এক্সক্লুসিভ

নির্বাচন থেকে সরে যাবে না ঐক্যফ্রন্ট: ব্যারিস্টার মওদুদ

স্টাফ রিপোর্টার, নোয়াখালী থেকে

১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, রবিবার, ৮:৩১ পূর্বাহ্ন

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছেন, এ সরকারের জনসমর্থন নেই, তাই তারা এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আমি আমার নিজ নির্বাচনী এলাকায় অবরুদ্ধ। আমার মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। কোথাও ধানের শীষের পোস্টার নেই, মাইকিং নেই, হামলা ও পুলিশি গ্রেপ্তারের ভয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এটা শুধু আমার এলাকায় নয় এটা সারা দেশে একই চিত্র। অপরদিকে, আওয়ামী লীগের হেলমেট বাহিনী হোন্ডা নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় মহড়া দিচ্ছে, কিন্তু সেগুলো প্রশাসনের নজরে পড়ছে না। তিনি বলেন, আমরা সব দল হাজারো প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমাদের বলা হয়েছে, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা। কিন্তু বাস্তবে আমরা দেখতে পাচ্ছি, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন ও সিভিল প্রশাসন সম্পূর্ণরূপে সরকারের নিয়ন্ত্রণে। ফলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন কঠিন হয়ে পড়েছে। নোয়াখালীর ৬টি আসনে ধানের শীষের প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারছে না। বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে প্রচার মাইক, প্রচার গাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে। গত তিনদিনে আমার নিজ এলাকায় ২শ’ নেতাকর্মী আহত হয়েছে। কয়েকটি গায়েবি মামলা করা হয়েছে। সরকার যত অপকৌশলই করুক না কেন, নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ফাঁদে পা দেবে না ঐক্যফ্রন্ট। বাংলাদেশের নির্বাচনে ন্যূনতম কোনো পরিবেশ নাই। তবুও আমরা এখন পর্যন্ত টিকে আছি। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বিশ্বাস করে হাজারো প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেই। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে আমাদের প্রতি অত্যাচার ও নির্যাতনের মাত্রা তীব্রতর করেছে সরকার। পুলিশ, সিভিল প্রশাসন সরকারের নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। জনগণের মৌলিক অধিকার হরণ করা হয়েছে। গত তিনদিনে ২শ’ নেতাকর্মীকে আহত করা হয়েছে। ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির প্রচারণার মাইক ভেঙে ফেলা হয়েছে। আমার নির্বাচনী এলাকায় মন্ত্রী এবং এমপি নেতাকর্মী, সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের নির্দেশ দিয়েছে যেখানেই মওদুদ সেখানে প্রতিহত কর। পার্শ্ববর্তী উপজেলা সোনাগাজী-দাগনভূইয়া থেকে মুখোশ পরা হেলমেট মাথায় ভাড়াটিয়া গুন্ডারা সারাদিন নির্বাচনী এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এটাই বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচন যে নির্বাচনে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারে সরকার বা নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এটি নির্বাচনী উৎসব নয় জাতীয় ট্র্যাজেডি। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারছি না। তিনি গতকাল সকালে নোয়াখালী আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে জেলা বিএনপি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন। এ সময় নোয়াখালী ৬টি সংসদীয় আসনের বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী- বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, জয়নাল আবেদীন ফারুক, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ফজলুল আজিম উপস্থিত ছিলেন। মওদুদ আরো বলেন, আমাদের বিশ্বাস ছিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের জেলায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু মন্ত্রী নিজেই সব প্রটোকল নিয়ে নির্বাচনী গণসংযোগ করে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নোয়াখালী এওজবালিয়া ইউনিয়নে উঠান বৈঠকে কুখ্যাত সন্ত্রাসী ও সরকার দলীয় ক্যাডার ডাকাত ফেরদৌস, ডাকাত জসিম ও ডাকাত সুমনের নেতৃত্বে ৫০-৬০ জনের সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী ভয়ঙ্কর অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে উক্ত উঠান বৈঠকে গোলাগুলি করে ও ঘটনাস্থলে সদর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রিজভীর বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয় সন্ত্রাসীরা এবং ঘটনাস্থলে সরকার দলের সন্ত্রাসীদের এলোপাথাড়ি আক্রমণ ও গোলাগুলিতে একজন নিহত হয়। সরকার দলীয় সন্ত্রাসীদের আক্রমণে বিএনপির প্রায় ৬০-৭০ জন নেতাকর্মী আহত হয়। নিজেরা যুবলীগ নেতা হানিফকে হত্যা করে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা করেছে। মামলায় আসামি করা হয়েছে ৭ বছর আগে মারা যাওয়া তারেক কন্ট্রাক্টর এবং গত তিনবছর থেকে কাতার প্রবাসী মো. হারুনকে ও আমার পুত্র আবু ছালেহ মো. আবদুল্লাহ সবুজসহ সদর-সুবর্ণচর-কোম্পানীগঞ্জ ৩৬৭ জনকে আসামি করে নির্বাচন থেকে নেতৃত্ব শূন্য করতে পুলিশ দিয়ে গণ হয়রানি চালাচ্ছে। এ ভুয়া গায়েবি মামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকা সত্ত্বেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি। নির্বাচন কমিশন ও সরকারের কর্মকাণ্ড যেভাবে দেখছি এতে মনে হয় আগামী ৩০শে ডিসেম্বর একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কোনোভাবেই অনুষ্ঠিত হবে না। নির্বাচনী মাঠে নামার পর সরকার বুঝে ফেলেছে তাদের অবস্থা ভালো নয়। তাই তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছে প্রশাসনের সহযোগিতায়। তথ্য দিয়ে নোয়াখালীর ৬ আসনের চিত্র তুলে ধরেন। সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপি সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট জাকারিয়া, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমানসহ দলের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status