শেষের পাতা

পল্টনে সংঘর্ষ মামলা এবং একজন এমরান

জিয়া চৌধুরী

২১ নভেম্বর ২০১৮, বুধবার, ৯:৫২ পূর্বাহ্ন

বাবা স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা। পরিবারের লোকজন আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী। তিনি নিজে কোনো রাজনৈতিক দল করেন না। বিদেশ যাওয়ার কাগজপত্র ঠিক করতে লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের দিনে পুলিশ তাকে নয়াপল্টন জামে মসজিদের সামনে থেকে  আটক করে। মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। যদিও মামলার এজাহারে তার কোনো পরিচয় লেখা হয়নি। অন্য আসামিদের সবার পরিচয় তারা বিএনপির নেতা বা কর্মী।

গ্রেপ্তার এমরান হোসেন যে আওয়ামী পরিবারের সদস্য তার একটি প্রত্যয়নপত্রও দিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠান ‘ওয়ে হাউজিং’-এর আঞ্চলিক বিপণন নির্বাহী হিসেবে কাজ করেন এমরান হোসেন। তার কর্ম এলাকা চট্টগ্রাম বিভাগের লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলায়। প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করায় তিনিসহ প্রতিষ্ঠানটির মোট ১৫ জন কর্মী জিতেছেন ভারতের দার্জিলিং সফরের  টিকিট।

২৩শে নভেম্বর দার্জিলিংয়ের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল তাদের। তবে, গত ১৪ই নভেম্বর নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ওয়ে হাউজিংয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাহবুবুর রহমান সোহাগ মানবজমিনকে জানান, ১৪ই  নভেম্বর ভোরে লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন এমরান হোসেন। দুপুরে নিজের ও সহকর্মীদের ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে নয়াপল্টনে বিএনপি কার্যালয়ের ঠিক উল্টোপাশে ভিআইপি টাওয়ারের তুহিন ট্যুরিজম নেটওয়ার্কে যাবার কথা ছিল।

দাপ্তরিকভাবে ওয়ে হাউজিং ও গ্রুপের বিদেশ সফরের ভিসা প্রসেসিং ও টিকিটিংয়ের কাজ করে তুহিন ট্যুরিজম। তুহিন ট্যুরিজমের স্বত্বাধিকারী শিবলী সাদেক মানবজমিনকে বলেন, দার্জিলিং ভ্রমণের সুযোগ মেলায়  আগে থেকে ভিসা আবেদন করে রেখেছিলেন এমরান হোসেন। ১৪ই নভেম্বর ভিসা আবেদনে স্বাক্ষর ও বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কথা ছিল তার। আর পরদিন ভারতীয় হাইকমিশনে ভিসার জন্য দাঁড়ানোর কথা ছিল। সে কারণে আগে থেকে ১৪ই নভেম্বর বুধবার অফিসে আসার কথা ছিল। তবে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তিনি ওইদিন পুলিশ ও বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনার মাঝে পড়ে যান। এ কারণে আর আমাদের অফিসে আসতে পারেন নি। পরে, শুনতে পেরেছি উনাকে পুলিশ আটক করে কারাগারে নিয়ে গেছে। অথচ উনার বাকি সহকর্মীরা সেই ভ্রমণে যাবার জন্য ভিসা প্রক্রিয়া শেষ করেছেন এবং কাঙ্ক্ষিত তারিখেই যাচ্ছেন।’ এমরান হোসেনের কাঙ্ক্ষিত দার্জিলিং ভ্রমণের জন্য ভারতীয় হাইকমিশনে আবেদনপত্র ও তুহিন ট্যুরিজমের সব ধরনের কাগজপত্র এ প্রতিবেদকের কাছে আছে।

