প্রথম পাতা

সেমিনারে বক্তারা

পরিস্থিতির উন্নতি না হলে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে

কূটনৈতিক রিপোর্টার

১২ ডিসেম্বর ২০১৮, বুধবার, ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন

রাজধানীতে এক সেমিনারে বক্তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আসন্ন ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচন ‘বিতর্কিত’ হিসাবে চিহ্নিত হবে। পরিস্থিতির জন্য তারা মোটা দাগে   
 নির্বাচন কমিশনকে দায়ী করেন। বলেন, নির্বাচন কমিশনের সাংবিধানিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তারা মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের পরিবেশ নিশ্চিত করতে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। তাদের আজ্ঞাবহ হওয়ার কথা নয় মন্তব্য করে অনেক বক্তা বলেন, প্রশাসনও পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মানুষকে হয়রানি করছে বিশেষ করে তারা বিরোধীদের দমনে ব্যস্ত। রাজধানীর ইস্কাটনের বিস মিলনায়তনে ‘মানুষ কী স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারবে? শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। গেস্ট অব অনার হিসেবে ছিলেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন ও সিজিএস-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম আতাউর রহমান।

সিজিএস-এর নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমানের সঞ্চালনায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুুন, এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক সচিব ও রাষ্ট্রদূত মো. ফজলুল করিম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, অধ্যাপক রাশেদ আলী মাহমুদ তিতুমীর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক শাহাব এনাম খান প্রমুখ বক্তৃতা করেন। মূল প্রবন্ধে সুজন সম্পাদক ড. মজুমদার বলেন, নির্বাচন অত্যাসন্ন। কিন্তু অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ এখনও অনুপস্থিত।

নির্বাচন কমিশন এখনও আস্থা অর্জন করতে পারেনি, তারা বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠার মতো কাজ করতে পারেনি। যদি ইসি’র এই অবস্থা থাকে, নির্বাচকে অবাধ করতে তারা যদি কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়, তা হলে এটি নিশ্চিত যে নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে প্রশ্ন ওঠবে। এটি বিতর্কের মধ্যে পড়বে। আর যদি সত্যি তা-ই হয় তাহলে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে ফের বঞ্চিত হবেন। দেশে এই প্রথম ক্ষমতাসীন দলের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিরোধিতা সত্ত্বেও বিরোধী জোট ও দলগুলো নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তারা নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে যে শঙ্কা বা ঘটনার কথা বলছে তা নিরসন করে নির্বাচনটিকে সুষ্ঠু করার দায়িত্ব সরকারের। নির্বাচন বিতর্কিত হলে তার পরিণতি অমঙ্গলজনক বলেও মন্তব্য করে নাগরিক সমাজের ওই প্রতিনিধি বলেন, এবারের নির্বাচনে প্রায় ২৫ শতাংশ তরুণ ভোটার আছেন। এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যেন তরুণরা হতাশ না হন। এরা একবার হতাশ হলে বিপথে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

সেমিনারে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, দেশের মানুষ ভোট দিতে চায় কিন্তু সরকার নির্বাচনটিকে বানচালের চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রাক্তন নির্বাচন কমিশনার ড. সাখাওয়াত হোসেন বিরোধীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, পরিস্থিতি যাই হোক আপনারা ভোট বয়কট করবেন না। নির্বাচনের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ‘হেলাফেলা’ করা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে এটি একটি ফান প্লেসে পরিণত হয়েছে। নির্বাচনটি কেমন হবে? নির্বাচন পূর্ব পরিস্থিতি তা বলে দেয় মন্তব্য করে সাবেক ওই নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইনস্টিটিউশনগুলোও নির্বাচনের গুরুত্ব বুঝতে পারছে না।

নির্বাচন কমিশন প্রার্থিতা বাতিল করে দেয় কিন্তু উচ্চ আদালতে অনেকে ফেরত পান। কারও নাম উল্লেখ না করে বিভিন্ন প্রার্থীর সমালোচনা করে ড. সাখাওয়াত বলেন, এমন প্রার্থী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন যারা মনোনয়ন ফরমে অতি জরুরি তথ্য দেননি। ওই নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বলেন ভোটগ্রহণ যেমন অবাধ হতে হবে, তেমনটি গণনাও ফেয়ার হতে হবে। নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনও তৈরি হয়নি অভিযোগ করে বিএনপি নেতা আলাল বলেন, বহাল থাকা সংসদ ও সরকারের অধীনে নির্বাচন হচ্ছে।

এ অবস্থায় নির্বাচনী মাঠ খানাখন্দে ভরা ভিন্নমতের মানুষের জন্য। আর সরকারিদলের জন্য সমতল। এই পরিস্থিতিতে অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচন প্রায় অসম্ভব। অবশ্য এর জবাব দেন আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। তিনি বলেন, আস্থা রাখার কারণ নষ্ট হওয়ার মতো কিছু হয়নি। সদিচ্ছা থাকতে হবে নির্বাচন করার। জনগণ যার সঙ্গে থাকবে তারাই জিতবে। নির্বাচন কমিশনকে ‘সম্পূর্ণ স্বাধীন’ দাবি করে তিনি বলেন, এখন সব কিছু তাদের অধীনে। তাই দায় ও দায়িত্বও তাদের।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status