শেষের পাতা

জয়ের ডানায় উড়ছে বাংলাদেশ

ইশতিয়াক পারভেজ

৯ ডিসেম্বর ২০১৮, রবিবার, ১০:১৩ পূর্বাহ্ন

মুশফিকুর রহীম এক পাশে দাঁড়িয়ে চোখ পরিষ্কার করছিলেন। মাহমুদুল্লাহ আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে হাত মেলালেন। কিছুক্ষণ আগেই ৫ উইকেটের বড় ব্যবধানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু দেশের দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের তেমন কোনো উদযাপন নেই। জয় যেন তাদের জন্য সাধারণ ব্যাপার হয়ে গেছে। হবেই না কেন! চলতি বছর বাংলাদেশের ১৮ ম্যাচে এটি ১২তম জয়। অন্যদিকে, দর্শকরা পতাকা উড়িয়ে মেতেছে উল্লাসে। প্রত্যাশা ছিল এমনই দাপুটে জয়ের। নিরাশ হয়নি টিকিট যুদ্ধে  জিতে মাঠে আসা ক্রিকেটপ্রেমীরা। ৮৯ বল বাকি রেখে বাংলাদেশের দারুণ জয় দেখেই মাঠ ছাড়েন তারা।

সাক্ষী হয়েছেন রঙিন পোশাকে বাংলাদেশ দলের বর্ণিল জয়ের উৎসবে।  শুরুতেই দেখেছে মাশরাফির ২০০তম ম্যাচে আগুন ঝরা বোলিং। তাতেই ক্যারিবীয়রা এক উইকেট হাতে রেখে থেমেছিল ১৯৫ রানে। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, লিটন দাস, সৌম্য সরকাররা হতাশ করলেও শেষ পর্যন্ত ধরা দিয়েছে জয়। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পতন কাঁপন ধরিয়েছিল কিছুটা। কিন্তু ব্যাটিং ভরসা মুশফিক দলকে আগলে রাখেন নিজের ব্যাটে। দলের বিপদ কাঁধে তুলে নিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন লক্ষ্যে। তুলে নিয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩১তম ফিফটি। যদিও ম্যাচ সেরা হয়েছেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাই। ৩০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ক্যারিবীয় ব্যাটিং দানবদের কাবু করেন টাইগার অধিনায়ক।

১৯৬ রানের লক্ষ্য! বাংলাদেশের দারুণ ব্যাটিং লাইন আপের সামনে মামুলিই মনে হয়েছে। তবে, মিরপুর শেরেবাংলা মাঠের রহস্যময় উইকেট ও ক্যারিবীয় পেসারদের নিয়ে ছিল ভয়। যদিও ফর্মে থাকা চার ওপেনারই ছিলেন টাইগারদের একাদশে। কাউকে শেষ পর্যন্ত নিরাশ করেনি দল। তবে, বাঁহাতি-ডানহাতি কৌশল রাখতে তামিমের সঙ্গী হয়ে মাঠে নেমেছিলেন লিটন কুমার দাস। অন্যদিকে, পেসার কেমার রোচ, আরেক পাশে অফ স্পিনার রোস্টন চেজকে দিয়ে বোলিং শুরু করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বিপরীতে টাইগারদের দুই ওপেনার শুরুটাও করেছিলেন বুঝে শুনে। ব্যক্তিগত ৫ রানে ফ্লিক শট খেলেন লিটন। ব্যাটে বলে সময়টা ঠিকমতো হয়নি।

বাউন্ডারিতে উড়ে আসা ক্যাচ ধরতে ভুল করেননি হেটমায়ারও। লিটনও সাজঘরের দিকে ফিরে যাচ্ছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে তাকে থামিয়ে দিলেন মাঠের আম্পায়ার। অবশেষে বার বার টিভি রিপ্লে দেখে নিশ্চিত হওয়া গেল ওটা ‘নো বল’ ছিল। তাই দ্বিতীয় জীবন পেয়ে সেই যাত্রায় মাঠ ছাড়তে হলো না তাকে। তবে, তামিমের সঙ্গে ৩৭ রানের জুটিটা বড় হলো না। ইনজুরি থেকে ফেরার ম্যাচে তামিম চেইজের বলে বাজে এক শট খেলে আউট হলেন মাত্র ১২ রান করে।

চার ওপেনারের একজন বিদায় নিয়েছে তাতে কী! জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২ সেঞ্চুরি ও এক ফিফটি হাঁকানো ওপেনার ইমরুলতো আছেন। কিন্তু নিজের ফর্মের সুবিচার করতে পারলেন না তিনি। বাজে শটে বোল্ড ক্যারিবিয়ানদের দারুণ গতির বোলার ওশান থমাসের বলে। তাতে ৪২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে কিছুটা হলেও ভয় ধরিয়ে দেয় টাইগার ক্রিকেটভক্তদের। যদিও বিশ্বাস ছিল মুশফিক, সাকিবদের ওপর। প্রথমে লিটনকে নিয়ে ইনিংস মেরামত শুরু করলেন মুশফিক। দুজনের ৪৭ রানের জুটিতে জয়ের ভিত গড়ে ওঠে। কিন্তু হঠাৎ পাগলামিতে লিটন ফের বিপদ টেনে আনলেন। জায়গায় দাঁড়িয়ে বলের কাছে যায়নি পা, তাতেই লাইন মিস করে আউট। ৫৭ বলে ৪১ রান করে ফিরলেন তিনি। এরপর মুশফিকের সঙ্গী সাকিব আল হাসান। দলের পক্ষে প্রথম ফিফটি রানের জুটি গড়ে তারা জয়ের আরো কাছে নিয়ে যান দলকে। একটা সময় মনে হচ্ছিল তারাই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়বেন। কিন্তু সেই সময় সাকিবের দুর্ভাগ্য। ক্যারিবীয় অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েলের বেরিয়ে যাওয়া বলে ব্যাট চালিয়ে উইকেট বিলিয়ে দেন তিনি। আউট হওয়ার আগে ২৬ বলে ৩০ রান করেন সাকিব।  

সাকিবের বিদায়ের পর বাংলাদেশ তখন ৪ উইকেটে ১৪৬ রান। জয় থেকে খুব দূরে নয়। ক্রিজে এলেন সৌম্য সরকার। দলের চতুর্থ ওপেনারকে নিয়ে মুশফিকের ফের ২৯ রানের জুটি। যদিও এই জুটিতে সৌম্যের ব্যাট থেকে আসে ১৯ রান তাও ১৬ বলে। দারুণ দুই বাউন্ডারি ও একটি ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে নিয়ে যান জয়ের আরো কাছে। কিন্তু শেষ করতে পারেননি আউট হয়েছেন বাজে শটে। চার ওপেনার বলতে গেলে বড় কোনো অবদান রাখতে পারেনি দলের জন্য। তবে, এক প্রান্ত আগলে মুশফিক তখনো ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানদের সামনে পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে। মাহমুদুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে খুব বেশি সময় নিলেন না। জয়ের জন্য প্রয়োজন শেষ ২১ রানের অপরাজিত জুটি গড়লেন। মাঠ ছাড়ার আগে তার নামের পাশে অপরাজিত ৫৫ রান। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৩১তম ফিফটি হাঁকিয়েছেন ৭০ বলে ৫টি চারের মারে। রিয়াদ অপরাজিত ছিলেন ১৪ রানে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status