বিশ্বজমিন

সিপিজের প্রতিবেদন

বিশ্বজুড়ে ২৫১ জন সাংবাদিক জেলে, ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠ স্তব্ধ করার কৌশল

মানবজমিন ডেস্ক

১৩ ডিসেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১:৫২ পূর্বাহ্ন

টানা তিন বছরের মতো পেশাগত কাজের জন্য বিশ্বজুড়ে কমপক্ষে ২৫১ জন সাংবাদিক জেলে রয়েছেন। কর্তৃত্বপরায়ণ শাসকগোষ্ঠী ক্রমশ ভিন্ন মতাবলম্বীদের কণ্ঠকে স্তব্ধ করতে কৌশল হিসেবে বেছে নিচ্ছে জেল। সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বিপদজনক বিট হলো রাজনীতি। এর পরেই রয়েছে মানবাধিকার। সাংবাদিকদের অধিকার বিষয়ক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) প্রকাশিত এক বিশেষ প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে।
১৩ই ডিসেম্বর প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের ১লা ডিসেম্বর পর্যন্ত সিপিজে দেখতে পেয়েছে পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য ২৫১ জন সাংবাদিক জেলে রয়েছেন। গত বছর সাংবাদিকদের বেশি জেল দিয়েছে চীন, মিশর ও সৌদি আরব। স্থানীয় সাংবাদিকদের ওপর তারা চালিয়েছে তীব্র নিস্পেষণ। তৃতীয় বছরের মতো সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে বাজে জেলে পরিণত হয়েছে তুরস্ক। বিশ্বজুড়ে যখন মিডিয়াবিরোধী বাগাড়ম্বরতা চলছে তখন সিপিজে জরিপ চালিয়েছে। তাতে দেখা গেছে রাষ্ট্রবিরোধী অভিযোগে জেলে পাঠানো হয়েছে শতকরা ৭০ ভাগ সাংবাদিককে। আর মিথ্যা খবরের অজুহাতে জেল দেয়া হয়েছে ২৮ জন সাংবাদিককে। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা ছিল ৯ জন। জেলে নারী সাংবাদিকের সংখ্যাও বেড়েছে। বিশ্বজুড়ে ৩৩ জন নারী সাংবাদিক জেলে রয়েছেন। নারী অধিকার নিয়ে লেখার কারণে সৌদি আরবে জেলে রয়েছেন চার জন নারী সাংবাদিক। এ বছর চীনে জেলবন্দি সাংবাদিকের সার্বিক সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ, সেখানে সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় উইঘুরদের বিরুদ্ধে বেইজিং নিস্পেষণ চালাচ্ছে, তা নিয়ে রিপোর্ট করা।
সিপিজের নির্বাহী পরিচালক জোয়েল সিমন বলেন, বিশ্বজুড়ে গত কয়েক বছর সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যে ভয়াবহ নির্যাতন শুরু হয়েছে তা প্রশমনের কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সংবাদ লেখার কারণে বিশ্বজুড়ে ২৫১ জন সাংবাদিক জেলে আছেন এটা অগ্রহণযোগ্য। যেসব ক্ষমতাধর তাদেরকে সেন্সরশিপ আরোপের জন্য জেলকে ব্যবহার করছেন তাদেরকে ছেড়ে কথা বলা উচিত নয়। সিপিজে বিশ্বজুড়ে জেলে বন্দি সাংবাদিকদের ওপর পরিচালিত জরিপে এসব কথা তুলে এনেছে। এতে বলা হয়, সরকারি হেফাজতে যেসব সাংবাদিক রয়েছেন জরিপে শুধু তাদেরকে কথা বলা হয়েছে। তবে যারা নিখোঁজ হয়েছেন অথবা ‘নন স্টেট এক্টরস’দের হাতে বন্দি আছেন তাদেরকে এতে অঙ্গীভূত করা হয় নি। ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের হাতে বন্দি সাংবাদিক ও ইউক্রেনে রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাতে একজন ইউক্রেনিয়ান সাংবাদিককে ফেলা হয়েছে ‘নিখোঁজ’ অথবা ‘অপহৃত’র তালিকায়।
এ নিয়ে দীর্ঘ একটি প্রতিবেদন লিখেছেন এলানা বেইসার। এতে তিনি বলেছেন, মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের দায়ে সবচেয়ে বেশি সাংবাদিককে জেল দিয়েছে মিশর। সেখানে এ সংখ্যা ১৯। এর পরেই রয়েছে ক্যামেরন। সেখানে এ অভিযোগে জেল দেয়া হয়েছে চার জনকে। রোয়ান্ডায় তিন জনকে। চীনে ও মরক্কোতে একজন করে। চীনে জেলে রয়েছেন ৪৭ জন সাংবাদিক। কোনো অভিযোগ ছাড়াই সেখানে আটকে রাখা হয়েছে কমপক্ষে ১০ জন সাংবাদিককে। তারা সবাই সিনজিয়াংয়ের। জাতিসংঘ অভিযোগ করেছে, সেখানে ব্যাপক নজরদারি করছে বেইজিং এবং ১০ লাখের মতো মানুষকে বিচার ছাড়াই আটকে রেখেছে।
সৌদি আরব সবচেয়ে সমালোচিত হয়েছে ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট জামাল খাসোগি হত্যার ফলে। বলা হয়েছে, তারা দেশের ভিতরেও সাংবাদিকদের ওপর নিপীড়ন জোরালো করেছে। ১লা ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে কমপক্ষে ১৬ জন সাংবাদিক জেলে বন্দি। ওদিকে সৌদি আরবের কড়া সমালোচনা করলেও তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়্যিপ এরদোগানের নিজদেশের অবস্থা মোটেও ভাল নয়। অন্য কোনো দেশের চেয়ে তার সরকার অধিক সংখ্যক সাংবাদিককে জেলে পাঠানো অব্যাহত রেখেছে। আগের বছরের তুলনায় সেখানে সাংবাদিকদের জেলে দেয়ার সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। অনেক সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা চাইছেন প্রসিকিউটররা। অনেক সাংবাদিক জামিনে রয়েছেন। আবার কিছু সংখ্যক খালাস পেয়েছেন। টানা তিন বছরের মতো তুরস্কে যেসব সাংবাদিককে জেলে দেয়া হয়েছে তাদের সবার বিরুদ্ধে আনা হয়েছে রাষ্ট্র বিরোধী অভিযোগ।
সিপিজে বিশ্বাস করে, পেশাগত কাজের জন্য সাংবাদিকদের জেল দেয়া উচিত নয়। গত বছর তারা বিশ্বজুড়ে কমপক্ষে ৭৯ জন সাংবাদিককে মুক্ত করতে সহায়তা দিয়েছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status