এক্সক্লুসিভ

সিলেট-২

এহিয়াকে চ্যালেঞ্জ মুহিব ও এনামের

ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে

১৫ ডিসেম্বর ২০১৮, শনিবার, ৯:৫৭ পূর্বাহ্ন

আওয়ামী লীগ নেতা মুহিবুর রহমান ও ড. এনামুল হক সর্দারে চিন্তিত সিলেট-২ আসনের মহাজোট প্রার্থী ও বর্তমান এমপি ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়া। প্রাথমিক বাছাইয়ে তাদের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনে আপিলেও তারা টিকেন নি। অবশেষে উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রার্থিতা ফিরে পান মুহিব ও এনামুল। এই দুই প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগের ভোট ব্যাংক রয়েছে। তারা মাঠে থাকায় কঠিন সমীকরণে পড়েছেন মহাজোট প্রার্থী এহিয়া। এই দুই প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগের বিবদমান দুটি অংশের নেতারা বিভক্ত। এর মধ্যে মুহিবুর রহমান হচ্ছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান গ্রুপের সিনিয়র নেতা। আর ড. এনামুল হক সর্দার হচ্ছেন এ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন।
সিলেট-২ (ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ) আসনে লুনার প্রার্থিতা স্থগিত করিয়েও স্বস্তিতে নেই মহাজোট প্রার্থী ও বর্তমান জাতীয় পার্টির এমপি এহিয়া চৌধুরী। আইনি লড়াইয়ের মাঠে টিকে গেলেন মুহিব ও এনামুল। মুহিবুর রহমান ২০১৪ সালের নির্বাচনেও ছাড় দেননি তখনকার মহাজোট প্রার্থী এহিয়াকে। শেষ পর্যন্ত মুহিবের সঙ্গে লড়াই করে জয়ী হতে হয়েছিল এহিয়াকে। বিগত নির্বাচনের পর দীর্ঘদিন যুক্তরাজ্যে ছিলেন বিশ্বনাথ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান। সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি সম্প্রতি লন্ডন থেকে সিলেটে আসেন। দেশে এসেই তিনি নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। স্বতস্ত্র হিসেবে মনোনয়ন দাখিলের পর রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে সেটি বাতিল হয়ে যায়।
পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতেও তার আবেদন টিকেনি। অবশেষে প্রতীক বরাদ্দের পর হাইকোর্ট থেকে রায় নিয়ে এসে প্রার্থিতা ফিরে পান মুহিবুর রহমান। তিনি এখন ভোটের মাঠে সক্রিয়। মুহিবুর রহমান চূড়ান্ত প্রার্থিতা টিকে যাওয়ার পর সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমানের কাছ থেকে দোয়া নিয়ে প্রচারণায় নেমেছেন। মুহিবুর রহমানের সঙ্গে বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগরে একাট্টা রয়েছেন আওয়ামী লীগের ওই অংশের নেতারা। সিলেট-২ আসনে এবার আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। দুইজন কেন্দ্রে তীব্র প্রতিযোগিতা গড়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এ আসনে প্রার্থী হিসেবে মহাজোট প্রার্থী এহিয়া চৌধুরীকে ছাড় দেয়। ফলে দ্বিতীয়বারের মতো এ আসনের মানুষ নৌকা বঞ্চিত হলেন।
এদিকে, জৈন্তাপুরের একটি কলেজের প্রিন্সিপাল ড. এনামুল হক সর্দার। তিনি বিগত জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি কলেজ থেকে দুইমাসের ছুটি নিয়ে এসে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। এনামুল হক সর্দারের মনোনয়ন প্রাথমিক বাছাইয়ে বাতিল হওয়ার পর তিনি আইনি লড়াই চালিয়ে আবার প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে মাঠে সক্রিয়। তিনি সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন। এ নির্বাচনে তার প্রার্থী হওয়ার পেছনে শফিকুর রহমান চৌধুরীর মৌন সমর্থন রয়েছে বলে মনে করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। সিলেট-২ আসনের আওয়ামী লীগের শফিকুর রহমান চৌধুরী বলয়ের নেতাকর্মীরা এনামুল হক সর্দারের পক্ষে মাঠে ভোট প্রচারণায় সক্রিয় রয়েছেন বলে জানান তারা।
নির্বাচন ঘনিয়ে এলেও এখনো মহাজোটের পক্ষে সিলেট-২ আসনে ভোট প্রচারণায় নামেনি আওয়ামী লীগ। শফিকুর রহমান চৌধুরী ও আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী দুইজনই নীরব ভূমিকা পালন করছেন। ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে এহিয়ার পক্ষে মাঠে সক্রিয় ছিলেন শফিকুর রহমান চৌধুরী। এ কারণে ওই সময় মহাজোট প্রার্থীর বিজয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেন শফিুকর রহমান চৌধুরী। কিন্তু শফিকুর রহমান চৌধুরী নামছেন না। এর কারণ হিসেবে শফিকুর রহমান চৌধুরী বলয়ের নেতারা জানিয়েছেন, নির্বাচন জয়লাভ করার পর শফিকুর রহমান চৌধুরীকে প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত করেছেন এমপি এহিয়া। কখনো কখনো হয়েছেন মুখোমুখি। এ নিয়ে বিব্রত অবস্থায় পড়েন শফিকুর রহমান চৌধুরী। এ কারণে এ নির্বাচনে তিনি সক্রিয় হচ্ছেন না। মনোনয়ন জমাদানের দিন এমপি এহিয়া আওয়ামী লীগের জেলার সম্পাদক শফিকুর রহমান চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলতে চাইলেও সাড়া দেননি তিনি। আর দেশে থাকলেও এহিয়া এখনো সিলেট-২ আসনে লাঙ্গলের পক্ষে প্রচারণায় নামেন নি। একই সঙ্গে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও রয়েছেন নীরব। তিনিও মাঠে সক্রিয় হচ্ছে না।
সিলেট-২ আসনের মহাজোট প্রার্থী ও জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপি ইয়াহহিয়া চৌধুরী এহিয়া এবার ভোট করছেন তাদের দলীয় প্রতীক নিয়ে। তিনি গতকাল মানবজমিনকে জানিয়েছেন, এই আসনে আমি মহাজোট প্রার্থী হওয়ায় সবাই আমার সঙ্গে রয়েছে। যারা এখনো মাঠে নামেননি তারা খুব শিগগিরই প্রচারণায় নামবেন বলে জানান। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের তরফ থেকে এখনো মুখ খুলে কিছু বলা হচ্ছে না। পদবিধারী নেতারা আড়ালে থেকে বিদ্রোহী দুই প্রার্থীকে মদদ দিয়ে যাচ্ছেন। আর এতে করে সিলেটে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন এহিয়া চৌধুরী।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status