দেশ বিদেশ

নির্বাচনে কালো টাকা ব্যবহার হলেই ব্যবস্থা -দুদক চেয়ারম্যান

স্টাফ রিপোর্টার

৭ ডিসেম্বর ২০১৮, শুক্রবার, ১০:২২ পূর্বাহ্ন

নির্বাচনে যারা কালো টাকা ব্যবহার করবে তাদের তালিকা তৈরি করে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। গতকাল সকালে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে এক মতবিনিময়  সভায় তিনি একথা বলেন। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দেশের মানুষ বা আপনারা আমরা কেউ চাই না যে নির্বাচনে কালো টাকা ব্যবহার হোক। আমাদের ইনটিলিজেন্স ইউনিটকে একটা গাইড লাইন দিয়েছি, এটি আমি প্রকাশ করতে চাই না। ছোট্ট একটি উদাহরণ দিয়ে বলছি কতগুলো গরু জবাই করলেন ইলেকশনের প্রচার শুরু হলো। কতগুলো গরু, কতগুলো খাসি জবাই করলেন, কতগুলো লাল পোস্টার করলেন। যেটা আইনসিদ্ধ নয়। সেগুলো আমাদের ইনটিলিজেন্স ইউনিট কালেক্ট করে তারাও একটি তালিকা তৈরি করবেন। আমরা ওই রিপোর্ট নিয়ে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। এ বিষয়টি নিশ্চিত করবো।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ফ্ল্যাট ও প্লটে কালো টাকা চলে যাচ্ছে। এ বিষয়টি দুদক অবহিত। দুদক সরকারের কাছে বেশ কিছু সুপারিশ পাঠিয়েছে। সরকার এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে বলে দুদক প্রত্যাশা করে। তবে কালো টাকা যদি বিনিয়োগ হতো তাহলে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারত। নির্বাচনে হলফনামার বিষয়ে দুদকের ব্যবস্থা বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কিছু সত্যই বলতে হবে। সত্য সত্যই। পৃথিবীর সব দেশেই জনগণের প্রত্যাশা থাকে নেতার চরিত্র পুত-পবিত্র হতে হবে। আমাদের দেশেরও নেতার নেতৃত্বে অবশ্যই সততা ও জবাবদিহিতা থাকতে হবে। এজন্য নির্বাচনে বলেছিলাম, যারা হলফনামায় তথ্য দেবেন তা যেন সঠিকভাবে দেন। হলফনামা পাবলিক ডকুমেন্ট। আমাদের গোয়েন্দা ইউনিট ডাউনলোড করছে। তবে কী করবো ভবিষ্যৎ বলবে। আমরা বই আকারে সংরক্ষণ করছি। ঋণখেলাপির প্রসঙ্গে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এ বিষয়টি আমাদের না, ব্যাংকের। তবে যদি কেউ জালিয়াতি করে ঋণ নেন তাহলে বিষয়টি দুদকের। এজন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই একটি অডিট রিপোর্ট দিতে হবে। অনেক কোম্পানি আছে যারা এনবিআরকে এক রকম ও ব্যাংক ঋণের ক্ষেত্রে ভিন্ন রকম অডিট রিপোর্ট দেয়।
এর আগে লিখিত বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান জানান, কমিশন গত ১২ বছরে (২০০৭ সাল থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত) পাঁচ হাজার ৮৯টি মামলা  করেছে। একই সময়ে পাঁচ হাজার ৫২০টি মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে (বিলুপ্ত ব্যুরো আমলের মামলাসহ)। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ১০ বছরে ১ হাজার ৩২১টি মামলায় আসামিদের বিচারিক আদালতে সাজা হয়েছে। কমিশনের মামলায় সাজার হার ২০১৭ সালে ছিল ৬৮ ভাগ। এ হার ক্রমাগত বাড়ছে। কমিশন প্রতিটি মামলা মনিটরিং করছে। মামলার বাদী, সাক্ষী ও প্রসিকিউটরদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হচ্ছে। কমিশনের অনুসন্ধান ও তদন্ত এবং প্রসিকিউশন কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করার জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সহযোগিতায় একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানান ইকবাল মাহমুদ। তিনি বলেন, কমিশনের প্রত্যাশা শতভাগ মামলায় সাজা দেয়া। এ ক্ষেত্রে কমিশনের সক্ষমতার ঘাটতিকে আমরা অন্যান্য আনুষঙ্গিক কারণের পাশাপাশি একটি কারণ হিসেবে মনে করি। আমরা আমাদের প্রতিষ্ঠানের ত্রুটি-বিচ্যুতি প্রকাশে ন্যূনতম কুণ্ঠাবোধ করি না।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনে মানুষ প্রতিনিয়তই অভিযোগ জানাচ্ছে। গত বছরই কমিশন প্রায় ১৮ হাজার লিখিত অভিযোগ পেয়েছে। এ বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ১২ হাজার ২২৭টি অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৭ সালের ২৭শে জুলাই থেকে ৩০শে নভেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত কমিশনের অভিযোগ কেন্দ্রের হটলাইনে (১০৬) অভিযোগ জানাতে ১৯ লাখ ৪৪ হাজার ২২০টি ফোন কল এসেছে। এতে আমাদের মনে হয় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের দৃঢ় অবস্থান রয়েছে। মানুষ দুর্নীতিপরায়ণদের মন থেকে ঘৃণা করে। মতবিনিময় সভায় দুদকের পক্ষে আরো বক্তব্য দেন কমিশনার মোজাম্মেল হক খান ও সচিব সামসুল আরেফিন। সাংবাদিকদের মধ্যে বক্তব্য দেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌?ফুজ আনাম, একুশে টিভির প্রধান সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহী মনজুরুল আহসান বুলবুল, কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফি, আরটিভির প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশিক রহমান, ডিবিসি টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী মঞ্জুরুল ইসলাম, একাত্তর টিভির প্রধান নির্বাহী মোজাম্মেল বাবু, এটিএন বাংলার প্রধান নির্বাহী সম্পাদক জ ই মামুন, দৈনিক মানবজমিনের যুগ্ম সম্পাদক শামীমুল হক, দেশ টিভির উপব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ হাসান, চ্যানেল টুয়েন্টফোরের বার্তা প্রধান রাহুল রাহা, ইন্ডিপেনডেন্ট টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক আশিষ সৈকত প্রমুখ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status