দেশ বিদেশ

এরশাদ প্রকাশ্যে, রহস্য রেখে গেলেন

স্টাফ রিপোর্টার

২১ নভেম্বর ২০১৮, বুধবার, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ন

রহস্য কাটিয়ে প্রকাশ্যে এলেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। শনিবার হাসপাতাল থেকে নিজের প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসায় না ফিরে অন্য কোথাও চলে যাওয়ায় দলের ভেতরে-বাইরে নানা গুঞ্জন ছিল। ওই স্থান থেকেই গতকাল তিনি উপস্থিত হন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে। গুলশানের একটি সেন্টারে ওই অনুষ্ঠানে এরশাদ বক্তব্য দেন দলীয় নেতাদের উদ্দেশে। সাক্ষাৎকার নেয়ার কথা থাকলেও নেতাদের বক্তব্যের পরই শেষ হয়ে যায় ওই অনুষ্ঠান। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেয়া বক্তৃতায় এরশাদ আরো রহস্য ছড়িয়ে দেন। নির্বাচনে কোন জোটের সঙ্গী হয়ে লড়বেন বিষয়টি আজকের বৈঠকেও খোলাসা করেননি তিনি। বরং জানিয়েছেন ৩০০ আসনেই প্রার্থী ঠিক করা হবে। পরে জোটের সিদ্ধান্ত হলে তা তিনিই নেবেন।

অনুষ্ঠানস্থলে জাপার মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রায় ৭৮০ জন প্রার্থী পার্টির চেয়ারম্যানের কাছে কাঙ্ক্ষিত সাক্ষাৎকার পাওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। তৃণমূল থেকে আসা এসব নেতাকর্মী জানতেন না রওশন এরশাদের বক্তব্যের মাধ্যমেই এ অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানা হবে। এ নিয়ে তাদের অনেকে হতাশাও ব্যক্ত করেন। তাদের প্রশ্ন, স্যার যখন আমাদের সাক্ষাৎকার নেবেন না, তাহলে পার্টি থেকে আমাদের ডাকা হয়েছে কেন? আমাদের ডেকে এমন একটা অনুষ্ঠানের কী আছে। আবার কয়েকজন বলেন, পার্টির চেয়ারম্যানের শারীরিক অসুস্থতার কারণে সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠান আর আগায়নি। তবে পার্টির নির্ভরযোগ্য সূত্র বলছে, জাপা চেয়ারম্যান ৩০০ আসনের প্রার্থীর তালিকা করে প্রার্থীদেরকে ফোনে জানিয়ে দেবেন। আজকে লোকজন ছিল বেশি, একসঙ্গে এত প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নেয়া সম্ভব ছিল না। নেয়া হলে ঝামেলার সম্ভাবনা ছিল। তাই অনুষ্ঠান দ্রুত শেষ করা হয়েছে। যদিও এরশাদ তার বক্তব্যে বলেন, পার্টির সিদ্ধান্ত এককভাবে আমিই  নেবো। সবাইকে মনোনয়ন দেয়া যাবে না, তাই যাকে মনোনয়ন দেয়া হবে আপনাদের তাকেই মেনে নিতে হবে। জোটের হয়ে নির্বাচন করলে পার্টির স্বার্থে মনোনীত প্রার্থীকে মেনে নিতে হবে। তখন উপস্থিত নেতাকর্মীদের ৩০০ আসনে প্রার্থী চাই বলে স্লোগান দিতে শোনা যায়।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, দেশের রাজনৈতিক মেরূকরণের জন্য জোটে যেতে হলে আমি একক সিদ্ধান্ত নেবো। জোটে গেলে কোনো কোনো প্রার্থীকে ছাড় দিতে হবে। তবে প্রাথমিকভাবে জাপা ৩০০ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে। এর পরে জোটে গেলে তার সিদ্ধান্ত আমি নেবো। চেয়ারম্যান হিসেবে আমাকে কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হবে। এটা আমার জন্য চ্যালেঞ্জ। সবাইকে প্রার্থী দিতে পারবো না। আমি যাকে যোগ্য ভাববো, তিনি মনোনয়ন পাবেন। আর এটা আমার ওপর ছেড়ে দিন। পার্টির জন্য সব থেকে বেশি ত্যাগ স্বীকার আমিই করেছি।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আমি ক্ষমতা ছাড়ার পরে এবার জাপার সব থেকে বেশি মনোনয়ন বিতরণ হয়েছে। পার্টি সাংগঠনিক রূপ নিয়েছে, যা ধরে রাখতে হবে। জাপা বিলীন হয়নি, তার প্রমাণ আপনারা। এদিকে জাপার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছে বাংলাদেশ ইসলামী জোট ও বিএনএ। এই দুটি দল জাপার প্রার্থী হিসেবে যুক্ত হবে বলে জানান এরশাদ।

