দেশ বিদেশ

তিনবছরে ২৪০টি সাম্প্রদায়িক ঘটনায় নিহত ৩৮

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার

১১ ডিসেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:৩২ পূর্বাহ্ন

২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত তিন বছরে আট বিভাগে ২৪০টি সাম্প্রদায়িক ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৩৮ জন, আহত হয়েছেন ২০১ জন এবং গ্রেপ্তার হয় ২৫০ জন। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন মিলনায়তনে ‘মাইনরটি: লাইফ অ্যান্ড লিভিং’- শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য প্রকাশ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক ও সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ এ সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন গবেষক ফিলিপ গাইন। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছেন বলে জানান ড. ইমতিয়াজ। এদিকে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের সন্ত্রাস নিয়ে আমেরিকা আর ইন্ডিয়ার থেকে ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দিক থেকে বাংলাদেশ ২৫, আমেরিকা ২০ এবং ভারত ৭ নম্বরে অবস্থান করছে। পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়, সম্পত্তি নিয়ে দ্বন্দ্বে ১১৬ জন ব্যক্তি তাদের সহায় সম্পত্তি হারায়, ৬৪ জন হামলার শিকার হয় ও ২৪ জন অপহরণের শিকার হয়। নির্যাতিতদের মধ্যে অধিকাংশই হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তারপর রয়েছে খ্রীষ্টান ও বৌদ্ধ। অধ্যাপক আহমেদ ইমতিয়াজ জানান, এ সময়ে সম্পত্তি বিষয়ক দ্বন্দ্বে ১১৬টি বাড়িতে আগুন ও ১০১টি মন্দিরে আক্রমণ ও ২২৯টি প্রতিমা ভাঙা হয়। ১৬৮টি বাড়ি ও ৫০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ করা হয়। সর্বমোট ২৪টি ঘটনায় ২ জন নিহত, ৬৬ জন আহত ও ১২ জন গ্রেপ্তার হয়। তিনি বলেন, সারা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজশাহী এবং তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রংপুর বিভাগ। পর্যায়ক্রমে অবস্থান করছে চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগ। আয়তন, জনসংখ্যা ইত্যাদির কারণে ঢাকায় সাম্প্রদায়িক ঘটনার সংখ্যা বেশি। কিন্তু রংপুর বিভাগের ঘটনা ভিন্ন। রংপুর বিভাগ আয়তন ও জনসংখ্যায় ছোট হওয়া সত্ত্বেও সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের নির্যাতনে দ্বিতীয়। বিশেষ অতিথির বক্তব্য ফিলিপ গাইন বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে যে হত্যাকাণ্ড ঘটছে তার অধিকাংশই চাকমারাই চাকমাদেরকে হত্যা করছে। চাকমারা নিজেদের মধ্যে অন্তঃকলহে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। তিনি বলেন, জাতি, পরিচয়, বন্দিদশা, পেশা, বর্ণশ্রম বা জাতিভেদ, সংস্কৃতি, ভৌগলিক অবস্থান, ভূমিহীনতা এবং নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ হওয়াসহ নানা কারণে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের একটা বড় অংশ সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে বাদ পড়া বা বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অর্থনৈতিক অগ্রগতি দৃশ্যমান হলেও এরা উন্নয়ন যাত্রায় সমানভাবে অংশ নিতে পারছে না। ফিলিপ গাইন বলেন, সারা দেশে ১১টা যৌনপল্লীতে ৪ হাজার সংখ্যালঘু নারী যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করে। এদের মধ্যে প্রতিবাদ করার কারণে বছরে ১৪ জনকে প্রাণ দিতে হয়। তিনি বলেন, সংজ্ঞা, পরিচয় ও সংখ্যা নিয়ে এসব বিতর্কের অবসান খুব দ্রুত হবে না। এসবের থেকে বড় বিষয় হলো আমরা যাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ বলছি তাদেরকে দৃশ্যমান করা জরুরি। তাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সুরক্ষা দেয়া আমাদের কর্তব্য।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status