এক্সক্লুসিভ

চট্টগ্রামে বিএনপির সাত নতুন মুখ

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে

৯ ডিসেম্বর ২০১৮, রবিবার, ৯:১২ পূর্বাহ্ন

চট্টগ্রামে বিএনপি’র মনোনীত চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় স্থান পেয়েছে ৭ নতুন মুখ। অতীতে যাদের সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার অভিজ্ঞতা নেই। মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হেভিওয়েটদের সরিয়ে দেয়ায় নতুন মুখ হলেও বিকল্প থেকে মনোনয়ন চূড়ান্ত করে বিএনপি।

এরা হচ্ছেন- চট্টগ্রাম-১ মিরসরাই আসনে উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, চট্টগ্রাম-২ ফটিকছড়ি আসনে কর্নেল (অব:) মো. আজিম উল্লাহ বাহার, চট্টগ্রাম-৪ সীতাকুণ্ড আসনে উত্তর জেলা কৃষক দলের সভাপতি ইসহাক চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৬ রাউজান আসনে জসিম উদ্দিন শিকদার, চট্টগ্রাম-৭ রাঙ্গুনিয়া আসনে কুতুব উদ্দিন বাহার, চট্টগ্রাম-৯ কোতোয়ালি আসনে ডা. শাহাদাত হোসেন, চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া আসনে এনামুল হক এনাম।

তবে মনোনীতদের সবাই সৎ, উচ্চশিক্ষিত, ব্যবসায়ী হওয়ায় আশার আলো দেখছেন তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মীরা। গত ১০ বছরে ক্ষমতাসীন দলের হামলা-মামলার দুঃসময়ে তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশে থেকে দলকে সুসংগঠিত করেছেন এই নতুন মুখগুলো।

এরমধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন অন্যতম বলে জানিয়েছেন নেতাকর্মীরা। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী বলেন, গত ৭ই নভেম্বর ঢাকার সিএমএম কোর্টের সামনে থেকে গোয়েন্দা পুলিশ ডা. শাহাদাত হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন। এছাড়া গত ৩রা অক্টোবর চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি’র সমাবেশে যোগ দিতে এসে আটক হন রাঙ্গুনিয়া উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি কুতুব উদ্দিন বাহার। সেই থেকে কারাগারে আছেন তিনি।

মিরসরাইয়ের নুরুল আমিন ২০১৪ সালের ১৯শে ফেব্রুয়ারি বিএনপি প্রার্থী হিসেবে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে নাশকতার মামলার আসামি হওয়ায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। গত ২রা ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পদত্যাগপত্রের কপি জমা দিতে না পারায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেন রিটার্নিং অফিসার। অবশ্য আপিলে প্রার্থিতা ফিরে পান তিনি।

২০১০ সালে অবসরের পর বিএনপিতে যোগ দেন ফটিকছড়ি থেকে মনোননয়ন পাওয়া কর্নেল মো. আজিম উল্লাহ বাহার। মূলত এরপর থেকেই ফটিকছড়ি উপজেলা বিএনপি’র রাজনীতিতে সক্রিয় এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন বলে তার অনুসারীরা জানিয়েছেন। বর্তমানে তিনি উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি বলেন, উপজেলা বিএনপি’র সবাইকে সঙ্গে নিয়েই প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারণা শুরু করবেন।

রাউজানের প্রার্থী জসিম উদ্দিন শিকদার বলেন, দল আমাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে। প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারণা শুরু করবো। রাউজান উপজেলা বিএনপিতে বিদ্যমান গ্রুপিং নির্বাচনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন,  কোনো ধরনের সমস্যা হবে না। দল যেহেতু মনোনয়ন দিয়েছে তাই সবাই মিলেমিশেই কাজ করবে। সবার কাছেই যাব আমি।

সীতাকুণ্ড আসনে মনোনয়ন পাওয়া চট্টগ্রাম উত্তর জেলা কৃষক দলের সভাপতি ইসহাক চৌধুরী বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরীর ভাই। তিনি বলেন, এ আসনে বিএনপি’র প্রথম পছন্দ ছিল আসলাম চৌধুরী। এখন দল আমাকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে। সবাইকে নিয়ে মাঠে নামবো ইনশাআল্লাহ্‌।  

২০১৬ সালের ১৫ই মে গ্রেপ্তার হয়ে এখনো কারাগারে আছেন লায়ন আসলাম চৌধুরী। ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সঙ্গে বৈঠক করে সরকারকে উৎখাতে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। অবশ্য এ অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে আসছেন তার অনুসারীরা। ঋণ খেলাপি হওয়ার কারণে আসলাম চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। বুধবার তাকে আরেকটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখাতে নির্দেশ দেন আদালত। মূলত এ কারণেই আসলাম চৌধুরীকে প্রার্থী করেনি বিএনপি।

চট্টগ্রাম-১২ পটিয়া আসনে দল থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পান এনামুল হক এনাম। তিনি বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সজ্জন। দু’বারের সংসদ সদস্য গাজী শাহজাহান জুয়েলকে পাশ কাটিয়ে এনামের মনোনয়ন পাওয়াকে চমক হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

এনাম ১/১১-এর সময় থেকেই বিএনপি’র রাজনীতিতে সাংগঠনিকভাবে সমপৃক্ত। পটিয়া উপজেলা বিএনপি হয়ে বর্তমানে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
জানতে চাইলে এনামুল হক বলেন, দল আমাকে মূল্যায়ন করেছে। আসনটি আমি দলকে উপহার দেয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। প্রতীক বরাদ্দের পর সবাইকে সঙ্গে নিয়েই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবো। ইতিমধ্যে সবার সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন বলেও জানান তিনি।

বহাল আছেন চার সাবেক এমপি: অতীতে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য হয়েছেন এমন চারজনকে একাদশ সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। এরা হচ্ছেন চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর, পতেঙ্গা, ডবলমুরিং, ইপিজেড ও সদরঘাট) আসনে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-পাহাড়তলী-হালিশহর-খুলশী) আসনে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সভাপতি আলহাজ জাফরুল ইসলাম চৌধুরী এবং চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সরওয়ার জামাল নিজাম।

তিন আসন শরিকের
চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া আংশিক), চট্টগ্রাম ১৫ আসন (লোহাগড়া ও সাতকানিয়া আংশিক) এবং চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসন ছেড়ে দেয়া হচ্ছে শরিক দলকে। এর মধ্যে চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া (আংশিক) আসনে এলডিপি’র সভাপতি কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদ বীরবিক্রম, চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগড়া ও সাতকানিয়া আংশিক) আসনটি জামায়াতের শামসুল ইসলাম এবং চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে বাংলাদেশ কল্যাণ পর্ার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্‌রাহিম, বীরপ্রতীক বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হবেন।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status