১৩ই নভেম্বর মঙ্গলবার রাতে রামগঞ্জের বদরপুর ইউনিয়নের করপাড়া গ্রামে নিজের শ্বশুর বাড়িতে ছিলেন এমরান হোসেন। পরদিন মঙ্গলবার ভোরে ঢাকার উদ্দেশে বাসে রওনা হন। দুপুর প্রায় দুইটা নাগাদ ঢাকায় পৌঁছান। আবাসন প্রতিষ্ঠানে কাজের পাশাপাশি একটি ফার্মেসিও চালাতেন তিনি। দুপুর তিনটা নাগাদ কিছু ওষুধ কিনতে এমরান মুগদার এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড আয়ুর্বেদিক প্রতিষ্ঠানে ছিলেন বলে জানান তার শ্বশুর ও অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক ফারুক হোসেন। সেখানে জোহরের নামাজ ও দুপুরের খাবার সারেন এমরান। সেখান থেকে পল্টনের উদ্দেশে রওনা হন। আসরের নামাজ আদায় করেন পল্টন জামে মসজিদে। নামাজ পড়ে বাইরে বের হওয়ার পর আর তার কোনো হদিস মেলেনি। নামাজ পড়ে বের হওয়ার পর তাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ।

আটক দেখানো হয় পল্টন থানার মামলায়। এ সময় এমরান হোসেনের সঙ্গে ছিল ইছ০০৫৭৫৩৭ নম্বরের তার নিজের পাসপোর্ট। যা পরে আদালতের মালখানায় জমা দেয় পুলিশ।  এদিকে, পল্টন মডেল থানার ২২ নম্বর মামলায় উপ-পরিদর্শক কাজী আশরাফুল হক মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, আসামিরা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা শহরে বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করে এজাহারের এক থেকে ছয় নম্বর আসামিদের পৃষ্ঠপোষকতা ও কথাবার্তায় এবং সিনিয়র নেতাদের মদতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে বানচাল ও দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার অপচেষ্টায় ব্যাপক নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড করে আসছেন। এমরান হোসেন নিজে সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না হলেও পারিবারিকভাবে তার বাবা জামাল উদ্দিন মেম্বার ও চাচারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। এমরান হোসেনের বাবা চর কাদিরা ইউনিয়নের চর বসু ওয়ার্ড থেকে সাবেক নির্বাচিত ইউপি সদস্য। তিনি বর্তমানে চর কাদিরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক। লক্ষ্মীপুরের চর কাদিরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র থেকে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।

এমনকি চর কাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খালেদ সাইফুল্লাহ স্বাক্ষরিত আরেক প্রত্যয়নপত্রে তিনি সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী নন বলে উল্লেখ করেছেন। আটক এমরান হোসেনের বাবা জামাল উদ্দিন বলেন, কমলনগরের চর কাদিরা ইউনিয়নের প্রত্যেকে জানেন কয়েক যুগ ধরে আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। একবার ইউপি মেম্বারেরও দায়িত্ব পালন করেছি। অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমার ছেলেকে এ ধরনের মামলায় আাসমি করা হয়েছে। আমি আমার ছেলের দ্রুত মুক্তি চাই। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পল্টন মডেল থানার এসআই কাজী আশরাফুল হক বলেন, আমরা মামলাটি দায়ের করেছি মাত্র। তবে, তেমনভাবে তদন্ত করার সুযোগ পাইনি। ডিবি পুলিশ মামলার তদন্ত করছে।’ পরিবারের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তেমন কিছু বলতে পারেন নি। নয়াপল্টন থানায় দায়ের করা মামলায়, তাকে আটক দেখিয়ে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চায় পুলিশ। ৫ দিনের রিমান্ড শেষে আটক এমরান হোসেন এখন কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন।

মামলার এজাহারে ১৪০ নম্বর আসামি হিসেবে উল্লেখ করেছেন পল্টন মডেল থানার এসআই কাজী আশরাফুল হক। এজাহারে বাকি সব আসামির প্রায় সবাইকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে, আসামি এমরান হোসেনের নামের পাশে তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বা পদবি দেয়া নেই। ১৪ই নভেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত ডিএমপির মতিঝিল জোনের সহকারী কমিশনার মিশু বিশ্বাস এখন রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বিষয়টি জানা নেই। মামলা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ দেখভাল করছে, সেখানে খোঁজ নিলে বিস্তারিত জানা যাবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status