এক্সক্লুসিভ

কৃষি থেকে আইনমন্ত্রীর আয় ৩ কোটি ২১ লাখ

জাবেদ রহিম বিজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে

৮ ডিসেম্বর ২০১৮, শনিবার, ৯:১৬ পূর্বাহ্ন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আওয়ামী লীগের তিন হেভিওয়েট প্রার্থী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ও ক্যাপ্টেন অব. এবি তাজুল ইসলাম। ক্রমিক অনুসারে জেলার ৩, ৪ ও ৬ আসনের প্রার্থী তারা। এরমধ্যে মন্ত্রী আছেন আনিসুল হক। আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী তিনি। এ তিনজনের মধ্যে কৃষিখাতে সবচেয়ে আয় বেশি আনিসুল হকের। ৩ কোটি ২১ লাখ ৯০ হাজার ৫৬০ টাকা আয় তার কৃষি থেকে। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা রয়েছে তার ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৬২ হাজার ৯৯২ টাকা। তিনটি মৎস্য খামারও রয়েছে তার। আর মৎস্য চাষে র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর আয় ৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। তিনি রাজনীতি ছাড়াও কৃষি, ব্যবসা এবং কনসালটেন্সি করেন। বাড়ি/ এপার্টমেন্ট/ দোকান ইত্যাদি থেকে ভাড়া হিসেবে বছরে ১০ লাখ ৪০ হাজার ৮৬৮ টাকা আয় এবি তাজুল ইসলামের। ১৫ লাখ ৭৯ হাজার ৭৩৬ টাকা নগদ রয়েছে তার। নগদ টাকার পরিমাণ তারই বেশি। নির্ভরশীলদের নামে কোনো কিছুই নেই তার। শিক্ষাগত যোগ্যতায় আনিসুল হক এলএলবি, মোকতাদির চৌধুরী এমএসএস আর এ বি তাজুল ইসলাম মাস্টার্স অব ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ। একাদশ সংসদ নির্বাচনের জন্যে দেয়া হলফনামায় বর্তমান এ তিন সংসদ সদস্য সম্পদের হিসেব-নিকাশ দেয়ার পাশাপাশি গত ৫ বছরে বাস্তবায়িত কর্মকাণ্ডের বিবরণ দেন। এক্ষত্রে মোকতাদির চৌধুরী টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে তার অবস্থান ধরে রাখাকে সফলতা হিসেবে দেখিয়েছেন। এদিক দিয়ে শতকারা ৯০ ভাগের বেশি সফল তিনি। আনিসুল হক ব্রিজ ও রাস্তা নির্মাণ এবং বিদ্যুৎতায়ন করার বিবরণ দেন। তাজুল ইসলাম এলাকার উন্নয়নে তার অর্জন শতকরা ৯৫ বলে উল্লেখ করেন। তাদের তিন জনের বিরুদ্ধে বর্তমানে কোনো মামলা মোকদ্দমা নেই। তবে মোকতাদির চৌধুরী অতীতের ৫টি মামলার তথ্য দিয়েছেন। যেগুলো ২০০২, ২০০৬, ২০০৭ ও ২০০৮ সালে দায়ের হয়। পরে এসব মামলা পুলিশের চূড়ান্ত প্রতিবেদন, আদালতের কোয়াশ এবং মামলাকারী সংস্থার প্রত্যাহার বা নিস্পত্তিতে শেষ হয়। মন্ত্রী হিসেবে আনিসুল হকের বছরে ভাতা প্রাপ্তি ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ব্যাংক সুদ থেকে আয় ১২ লাখ ৮৬ হাজার ৬৬০ টাকা। নগদ টাকা রয়েছে ৬ লাখ টাকা। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে ২৪ হাজার ৭৭৯ (ইউএসডি)। সঞ্চয়পত্র রয়েছে ১৫ লাখ টাকার। ১ কোটি ১২ লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের ২টি মোটরগাড়ি রয়েছে তার। আছে ২০ ভরি স্বর্ণ। স্থাবর সম্পদে রয়েছে ১৬ লাখ টাকা দামের ৮ বিঘা কৃষিজমি।  