দেশ বিদেশ

‘সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে’

কূটনৈতিক রিপোর্টার

১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, শনিবার, ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন

সর্বদলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে হবে। দেশকে হতে হবে বিনিয়োগবান্ধব। একই সঙ্গে স্বাধীনতার চেতনা অক্ষুণœ রেখে গড়ে তুলতে হবে একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। সম্প্রতি ডয়চে ভেলে আয়োজিত টক শোতে এমনই সব প্রত্যাশার কথা উঠে এসেছে। ৩০শে ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের জনগণের পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের উন্মাদনাও কম নয়। তারই জের ধরে ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগ আয়োজন করেছিল বিশেষ টক শো’র। ‘কেমন বাংলাদেশ আমি দেখতে চাই’ শীর্ষক এই আলোচনাটি জার্মানির বন শহরে অবস্থিত ডয়চে ভেলের প্রধান কার্যালয় থেকে ফেসবুকে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এতে অংশ নেন আওয়ামী লীগের প্রবাসী রাজনীতিক বশিরুল আলম চৌধুরী, বিএনপির রাজনীতিক মোস্তাক খান, জার্মান রাজনৈতিক দল গ্রিন পার্টির সক্রিয় সদস্য শাহাবুদ্দিন মিয়া, প্রবাসী সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট শরাফ আহমেদ এবং গবেষক তন্বী নওশিন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে এই আলোচনায় যোগ দেন ক্যানসার গবেষক ড. গোলাম আবু জাকারিয়া এবং প্রকৌশলী মোনাজ হক। এতে জার্মানির বিভিন্ন শহরে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা যেমন যোগ দেন, তেমনি বাংলাদেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শকরা যোগ দেন ফেসবুক কমেন্টের মাধ্যমে। সেখানে স্বাগত বক্তব্যে ডয়চে ভেলের মুখপাত্র ক্রিস্টফ ইউম্পেল্ট বলেন, এই নির্বাচনটি বাংলাদেশের জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর আগের নির্বাচনে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছিল না। কিন্তু এবারে তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছে। অন্যান্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মতো ডয়চে ভেলেও এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করছে। তার প্রত্যাশা, এই নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশে গুম খুন বন্ধ হবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। তার কথায়, ডয়চে ভেলে সবসময় বাকস্বাধীনতার পক্ষে। বাংলাদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক ও বাকস্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ অধিকার পাক এমনটাই প্রত্যাশা তার। তিনি বলেন, বিশ্বখ্যাত বাংলাদেশি আলোকচিত্রী শহিদুল আলম যেন অচিরেই তার বিরুদ্ধে চলমান মামলা থেকে অব্যাহতি পান। জামিনে মুক্ত রয়েছেন তিনি, কিন্তু মামলা চলমান। তাই এটি একেবারেই প্রত্যাহারের অনুরোধ জানান তিনি।

সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই প্রত্যাশা...
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক অনুপম দেব কানুনজ্ঞ আলোচনা শুরু করেন নির্বাচন নিয়ে। নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ কী অবস্থায় আছে – এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রবাসী রাজনীতিক ও জার্মান আওয়ামী লীগের প্রেসিডেন্ট বশিরুল আলম চৌধুরী বলেন, আমার মতে সবার সমান অধিকার নিশ্চত করাটাই ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ এবং আওয়ামী লীগ সরকার ইতোমধ্যে সেটা করতে সক্ষম হয়েছে। নির্বাচনে সর্বদলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার মনে হয় রাজনৈতিক সমতা বিরাজ করছে নির্বাচনী আবহে। তবে ওই বক্তব্যের সঙ্গে পুরোপুরি দ্বিমত পোষণ করেন বিএনপির রাজনীতিক মোস্তাক খান। তিনি বলেন, মনোনয়ন দাখিলের পর ১৯৭২ জন গ্রেপ্তারসহ নানা জটিলতার মুখোমুখি বিএনপি। এদিকে পল্টনে বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে আওয়ামী লীগ নির্বাচনপূর্ব সহিংসতার সৃষ্টি করেছে ষড়যন্ত্র করে। নির্বাচন কমিশনে মনোনয়ন নিতে এসে লাশ হয়েও ফিরতে হয়েছে বিএনপি নেতাকে। তাই এই নির্বাচনী পরিবেশকে তিনি ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ বলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। এ সময় দর্শকের আসনে থাকা বিএনপির একজন সমর্থকও বলেন, বিএনপির শক্তি তার ভোটার এবং নির্বাচন স্বচ্ছ হলে এটি প্রমাণিত হবে। জার্মান রাজনৈতিক দল গ্রিন পার্টি বা সবুজ দলের সক্রিয় সদস্য শাহাবুদ্দিন মিয়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন কীভাবে আসতে পারে তা নিয়ে প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। বলেন, বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে আর গণতন্ত্র হচ্ছে সেটাই- যখন জনগণ নির্বাচনে স্বচ্ছভাবে ভোট দিতে পারে।  তিনি জার্মান গণতন্ত্রের কথা উল্লেখ করে বলেন, এখানে জনসমর্থনের ভিত্তিতে সরকার গঠিত হয়। তাই বাংলাদেশের নির্বাচনেও তিনি এমনটা প্রত্যাশা করেন। অনুষ্ঠানে প্রবাসী সাংবাদিক ও অ্যাক্টিভিস্ট সরাফ আহমেদ বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে দেশের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হচ্ছে। সবার অংশগ্রহণটাকেই বড় করে দেখছেন তিনি। এই নির্বাচনকে ভীষণ ইতিবাচক বলে আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, সবাই অংশ নিচ্ছে এটাই গণতন্ত্র। তিনি আশা প্রকাশ করে বাংলাদেশে এটি অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে প্রবাসী গবেষক তন্বী নওশিনের কথায় উঠে আসে সারা বিশ্বের গণতান্ত্রিক সংকটের প্রসঙ্গ। তিনি বলেন, বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে সুন্দরবন, কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন হয়েছে। তবে এখানে এইসব আন্দোলন নীতিনির্ধারক পর্যায়ে পরিবর্তন আনতে পারেনি। রাজপথেই শেষ হয়েছে বা চলছে। তবে গণজাগরণ মঞ্চের যে আন্দোলন ছিল, সেটিকে সফল বলে অভিহিত করে তন্বী আওয়ামী লীগ সরকারকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে ধন্যবাদ জানান। একইসঙ্গে পরবর্তীকালে ধর্মীয় আবেগ ব্যবহার করে যে রাজনৈতিক কৌশল করছে এই সরকার, তা নিয়ে আক্ষেপ করেন তিনি।

নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাওয়া প্রসঙ্গে বশিরুল আলম বলেন, আওয়ামী লীগ তার আদর্শ থেকে বিচ্যুত হবে না। বরং তারা এই আদর্শের জের ধরেই ধর্মনিরপেক্ষ ও বিদ্বেষহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখে। আদর্শ বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যেই তারা কাজ করে আসছে। এ সময় দর্শকদের মধ্য থেকে প্রবাসী রাজনীতিক ইউনুস খান আওয়ামী লীগ সরকারকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার যেভাবে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও অন্যান্য সংকট মোকাবিলা করছে, তা নিঃসন্দেহে সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। ওই আলাপের জের ধরে বিএনপির নেতা মোস্তাক খান বলেন, ঐক্যফন্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে বিএনপি নির্বাচন করছে, এটি দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পরিকল্পনা। অন্যায়ভাবে কারাবন্দি হওয়ার আগেই তিনি দলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ঐক্য করার এবং দল সেই পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। স্বচ্ছ নির্বাচন হলে জনগণই জবাব দেবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি। এদিকে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেন সরাফ আহমেদ। তার মতে, স্বাধীনতার মূল দাবি ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ। কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে জোট করে বিএনপি আওয়ামী লীগ হেফাজতের সঙ্গে জোট করে ওই দাবির সঙ্গে আপস করছে! অবশ্য সরাফ আহমেদের বক্তব্যের জবাব দেন আওয়ামী লীগের বশিরুল আলম। বলেন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে, জামায়াত সরাসরি অংশ নিতে পারছে না নির্বাচনে। জামায়াতের বিচারও করবে আওয়ামী লীগ সরকার। তবে তিনি বলেন, মাথায় রাখতে হবে আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল, বিচারিক আদালত নয়। বিচারের দায়িত্ব আদালতের। এ সময় দর্শকদের পক্ষ থেকে প্রবাসী বাংলাদেশি বন্যা ফেরদৌস দেশ এগিয়ে নিয়ে যেতে রাজনৈতিক স্বার্থে ছাড়ের দাবি জানান। বাংলাদেশে মৌলবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে মন্তব্য করে জার্মানিতে আশ্রয় নেয়া ব্লগার পৃথু সান্যাল বলেন, আমরা এমন ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ চাই যেখানে অভিজিৎরা খুন হবে না।


   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status