দেশ বিদেশ

খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনে মনোনয়নবঞ্চিতদের বিক্ষোভ

স্টাফ রিপোর্টার

১০ ডিসেম্বর ২০১৮, সোমবার, ১০:২১ পূর্বাহ্ন

বিএনপির চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণার দ্বিতীয় দিনেও গতকাল গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করছেন দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীর সমর্থকরা। সকাল থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত নেতার সমর্থকরা কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। সকালে মুন্সিগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়ন বঞ্চিত মো. আবদুল্লাহর সমর্থকরা বিএনপিকে আল্টিমেটাম দিয়ে বিক্ষোভ করেন। তারা বলেন, রোববার দুপুর ১টার মধ্যেই আবদুল্লাহকে মনোনয়ন দিতে হবে। নইলে তারা গুলশান কার্যালয় ছেড়ে যাবেন না। এলাকায় গণহারে সকলে দল থেকে পদত্যাগ করবেন। তারা বলেন, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনকে সরিয়ে আব্দুল্লাহকে মনোনয়ন দিতে হবে। তিনি অধিক যোগ্য। এলাকাবাসী মোয়াজ্জেম হোসেনকে চায় না। এসময় তারা মাথায় নেতার নামে সাদা ফিতা, হাতে ব্যানার ও মাইকে স্লোগান দিতে থাকেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আবদুল্লাহর পক্ষে মাইক্রোবাসে করে নেতাকর্মীরা আসতে থাকেন। তারা বিকাল পর্যন্ত বিক্ষোভ করেন। এসময় কুমিল্লা-৪ আসনে মঞ্জুরুল আহসান মুন্সির সমর্থকরাও বিক্ষোভ করতে থাকেন। ‘অবৈধ মনোনয়ন মানি না, মানব না’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন তারা। কুমিল্লা-৪ আসনে মঞ্জুরুল আহসান মুন্সি পরিবর্তে ঐক্যফ্রন্টের শরিক দল জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতনকে মনোনয়ন দেয়া হয়। অন্যদিকে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের সমর্থকদেরও গতকাল বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। বিকাল ৫টায় প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময়ের পরও তাদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়। কার্যালয়ের সামনের মূল সড়কে বসে তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন। সন্ধ্যার পর কার্যালয় থেকে বের হন গণস্বাস্থ্যকেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। এসময় তিনি মিলনের সমর্থকদের তোপের মুখে পড়েন। কার্যালয়ের মুল গেইটের সামনে প্রায় ১০ মিনিট ধরে আটকে রাখা হয় ডা. জাফরুল্লাহকে। নেতাকর্মীরা বলতে থাকেন কুমিল্লার দেবিদ্বারের কী ফয়সালা করলেন বলে যেতে হবে। সেখানে মিলনের কোনো বিকল্প নেই। যাকে নমিনেশন দেয়া হয়েছে তাকে এলাকার কেউ চেনে না। আবদুল মালেক রতনের নামই শুনলাম আজ। এসময় ডা. জাফরুল্লাহ বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের বলেন, মনোনয়ন দেয়ার এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমি জড়িত নই। এসবের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। পরে সিএসএফ সদস্যদের সহযোগিতায় খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনের ৮৬ নম্বর মূল সড়কের অনেক দূর আসেন ডা. জাফরুল্লাহ। এসময় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বড় দলের মনোনয়ন বিতরণের পর এমন ঘটনা ঘটতেই পারে। দুই চার দিন যাওয়ার পর রাগ কিছুটা কমলে হয়তো বোঝানো যাবে। তিনি বলেন,  আসন বণ্টনের বিষয়ে আমি কোনো আলোচনা করিনি। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমি যুক্ত ছিলাম না।
অন্যদিকে সকাল থেকে কার্যালয়ের বাইরে নেতাকর্মীরা বিক্ষভের সময় কার্যালয়ের ভেতর থেকে মাইকে ঘোষণা করা হয়- আজ কার্যালয়ে মনোনয়ন সংক্রান্ত কোনো কার্যক্রম হবে না। অফিস বন্ধ আছে। সামনে জটলা পাকিয়ে লাভ নেই। ঘোষণার পর পরই কার্যালয়ের মূল ফটক ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। মনোনয়ন বঞ্চিত সকল নেতার সমর্থকরা এসময় স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত করে রাখেন। এর আগে শনিবার সন্ধ্যায় মনোনয়ন না পাওয়া এহছানুল হক মিলন, তৈমূর আলম খন্দকার ও  সেলিমুজ্জামান সেলিমের অনুসারী কর্মী-সমর্থকরা গুলশান কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন এবং কার্যালয় ভাঙচুর করেন। তারা কার্যালয়ে দিকে ইটপাটকেল ছুঁড়ে স্লোগান দেন। তাতে জানালার কাচ ভেঙে যায়। অন্যদিকে গতকাল বিকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয় থেকে প্রার্থীদের চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে নির্বাচন কমিশনে জমা দিতে যান খালেদা জিয়ার প্রেস উইং সদস্য শায়রুল কবির খান। এরপর থেকে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের সংখ্যা কমতে থাকে। সন্ধ্যার মধ্যে নেতাকর্মীদের সংখ্যা অনেক কমে যায়। তবে কিছু সংখ্যক কর্মী সমর্থকরা সন্ধ্যার পরও এ বিক্ষোভ চলিয়ে যান।
বৃহৎ স্বার্থে ব্যক্তি স্বার্থকে বির্সজন দিলাম: ধানের শীষ প্রতীকের চূড়ান্ত মনোনয়ন না পেয়ে গুলশান কার্যালয় থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা-৬ আসন ধরে রাখছি। কিন্তু বৃহত্তর স্বার্থের জন্য অনেক সময় অনেক কিছু মেনে নিতে হয়। তাই বৃহৎ স্বার্থে আমি ব্যক্তি স্বার্থকে বির্সজন দিয়ে আসলাম। এখন ব্যক্তি স্বার্থটা বড় না। আমাদের এখন দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে জেল থেকে বের করতে হবে। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে হবে। সেই কারণে আমি সবাইকে বলব শান্ত থাকেন। ঐক্যের খাতিরে, দেশের খাতিরে এবার মেনে নিলাম। আপনারা কোনো রকম বিশৃঙ্খলা করবেন না। রাজনীতি অনেক দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। আমি আছি, রাজনীতিতে থাকব। আপনাদের পাশেই থাকব। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমার সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, বৃহত্তর স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তিস্বার্থ বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। তোমার এখন বুঝে নিতে হবে। কোন প্রেক্ষাপটে আমরা এই আসনে অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলাম। তিনি বিভিন্ন কারণে এই আসনে আমাকে মনোনয়ন দিতে পারেননি। ইশরাক হোসেন ঢাকা-৬ আসনে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। সেখানে ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়। এদিকে শেষ দিন গতকাল ঢাকা-১ আসনে ধানের শীষের চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন খন্দকার আবু আশফাক। তিনি নৌকার প্রার্থী সালমান এফ রহমান ও স্বতন্ত্র সালমা ইসলামের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ঢাকা-৫ ধানের শীষ প্রতীকের চিঠি পেলেন নবী উল্লাহ নবী। ঢাকা-১৪ আসনের চিঠি পেয়েছেন সৈয়দ আবু বকর সিদ্দিক।

 
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status