পৈতৃক সূত্রে পেয়েছেন আরো ৪৮ বিঘা। অকৃষি জমি রয়েছে ১ একর ২২ শতাংশ। যার মূল্য ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা।  পূর্বাচলে ২২ লাখ ৭৮ হাজার ৪৪৫ টাকা মূল্যের ১টি প্লটও রয়েছে তার। আছে ৪৫ লাখ টাকা দামের একটি ফ্ল্যাট। যৌথ মালিকানায় পৈতৃক দালান রয়েছে ১টি। যৌথ মালিকানায় মৎস্য খামার রয়েছে ৩টি। ইতিপূর্বে সংসদ সদস্য হিসেবে আনিসুল হক তার প্রতিশ্রুতি ও শতভাগ অর্জন হিসেবে দেখিয়েছেন কসবা উপজেলায় মহেশ কোম্পানি ব্রিজ নির্মাণ, কসবা-আখাউড়ায় বিদ্যুৎতায়ন, কসবা-কুটি রাস্তা নির্মাণ ও কসবা-আখাউড়া রাস্তা পুনঃনির্মাণ।

কৃষিখাত থেকে র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর বছরে আয় ৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা। আর ব্যবসা থেকে আয় ২৮ লাখ ৩২ হাজার ৯’শ টাকা। এছাড়া পেশা (ব্যবসা, চিকিৎসা, আইন ও পরামর্শক) থেকে আয় ২৬ লাখ ২২ হাজার টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে আনুতোষিক প্রাপ্তি ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সুদ, টকশো, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন সভার সম্মানী, সেমিনার, পত্রিকায় কলাম লেখা এবং প্রকাশিত পুস্তকের রয়ালিটি হিসেবে বছরে পান তিনি ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৪৪৪ টাকা। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা হিসেবে পান ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। কর অব্যাহতি প্রাপ্ত ও করমুক্ত আয়ের পরিমাণ ২০ লাখ ২০ হাজার ১০০ টাকা। নিজের নামে নগদ টাকা রয়েছে তার ১ লাখ আর স্ত্রীর নামে ১০ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমান ১৪ লাখ ১২ হাজার ৯৫ টাকা। স্ত্রীর নামে রয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে তার নিজের বিনিয়োগ নেই। তবে স্ত্রীর নামে পারিবারিক সঞ্চয়পত্র রয়েছে ২০ লাখ টাকার দুটি, ৫০ লাখ টাকার পেনশন স্কিম সঞ্চয়পত্র, ৩০ লাখ টাকার ৩ মাস অন্তর সঞ্চয়পত্র এবং ৫ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র ২০ লাখ টাকার। মটরগাড়ি হিসেবে রয়েছে ৭০ লাখ টাকা দামের ১টি ভি-৮ ল্যান্ড ক্রুজার। আর স্ত্রীর রয়েছে ২৩ লাখ ৬৭ হাজার টাকা দামের একটি টয়েটা প্রিমিও। ৩০ ভরি স্বর্ণ রয়েছে তার নিজের নামে। যার অর্জনকালীন মূল্য ৯০ হাজার টাকা। আর ১১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা মূল্যের ৫৬ ভরি স্বর্ণালংকার রয়েছে স্ত্রীর নামে। স্ত্রী  ও তার নিজের দুটি মোবাইলের মূল্য ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বলে উল্লেখ করা হয়। স্থাবর সম্পত্তিতে চিনাইর মৌজায় তার পৈতৃক ও ক্রয়কৃত কৃষি জমির পরিমাণ এক দশমিক ৯৬ একর। যার মূল্য ৬ লাখ ৬ হাজার টাকা। স্ত্রীর নামে আগে ক্রয়কৃত আড়াই লাখ টাকা মূল্যের দশমিক ৩৮একর এবং চলতি অর্থবছরে ১৮ লাখ ৩৯ হাজার টাকা মূল্যর দশমিক ৫৬ একর জমি রয়েছে। পৈতৃক সূত্রে তার পাওয়া অকৃষি