দেশ বিদেশ

ঋণ দিলে খেলাপি হবেই: এবিবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

১৩ ডিসেম্বর ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১০:০৫ পূর্বাহ্ন

 ব্যাংকগুলোকে যাচাই-বাছাই করে ঋণ দেয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা (এমডি) বলেছেন, ভাত খাওয়ার সময় প্লেটের নিচে ভাত পড়ে যাওয়া যেমন স্বাভাবিক বিষয়, ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে খেলাপিও তেমনি একটা বিষয়। ঋণ দিলে কিছু খেলাপি হবে এটা স্বাভাবিক। এটা থাকবেই। কারণ আমরা ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করার সংস্কৃতিতে আছি। তাই যাচাই-বাছাই করে ঋণ দিতে হবে। কারণ আমানতের অর্থ ব্যাংকের নিজের নয় এটা জনগণের টাকা।
গতকাল রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। এতে ৩০টির বেশি ব্যাংকের এমডি উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সংলাপে ব্যাংক খাতের ২২ হাজার ৫০২ কোটি টাকা লোপাটের দেয়া তথ্য নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেন এমডিরা। তবে সিপিডির সংলাপের প্রতিক্রিয়া জানাতে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকেননি বলে জানান তারা। এটা কাকতালীয় হতে পারে। তবে বিজয়ের মাসের কারণে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
খাতভিত্তিক বিভিন্ন উন্নয়ন চিত্র তুলে ধরে কয়েকজন এমডি জানান, এখন দেশের জয়গাথা গাওয়ার সময় এসেছে। ব্যাংক খাতের যেসব খারাপ ঘটনা আছে, তা সংবেদনশীলভাবে দেখার সুযোগ আছে। ২০১৯ সাল দেশের অর্থনীতির জন্য বড় অর্জনের বছর হবে। এ সময়েই ব্যাংক খাত নিয়ে নানা ধরনের অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ব্যাংকের নির্বাহীদের মতে, দেশের অর্থনীতি অনেক বড় হয়েছে। জিডিপি, মাথাপিছু আয়সহ বেশিরভাগ সূচকেই আমরা উন্নতি করছি। এসব উন্নয়নের মূল ভূমিকা পালন করছে ব্যাংকিং খাত। তাই অর্থের জোগানের প্রধান এ খাতকে শক্তিশালী করতে শতভাগ কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হবে। দক্ষ জনশক্তি বাড়াতে হবে। আমাদের ঋণ প্রদানের প্রক্রিয়া আরো স্বচ্ছ করতে হবে। ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া ও সিকিউরিটি বাড়াতে হবে। ঝুঁকির ধরন বিভিন্ন সময় চেঞ্জ হয়। এটি সমন্বয় করতে হবে। আর্থিক খাতের উন্নয়ন প্রচার করতে এভাবে এমডিদের সংবাদ সম্মেলনে আসার ঘটনা এর আগে ঘটেনি বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান। সংবাদ সম্মেলনের শুরুতেই এবিবি সভাপতি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ১০ বছরের বিভিন্ন আর্থিক সূচকের উন্নতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এতে বড় অবদান রাখছে দেশের ব্যাংক খাত। আপনারা এর ভালো দিকগুলো তুলে ধরবেন। জনগণের কাছে ব্যাংক খাত নিয়ে শুধু খারাপ খবরই যায়। তিনি বলেন, আমরা কেউ ফেরেশতা না। ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে আমাদেরও ভুল থাকতে পারে। তবে সেটাকেই হাইলাইট কারাটা খুব দুঃখজনক। ব্যাংক খাতের অর্জনগুলোকেও জনগণের সামনে উপস্থাপন করার আহ্বান জানান তিনি। গণমাধ্যমকে উদ্দেশ্য করে এবিবির সভাপতি বলেন, গণমাধ্যম ব্যাংক খাতের সমালোচনা যেমন করে, তেমনি উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে। কিন্তু সংবাদকর্মীদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, আপনারা আমাদের সমালোচনা করবেন। কিন্তু শব্দ চয়নের ক্ষেত্রে একটু খেয়াল রাখবেন। কারণ পত্রিকার নেগেটিভ হেডলাইন দেখেই অনেকে আতঙ্কিত হয়। এ বিষয়ে একটু সচেতন হওয়া দরকার। তিনি বলেন, আমাদের চ্যালেঞ্জ আছে। এটি মোকাবিলা করেই এগিয়ে যেতে হবে। আমাদের যত বাধাই আসুক আমরা এগিয়ে যাব। সিডর, আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে এসেছি। তাই কোনো বাধা আমাদের পিছনে টেনে ধরে রাখতে পারবে না। এবিবির সভাপতি ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে এতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক ব্যাংক এশিয়ার এমডি মোহাম্মদ আরফান আলী, সোনালী ব্যাংকের এমডি ও সিইও ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, আইএফআইসি ব্যাংকের এমডি শাহ আলম সারওয়ার, ইসলামী ব্যাংকের এমডি মাহবুব উল আলম, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের এমডি আবুল কাশেম মো. শিরিন, অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ শামস-উল-ইসলাম, কৃষি ব্যাংকের আলী হোসেন প্রধানিয়া, ফারমার্স ব্যাংকের এমডি এহসান খসরু ও মেঘনা ব্যাংকের আদিল ইসলাম, সিটি ব্যাংকের এমডি সোহেল আর কে হোসাইন, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি আনিস এ খান, ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখারসহ বিভিন্ন ব্যাংকের এমডি ও প্রধান নির্বাহীরা। ঋণখেলাপি নিয়ে সোনালী ব্যাংকের এমডি ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, ভাত খাওয়ার সময় প্লেটের নিচে দুই/একটা ভাত পড়ে যাওয়া যেমন স্বাভাবিক বিষয়, ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে খেলাপিও তেমন। এটা স্বাভাবিক। এটা থাকবেই। কারণ ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করা আমাদের সংস্কৃতি। তিনি বলেন, দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং সব ক্ষেত্রেই আমরা এগিয়ে গেছি। কৃষি থেকে আমরা এখন শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এ অর্জন পরিবর্তনের প্রধান ভূমিকা পালন করছে ব্যাংকিং খাত। সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকার অনেক কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের অর্জনের কথা কেউ বলছে না।

