শেষের পাতা

নারী প্রার্থীদের অঙ্গীকার

মরিয়ম চম্পা

১২ ডিসেম্বর ২০১৮, বুধবার, ১০:২৩ পূর্বাহ্ন

নির্বাচনী ডামাডোল চারদিকে। প্রতীক নিয়ে প্রার্থীরা এখন নির্বাচনী ময়দানে। ভোটারদের কাছে তাদের পক্ষে ভোট চাইছেন। একাদশ নির্বাচনে পুরুষ প্রার্থীদের পাশাপাশি সরাসরি ভোটে লড়ছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কমপক্ষে ৩৪ জন নারী। অন্যান্য দল থেকে তো রয়েছেই। এসব নারী প্রার্থীরা কী অঙ্গীকার নিয়ে হাজির হচ্ছেন ভোটারদের কাছে। নির্বাচনে জয়ী হলে ভোটারদের জন্য কী করবেন তারা? কথা হয় ক’জন নারী এমপি প্রার্থীর সঙ্গে। ঢাকা-১৮ আসনের প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেছেন, নির্বাচিত হয়ে আমার এলাকায় আরো  উন্নয়নমূলক কাজ করতে চাই। দলের নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাবো। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ে তুলবো। ক্ষুধামুক্ত এবং দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ে তুলতে চাই। অসম্পন্ন কাজগুলো সম্পন্ন করবো। বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়নে আমার নেত্রী বিশ্বাসী। নারীরা পুরুষের পাশাপাশি যেন আরো এগিয়ে যেতে পারে সে লক্ষ্যে কাজ করে যাবো।

শেরপুর-১ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া বেসরকারি মেডিকেল কলেজের লেকচারার ডা. সানসিলা জেবরিন প্রিয়াংকা বলেন, আমি শেরপুর-১ আসনের প্রার্থী। নির্বাচনে জয়ী হবো কি হবো না- সেটা মূল কথা নয়। আমার নির্বাচনটা মেইনলি কিছু লক্ষ্যের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমত দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তারেক জিয়াকে দেশে প্রত্যাবর্তন করা। সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা এবং ষড়যন্ত্রমূলক সাজানো গায়েবি মামলা বন্ধ করা। বিনা দোষে নির্যাতনের শিকার মানুষরা যেন মুক্তি পায়। গায়েবি হামলা-মামলা, গুম-খুন, অন্যায়-অত্যাচার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। বিচার বিভাগের কোনো স্বাধীনতা নাই। বাকস্বাধীনতা নাই। মূলত এই কয়টি বিষয়ের ওপর লক্ষ্য রেখেই নির্বাচনে আসা। আমাদের নির্বাচনটা মূলত আন্দোলনের একটি অংশ। অর্ধেকেরও বেশি মানুষ এখনো কারাগারে বন্দি। এর মধ্যে আমার আব্বুও আছেন। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে গায়েবি মামলায় গত ৩ মাস ধরে জেলে। শুধু আমার বাবা নয় দলের অনেক বড় বড় নেতা মিথ্যা মামলায় জেলে। আগামী নির্বাচনে ধানের শীষ অথবা নৌকা যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেনো সেটা কিন্তু আমাদের সবার মেনে নিতে হবে। পাশাপাশি আমাদের গণতন্ত্র রক্ষার অধিকার এবং স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের কিছু মৌলিক অধিকার সেটা যেন ফিরে পাই এটুকুই আমাদের চাওয়া। তিনি বলেন, তরুণরা সবসময় নতুনত্ব চায়। সেই হিসেবে আমি মনে হয় তাদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছি। নির্বাচিত হয়ে তরুণদের জন্য কর্মক্ষেত্র তৈরি করা। অর্থনৈতিক জোন বাড়ানো। নারী শিক্ষার হার ও তাদের ক্ষমতায়নে কাজ করে যাবো। এক্ষেত্রে আমি মনে করি তরুণদের শতভাগ সমর্থন আমি পাবো।

মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের প্রার্থী আওয়ামী লীগের এমপি ও সাবেক হুইপ সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, গত দশ বছরে আমার এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা, শিক্ষার মান এবং তাদের সেবার মান সবকিছু ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে যাচ্ছি। ২০০৯-এর আগের লৌহজং-টঙ্গিবাড়ি আর এখনকার টঙ্গিবাড়ি আকাশ পাতাল তফাৎ। আমার এলাকায় শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি। শিক্ষার মান সর্বনিম্ন পর্যায় থেকে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয়তে এনেছি। আমার স্বপ্ন আগামীতে আমার এলাকার মেয়েরা আরো বেশি স্বাবলম্বী হবে। নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে শিখবে। অর্থ ইনকাম করতে শিখবে। এ ব্যাপারে আমি বিশেষভাবে নজর দেবো। এলাকায় প্রতিটা স্কুলে কম্পিউটার ল্যাব আছে। পাশাপাশি প্রাইমারি স্কুল পর্যায় থেকে আইটি সেক্টরে প্রশিক্ষিত করতে চাই। ইভটিজিংয়ের শিকার মেয়েদের জন্য বিশেষ কাউন্সেলিং-এর ব্যবস্থা করতে চাই।

গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, আমি দুই টার্ম নির্বাচিত এমপি ছিলাম। এবার জনগণ যদি আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে তাহলে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা থাকবে আমার নির্বাচনী ইশতেহারকে সামনে রেখে। ইশতেহারে বলা হয়েছে গ্রামকে শহরে পরিণত করা হবে। আমার নির্বাচনী এলাকায় ইতিমধ্যে অনেক আধুনিকতার ছোঁয়া এসেছে। মানুষকে উন্নত জীবন দিতে হলে অবশ্যই এলাকার উন্নয়ন করতে হবে। আমি সবকিছুর ব্যাপারে সেভাবেই গুরুত্ব দেবো। দেশে অনেক মহিলাই সুবিধাবঞ্চিত। আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা নিজেও নারীদের বিষয়ে গুরুত্ব দেন। নারীদের জন্য আমি ইতিমধ্যে অনেক কাজ করেছি। এবারও নারীদের কীভাবে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করা যায় সেদিকে নজর দেবো। নির্বাচিত হয়ে আমার চমক থাকবে নারীদের জন্য জয়িতা মার্কেট। এবং তাদেরকে বিভিন্ন প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষিত করতে চাই।
ফরিদপুর-২ আসনের বিএনপির প্রার্থী এবং কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেছেন, মূলত একটি প্রতিকূল পরিবেশে বিএনপি নির্বাচনে যাচ্ছে। আমি নির্বাচিত হলে যেটা করতে চাই সেটা হলো এদেশে আবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা। এবং নির্বাচনে যে একটি জবরদখলের প্র্যাকটিস বা চর্চা শুরু হয়েছে সেটাকে পরিবর্তন করা। এটা আমাদের মেইন কাজ। বিশেষ করে আইনের শাসন যেটা বর্তমানে নেই সেটার দিকে নজর দেয়া। শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি কমিয়ে মেধার ভিত্তিতে জনবল নিয়োগ দেয়া। শিক্ষাখাতে প্রশ্নফাঁসের দুর্নীতি বন্ধ করা। রাজনীতিতে আরো বেশি নারীদের অংশগ্রহণে কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করতে চাই। ফরিদপুর-২ আসনে গত দশ বছরে তেমন কোনো কাজ হয় নি। তাই যা করবো তাই চমক হবে। নির্বাচিত হয়ে নিজ এলাকায় সরকারি বা বেসরকারিভাবে মিল-ফ্যাক্টরি তৈরি করতে চাই। এতে করে অনেকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

সিরাজগঞ্জ-১ আসনে বিএনপির প্রার্থী কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে আমার আসনের মানুষগুলো একটু বেশি হতদরিদ্র। তাদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে চাই। এ ছাড়া আমি বিশ্বাস করি যে, যুব সম্প্রদায় যখন নীতিগত, শিক্ষাগত, রাষ্ট্রগত এবং সামাজিকভাবে সঠিক থাকবে তখন আমাদের বাংলাদেশকে নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হবে না। মাদক নিয়ন্ত্রণে শ্রেণিকক্ষে নৈতিক শিক্ষা বাস্তবায়ন করা আমার অনেক দিনের স্বপ্ন।

নাটোর-২ (সদর) আসনে ধানের শীষের প্রার্থী সাবিনা ইয়াসমিন ছবি বলেন, কি বলবো বুঝতে পারছি না। আমার প্রার্থিতা চূড়ান্ত ঘোষণা হয়ে গেছে অথচ আমি এখন পর্যন্ত এলাকায় যেতে পারছি না। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী শরিফুল ইসলাম সিমুল ও তার লোকজন গত কয়েকদিন ধরে বিএনপির যতো দোকানপাট, ঘর-বাড়ি, মোটরসাইকেল সবকিছু পুড়িয়ে দিয়েছে। এমনকি আমার বাড়িতেও আগুন দিয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়টি এসেছে। আমাদের লোকজন এখন পর্যন্ত ঘর থেকে বের হতে পারছে না। আমার স্বামী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু নাটোর সদর থেকে ৩ বার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন এবং মন্ত্রীও ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন নিয়ে কি চিন্তাভাবনা করবো এবং আপনাদের কি উত্তর দেবো সেটা ভাবছি। আগামী নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও প্রশাসন যদি ৫০ ভাগও নিরপেক্ষ থাকে তাহলে নাটোর-২ আসন কখনো আওয়ামী লীগের ছিল না এবং হবেও না। যদি ভোটাররা ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে যেতে পারে তাহলে আমি নির্বাচিত হবো ইনশাআল্লাহ। নির্বাচিত হয়ে সন্ত্রাসমুক্ত এলাকা এবং নারীদের উন্নয়নে কাজ করবো- এটাই আমার প্রত্যাশা।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status