জমির পরিমাণ দশমিক ৪২ একর। স্ত্রীর নামে উত্তরা ঢাকায় রয়েছে ৩ কাঠা ১১ ছটাক জমি। যার মূল্য ১৬ লাখ ১১ হাজার ৪৮৯ টাকা। গাজীপুরে ৩৩ শতক জমি রয়েছে স্ত্রীর। যার মূল্য ২৯ লাখ ১৬ হাজার টাকা। দালান হিসেবে দেখানো হয়েছে ৯ লাখ টাকা দামের একটি দ্বিতল ভবন এবং ১৭৫০ বর্গফুট জমির ওপর আরেকটি দ্বিতল ভবন। এটির মূল্য ৬১ লাখ টাকা। এ দুটোই মেয়েকে দান করে দেয়া হয়েছে। হেবামূল্যে প্রাপ্ত একটি এপার্টমেন্টও দান করা হয়েছে মেয়েকে। স্ত্রীর নামে উত্তরার জমিতে ডেভলপারের কাছ থেকে প্রাপ্ত ৩টি ফ্ল্যাট রয়েছে। নিজের নামে পূর্বাচলে ১০ কাঠা জমি রয়েছে। যার মূল্য ৩১ লাখ ৮ হাজার টাকা। ২টি মৎস্য খামারও রয়েছে তার। মোকতাদির চৌধুরীর ব্যাংক ঋণ আছে ১৫ লাখ ৬৮ হাজার ৪১১ টাকা। পূর্বের নির্বাচনের সময়কার প্রতিশ্রুতি ও অর্জনের বিবরনে মোকতাদির চৌধুরী বলেন, নির্বাচনের পূর্বে আমি উন্নয়ন বিষয়ে কোন প্রতিশ্রুতি প্রদান করিনি। তবে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা ও সন্ত্রাসবাজির বিরুদ্ধে আমার অবস্থানের প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছিলাম। যা ৯০ ভাগের বেশি অর্জিত হয়েছে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতি না থাকলেও উন্নয়নের বিস্তারিত তালিকা সংযুক্ত করে দেয়ার উল্লেখ রয়েছে।
এ বি তাজুল ইসলামের শিক্ষাগত যোগ্যতা মাস্টার্স অব ডেভলপমেন্ট স্টাডিজ। বাড়ি/এপার্টমেন্ট/দোকান বা অন্যান্য ভাড়া থেকে বছরে তার আয় ১০ লাখ ৪০ হাজার ৮৬৮ টাকা। শেয়ার বাবদ আয় রয়েছে ২৫লাখ ৪ হাজার ২৩৬ টাকা। পেশা থেকে আয় ২ লাখ টাকা। চাকুরি (বেতনাদি) হিসেবে পান ৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা। কৃষিখাত থেকে বছরে আয় ৯২ হাজার টাকা। তার হাতে নগদ রয়েছে ১৫ লাখ ৭৯ হাজার ৭৩৬ টাকা। এছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ১৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। বাংলাদেশ প্লেনটেশন লিমিটেডের ৩২০০টি শেয়ার রয়েছে। যার মূল্য ৩২ হাজার টাকা। ৭৫ লাখ টাকা মূল্যের গাড়ি রয়েছে তার। আছে ৫০ ভরি স্বর্ণ। পৈতৃক সূত্রে তার প্রাপ্ত জমির পরিমাণ ২৫০ শতক। ৭ কাঠা জমির ওপর ৮তলা বাড়ি রয়েছে ঢাকার গুলশান ২ নম্বরে। যা আবার এক পুত্র ও মেয়েকে হেবাবিষয়ক ঘোষণাপত্র দলিলমূলে রেজিস্ট্রি করে দেয়া হয়েছে। ইতিপূর্বে নির্বাচিত সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকার উন্নয়নে শতকারা ৯৫ ভাগ অর্জন থাকার কথা উল্লেখ করেছেন তাজুল ইসলাম। তিতাস নদীর ওপর নির্মিত ‘শেখ হাসিনা তিতাস ওয়াই সেতু’সহ ব্রিজ কালভার্ট ও অন্যান্য সেতু নির্মাণ করেছেন। এলাকায় রাস্তাঘাট, গ্রামীণ অবকাঠামো, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন, নদী ভাঙন রোধে বাধ নির্মাণ এবং কৃষিভিত্তিক শিক্ষা সম্প্রসারনের লক্ষ্যে নির্মাণ করেছেন কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট।  
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status