সিপিডির তথ্য তুলে ধরে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি আনিস এ খান বলেন, ব্যাংকিং খাতের মধ্যে ৮ লাখ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাড়ে ২২ হাজার কোটি টাকা খারাপ হতেই পারে। এখন ভুল থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আমাদের কাজ হবে ভুল যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেই দিকে নজর রাখতে হবে। কারণ ব্যাংকের টাকা কোনো ব্যক্তির নয় এটি জনগণের টাকা। তিনি বলেন, ফ্যাক্টরি স্থাপন করে সঠিক সময়ে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ না পাওয়ায় উৎপাদনে যেতে পারে না অনেক প্রতিষ্ঠান। খেলাপি বাড়ার এটাও একটি অন্যতম কারণ বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ইস্টার্ন ব্যাংকের এমডি আলী রেজা ইফতেখার বলেন, ব্যাংকিং খাতে ঋণ বিতরণের ঝুঁকি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে আমাদের সক্ষমতা কতটুকু আছে এটাই দেখার বিষয়। আমরা যদি ঝুঁকিপূর্ণ ঋণকে (ছোট, মাঝারি ও বড়) তিন ভাগে ভাগ করি তাহলে দেখা যাবে, বর্তমানে ছোট আকারের ঝুঁকিপূর্ণ ঋণ মোকাবিলায় দেশের সব ব্যাংকের সক্ষমতা রয়েছে। আর মাঝারি আকারের ঝুঁকি মোকাবিলায় সক্ষম ৭০ শতাংশ ব্যাংক। তবে বড় ঝুঁকির ক্ষেত্রে সবাই সক্ষম নয়। খেলাপি ঋণ হওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকারদের চেয়ে ঋণ গ্রহীতারা বেশি দোষী উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সব কিছু দেখে ঋণ দিই, তারা ফেরত দেয় না। তাহলে দোষ কাদের? আর ব্যাংক খাতের খোয়া যাওয়া ২২ হাজার কোটি টাকার সমপ্রতি সিপিডি তথ্য পুরো সত্য নয় বলে জানান তিনি।
ব্যাংক এশিয়ার এমডি মোহাম্মদ আরফান আলী বলেন, এক সময় ব্যাংকিং খাতে ৯.৬১ শতাংশ সেবা বিনামূল্যে দেয়া হতো। বর্তমানে ৬৬ শতাংশ সেবা বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। বর্তমানে স্কুল ব্যাংকিং, ১০ টাকার হিসাব খোলা সব ক্ষেত্রে আমরা সফল। যার কারণে অর্থনীতি উন্নয়নে ব্যাংকের রোল মডেল পালন করছে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status