সমাপনী বক্তব্যে জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ বলেন, আজ আমাদের আনন্দের দিন। রওশন এরশাদের বক্তব্যের সময়ও পার্টির নেতারা ৩০০ আসনে প্রার্থী দেয়ার দাবিতে স্লোগান দিতে দেখা যায়। তখন রওশন এরশাদ তাদের চুপ থাকতে বলেন এবং হাসেন। তিনিও একটি আসনে যে একজন প্রার্থী হবেন, বাকি সবাইকে জাপার প্রার্থীকে সমর্থন দিতে হবে বলে জানান। এর আগে স্বাগত বক্তব্যে পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, প্রার্থী নির্ধারণে জাপা চেয়ারম্যান যে সিদ্ধান্ত নেবেন তা পার্টির সবাই মেনে নেবেন। কোনো সিদ্ধান্তে কেউ তাকে ছেড়ে যাবে না। পার্টির সবাই তাকে বিশ্বাস করে। জাপা মহাসচিব বলেন, বৃহত্তর স্বার্থে মহাজোট কিংবা অন্য কোনো জোটে জাপা যাবে কি-না তা পার্টির চেয়ারম্যানের সিদ্ধান্ত। বহু বছর ধরে সংগ্রাম করে জাপা আজকের এই অবস্থানে এসেছে। তিনি জানান, জাপা থেকে ২ হাজার ৮৬৫ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছে। তার মধ্যে প্রাথমিক যাচাই-বাছাই করে ৭৮০ জনকে এ অনুষ্ঠানে ডাকা হয়েছে। তাদের এ বক্তব্যের পরে পার্টির কয়েকজন মনোনয়নপ্রত্যাশীর সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তাদের একজন বলেন, আজকে সাক্ষাৎকার নেয়নি। ৩০০ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নাম ঘোষণা করেছে। এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় বসবে, তার পরে কোন কোনটা তারা জাপাকে দেবে সেটাই চূড়ান্ত হবে। আমাদের পার্টির মধ্যেও একটা বিষয় আলোচনা চলছে। আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বলেন, আজকে স্যারের সামনে সাক্ষাৎকার হবে না- এটা আমরা আগেই আঁচ করেছিলাম। স্যার অসুস্থ, তাই এ অনুষ্ঠান দীর্ঘায়িত হয়নি। তবে অফিসের দায়িত্বে থাকা এক নেতা বলেন, এখানে সাক্ষাৎকার নেয়া শুরু হলে কী হবে সেটা তো বুঝতে পারছেন।

৩০০ আসনের তালিকা স্যার করবেন। সেটা আমাদের হাতে আসলে প্রার্থীদের জানিয়ে দেয়া হবে। তবে কোন জোটে যাবেন- সেটা স্যার সিদ্ধান্ত নেবেন। সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ এবং মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার ছাড়াও ছিলেন পার্লামেন্টারি বোর্ডের সদস্য পার্টির কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন খান, সুনীল শুভ রায়, আতিকুর রহমান আতিক ও মুজিবুর রহমান সেন্টু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ফকরুল ইমাম এমপি, অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান চুন্নু এবং মশিউর রহমান রাঙা। এ ছাড়া আরো উপস্থিত ছিলেন পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, শেখ মুহম্মদ সিরাজুল ইসলাম, নুর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম, মাসুদ পারভেজ সোহেল রানা, এসএম ফয়সল চিশতী, মীর আবদুস সবুর আসুদ, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, মো. আজম খান, আবদুর রশীদ সরকার, মেজর (অব.) খালেদ আখতার, ব্যারিস্টার দিলারা খন্দকার, সফিকুল ইসলাম সেন্টু, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী প্রমুখ।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status