা ও ভাঙচুরের সময় আ স ম রবের গাড়িচালকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। বৃহস্পতিবার রাজধানীর উত্তরখানে ঢাকা-১৮ আসনের প্রার্থীর পক্ষে আনুষ্ঠানিক গণসংযোগের সূচনা করতে গিয়ে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের হামলার মুখে পড়েন ফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্না। ঢাকা-১২ আসনে প্রচারণায় বাধা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রার্থী জোনায়েদ শাকী। একই পরিস্থিতি ঢাকা মহানগরসহ দেশের বেশির ভাগ জেলার। এদিকে সিরাজগঞ্জে গণসংযোগের প্রস্তুতিকালে গতকাল সন্ধ্যার পর জেলা বিএনপি কার্যালয়ে হামলা চালায় ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা। তাদের ধাওয়া দিলে পুলিশ বিএনপি কর্মী-সমর্থকদের লাঠিচার্জ করে। এতে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। একপর্যায়ে পুলিশের ছোড়া গুলির স্প্লিন্টার বিদ্ধ হন জেলা বিএনপি সভাপতি ও সিরাজগঞ্জ-২ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী রুমানা মাহমুদসহ বিএনপি অঙ্গদলের অন্তত ২০ নেতাকর্মী। তার মধ্যে এক মহিলা নেত্রীর দুই চোখে স্প্লিন্টার বিদ্ধ হলে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে ঢাকা নিয়ে আসা হয়। এদিকে প্রচারণাকালে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও গাজীপুর জেলা সভাপতি ফজলুল হক মিলনকে আটক করে পুলিশ। তিনি গাজীপুর-৫ আসনের সাবেক এমপি এবং এবারও ধানের শীষের প্রার্থী। একইদিন প্রচারণা চলাকালে ঢাকা-১ আসনের প্রার্থী ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আশফাককে আটক করা হলেও পরে ছেড়ে দেয়া হয়। ইসিতে অভিযোগ জানিয়ে ফেরার পথে আহত হন ঢাকা-১৩ আসনের প্রার্থীর অন্যতম নির্বাচনী সমন্বয়ক। এছাড়া নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা, প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের পরও সমানতালে অব্যাহত রয়েছে পুলিশের গ্রেপ্তার অভিযান। ইতিমধ্যে বিএনপি জেলা, উপজেলা ও পৌরসভা ইউনিটের বিএনপি ও অঙ্গদলের অন্তত ৭০০ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এদিকে বিএনপির তরফে ইতিমধ্যে গণমাধ্যমের কাছে পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনেও লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। প্রার্থীর পক্ষে অনেক জেলায় পুলিশের বিপক্ষে বিএনপি নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেপ্তার ও গণসংযোগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ দেয়া হয়েছে স্থানীয় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে। সারা দেশে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের প্রচারণায় সরকারি দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি পুলিশ প্রতিবন্ধকতার তৈরি করছে বলে ইসির কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ইসি কার্যালয়ে গিয়ে দলের পক্ষে এ অভিযোগ দেন। পরে আলাল সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি দলের প্রার্থীরা পুলিশ প্রটোকলে প্রচার কাজ চালাচ্ছেন। বিপরীতে বিএনপির প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের নামে মামলা দেয়া হচ্ছে। গ্রেপ্তার করছে, পেটানো হচ্ছে। যেন ভোটে বিএনপির প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ নয়, পুলিশ। আমরা এ অভিযোগ জানাতে এসেছিলাম, কিন্তু আমাদের ২৫ মিনিট বসিয়ে রেখেও সাক্ষাৎ করলেন না কোনো নির্বাচন কমিশনার। এতেই বোঝা যায়, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কি হাল! তারপরও আমরা কমিশনে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছি।
এদিকে রাজধানীর ফকিরাপুল প্রেস পাড়ায় কয়েকদিন ধরে নিয়মিত হানা দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। তারা বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থীদের ছাপানো পোস্টার ও লিফলেট ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির প্রার্থীদের পোস্টার না ছাপতে প্রেস মালিকদের ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে ঝিনাইদহ-৪ আসনের বিএনপি দলীয় প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ফিরোজের পোস্টার ও লিফলেট নিতে ফকিরাপুল প্রেসপাড়ার ঝর্ণা প্রিন্টার্সে গিয়েছিলেন ছাত্রদলের শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক আবুু ফায়সাল জিহাদ। তিনি জানান, ৩০ হাজার পোস্টার ও ১ লাখ লিফলেট কার্টুনে করে ঝিনাইদহে নেয়ার জন্য মিনি ট্রাকে তোলা হচ্ছিল। রাত সোয়া ১০টার দিকে হঠাৎ করেই যুবলীগ-ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী সেখানে আসেন। তারা পোস্টার ও লিফলেট ভর্তি মিনি ট্রাকটি দখলে নেন। তারপর ঝর্ণা প্রিন্টার্সসহ আশপাশের প্রেসে হানা দিয়ে বিভিন্ন এলাকার বিএনপিদলীয় প্রার্থীর হাজার হাজার পোস্টার-লিফলেট জোর করে তুলে মিনি ট্রাকসহ নিয়ে যায়। ওদিকে ঢাকা-১৫ আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমানের নির্বাচনী পোস্টার ছিনতাই ও তাঁর প্রচারকর্মীদের মারধর করেছেন ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা। এ ব্যাপারে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে তাঁর পক্ষে লিখিত অভিযোগে বলা হয়, বুধবার প্রচারকাজ চালানোর সময় ইটখোলা বাজারের কাছে প্রচারকর্মী মো. মোরসালিন ও সিএনজিচালক সোহেল মিয়াকে মারধর করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরে তাদের কাফরুল থানা পুলিশের হেফাজতে দেয়া হয়। একই দিনে মণিপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয় গেট থেকে ১ হাজার ৭০০ পোস্টার বহনকারী ভ্যানটি ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status