বাংলারজমিন

গাঁও-গেরামের ভোটের মাঠ কাটছে না শঙ্কা

ইমাদ উদ দীন, মৌলভীবাজার থেকে

১৬ ডিসেম্বর ২০১৮, রবিবার, ৮:২৪ পূর্বাহ্ন

ভোটের দিনক্ষণ ঠিকঠাক। চলছে প্রচার প্রচারণাও। সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই বদলাচ্ছে ভোটের মাঠ। তারপরও প্রার্থীদের মতো সরব হচ্ছেন না ভোটার। গাঁও-গেরামে ভোট নিয়ে উৎসবের আমেজ এখন অনেকটাই অনুপস্থিত। বরং নীরব ভোটারদের নিরাপদ ভোট দেয়া নিয়ে যতসব সরব জল্পনা-কল্পনা। মুখ খুলে জোরে সুরে আলোচনা নেই ভোটের। এমন দৃশ্য গাঁও-গেরামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভয়ভীতি আর উদ্বেগ উৎকণ্ঠার শেষ নেই। এখন গ্রাম ও শহরের মানুষের মাঝে ভোট নিয়ে নীরবে বইছে নানা প্রশ্ন আর কৌতূহল। ভোট কি আদৌও হবে। হলে কতটুকু অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। ভোটের দিন ভোট কেন্দ্রগুলোতে দাঙ্গা ফাসাদ খুন খারাবি কিংবা কেন্দ্র দখলের মতো বিশৃঙ্খলা হবে কি না। প্রশাসনের ভূমিকা কেমন হবে এমন নানা প্রশ্ন ঘুর পাক খায় ভোটারদের কাছে। এমন সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর না পাওয়ায় ভোট নিয়ে উৎসবের চাইতে ভয় ও আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনটি বলছেন গ্রাম এলাকার ভোটাররা। গতকাল বিকালে কুলাউড়ার ব্রাহ্মণবাজার এলাকার একটি ধান ক্ষেতের মাঠে কথা হয় কৃষক মন্তাজ মিয়া, শরিফ মিয়া, রমিজ মিয়া, রাজন মিয়া, হরিপদ মালাকারসহ অনেকেরই সাথে। তারা আমন ধান কাটতে কাটতে জানালেন ভোট আইছে শুনছি কিন্তু আগের দিনের মতো ভোটের সেই আমেজ নেই। ভোট মানেই উৎসব-উদ্দীপনা ছিল। কিন্তু এবারের ভোটে সেই পুরনো আমেজ দেখতে পাচ্ছি না। ভোটের দিন ঘনিয়ে এলেও গ্রাম এলাকায় এখনো দেখা মিলছে না উৎসব কিংবা আমেজের। উল্টো ভোট নিয়ে ভয়ভীতি ছড়াচ্ছে। ভোট নিয়ে অজানা শঙ্কায় স্থানীয় ভোটাররা। তাই ভোট নিয়ে তাদের তেমন আগ্রহ নেই। তারপরও তারা ভোটের দিন পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে ভোট দিতে যাবেন। এমনটি জানালেন তারা। কমলগঞ্জ উপজলার আদমপুর ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের সবজিচাষি বারেক মিয়া, আয়েজ আলী, মন্টু মিয়া, জমির মিয়া, সুরুজ আলীসহ অনেকেই জানালেন আগের দিনের মত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা তাদের চোখে পড়ছে কম। একপক্ষ প্রচারণা আগে থেকে শুরু করলেও অন্যপক্ষ সে সুযোগ পাচ্ছেন কম। মামলা-হামলার ভয় থাকায় অনেক নেতাকর্মী আগেই থেকেই মাঠে নেই। এখনো গায়েবি মামলার ভয়ে বাড়ি ছাড়া। তারা বলেন, এমপি ভোট দিয়ে কী হবে গেল ৫ বছরেও তো এলাকার রাস্তাঘাটের উন্নয়ন পাইলাম না। নদীভাঙনে ক্ষতি হলো কই সরকারি তরফে তো তেমন সাড়া পেলাম না। এই মারামারি করি ভোট কারে দিতাম। জেলার ৪টি সংসদীয় আসনের ৭টি উপজেলায় ঘুরে দেখা গেল শহর এলাকায় ভোটের হাওয়া সরগরম থাকলেও উল্টোদৃশ্য গ্রাম এলাকার। ভোট নিয়ে ভয়ভীতি থাকায় তারা আমন ধান ঘরে তোলা আর ক্ষেত খামার নিয়েই বেশি ব্যস্ত। নিরাপদ থাকার কৌশলে তারা কোনো প্রার্থীরই পক্ষে কথা বলছেন না। এমনকি ভোট নিয়েও তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। মৌলভীবাজার জেলার ৭টি উপজেলা ৫টি পৌরসভা ও ৬৭টি ইউনিয়ন নিয়ে ৪টি সংসদীয় আসন। এই ৪টি আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ১৩,০৪০,৬৩ জন। ৪টি আসনে মোট ১৯ জন প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছেন।
প্রবাসী ও পর্যটন অঞ্চল হিসেবে এ জেলার রয়েছে ঐতিহ্য। চা, আগর, রাবার বাগান আর হাকালুকি হাওরের জন্য বিখ্যাত এ জেলাটি নজর কাড়ে দেশবাসীর।
ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে এখানে চা শ্রমিকের পাশাপাশি নদী ও হাওর পাড়ের কৃষি ও মৎস্যজীবীদের ভোটের সময় রয়েছে আলাদা কদর ও মর্যাদা। বরাবরই তাদের ভোটেই পাল্টে যায় জয়-পরাজয়ের হিসাব-নিকাশ।
 তাই ভোটের মাঠে প্রার্থীদের কাছে রয়েছে তাদের গুরুত্ব ও কদর। অথচ সেই তৃণমূলের ভোটারদের এবারকার ভোট নিয়ে আগ্রহের দেখা মিলছে কম। কারণ এখনো পর্যন্ত তারা পাচ্ছেন না ভোটের সেই আমেজ কিংবা পরিবেশ। তাদের মতো গায়েবি মামলা নিয়ে বিএনপি ও ঐক্যফন্টের প্রার্থী ও তাদের নেতাকর্মীরা চরম উদ্বিগ্ন। নির্বাচনের আর হাতেগুনা ক’দিন তারপরও পুলিশ তাদের বাসা বাড়িতে তল্লাশি করছে। বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে। নানা ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। এমন অভিযোগ করে তা বন্ধ ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের দাবিতে জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও ঐক্যফন্ট মনোনীত মৌলভীবাজার-৩ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী এম. নাসের রহমান মৌলভীবাজার প্রেস ক্লাবে সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করেন। সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয় এপর্যন্ত ঐক্যফন্টের ২৪ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। একই অভিযোগ জেলার অন্য ৩টি আসনের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীদের। ভোটারাও বলছেন ২০১৪ সালের ভোট স্মরণে এখন কাটছে না তাদের ভয়ভীতি। শান্তিপূর্ণ ভোট অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে তাদের যত ভয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে হাটে মাঠে ঘাটে এজেলার ভোটারদের সঙ্গে আলাপে এমনটিই আভাস দিচ্ছেন তারা। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন রক্ষায় তারা সবাই অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও সবদলের অংশগ্রহণের নির্বাচন চান। দীর্ঘদিন পর আসা জাতীয় নির্বাচনে যেন নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে নিজের পচন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন এখন এই নিশ্চয়তা চান গাঁও-গেরামের ভোটাররা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status