এক্সক্লুসিভ

২৭ লাখ বিও অ্যাকাউন্টের অর্ধেকই নিষ্ক্রিয়

এম এম মাসুদ

২১ নভেম্বর ২০১৮, বুধবার, ৮:৫৪ পূর্বাহ্ন

দেশের পুঁজিবাজারে সাড়ে ২৭ লাখ বিনিয়োগকারীর বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্টের অর্ধেকই নিষ্ক্রিয়। এসব বিও অ্যাকাউন্টের সাড়ে ১০ লাখ শেয়ারশূন্য। আর প্রায় সাড়ে ৪ লাখ অ্যাকাউন্ট অব্যবহৃত। বাকি ১৩ লাখ অ্যাকাউন্ট সক্রিয়। বিও অ্যাকাউন্ট বা হিসাব সংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

বিও অ্যাকাউন্টের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বাজারে যত বিও অ্যাকাউন্ট আছে, তার অর্ধেকের বেশি বিও অ্যাকাউন্টে কোনো সময় শেয়ার থাকে, আবার কোনো সময় কোনো অ্যাকাউন্ট ব্যবহার হয় না। ফলে যত বিও অ্যাকাউন্ট আছে, তার অর্ধেকেরও কম বাজারে সক্রিয় থাকে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাজারের প্রায় অর্ধেক বা ১৪ লাখ বিও অ্যাকাউন্ট গত চারবছর ধরে নিষ্ক্রিয় থাকছে। গত জুন শেষে শেয়ারবাজারের সক্রিয় বিনিয়োগকারী ছিল ১৩ লাখের মতো। যাদের বিও অ্যাকাউন্টে শেয়ার ছিল।

বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, বাজারে কিছু বিও অ্যাকাউন্ট থাকে, যেগুলোয় নিয়মিত শেয়ার লেনদেনে ব্যবহার হয় না। শুধু প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও আবেদনের জন্য এসব বিও অ্যাকাউন্ট ব্যবহার হয়। এ কারণে এসব বিও অ্যাকাউন্টকে নিষ্ক্রিয় ধরা হয়। তবে নিষ্ক্রিয় বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বৃদ্ধি বাজারের জন্য ভালো লক্ষ্মণ নয়।
সিডিবিএল’র প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০১০ সালের শেয়ারবাজারে বড় ধরনের ধসের পর থেকেই বিও অ্যাকাউন্টের পরিমাণ কমতে শুরু করে। সিডিবিএল’র প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৬ সালের জুনে বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ৩২ লাখ ৭৬৬টি। বর্তমানে বিও অ্যাকাউন্ট দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখে। তবে গত এক বছরে প্রায় ৩০ হাজার অ্যাকাউন্ট বেড়েছে। এদিকে ২০১৩ সালের পর থেকে বাজারে নিষ্ক্রিয় বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়েই চেলেছে। চলতি বছরের জুন শেষে শেয়ারবাজারে মোট বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ২৭ লাখ ৬৬ হাজার ৩৮৩টি। এর মধ্যে ১০ লাখ ৩৮ হাজার ৪২৯টি বিও হিসাব ছিল শেয়ারশূন্য। আর ৪ লাখ ২৪ হাজার ২২৪টি বিও অ্যাকাউন্ট ছিল অব্যবহৃত। সব মিলিয়ে নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্ট ১৪ লাখ ৬২ হাজার ৬৫৩টি। আর সক্রিয় বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১৩ লাখ ৩ হাজার ৭৩০টি।

সেকেন্ডারি মার্কেটের মন্দা ও আইপিও বাজারের নাজুক পরিস্থিতির জন্য এসব অ্যাকাউন্ট ঝরে গেছে বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী বলেন, বাজারে আইপিও’র অফার থাকলে এমনিতেই বিও অ্যাকাউন্ট বাড়ে। বিনিয়োগকারীদের বড় অংশই আইপিও আবেদনের জন্যই শুধু বিও অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন। তাই আইপিও তথা ভালো কোম্পানি বাজারে না আসলে এসব নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বাড়বেই। তবে বাজার এগিয়ে নিতে হলে সেকেন্ডারি বাজারে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে।

সিডিবিএল’র বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, ২০১৪ সালে শেয়ারধারণ করা বিও অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছিল ১৬ লাখ ৮৯ হাজার ২৪৬টি। ২০১৫ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১৫ লাখ ৯১ হাজার ৫১৮টিতে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রায় ১ লাখ বিও অ্যাকাউন্ট থেকে শেয়ার বিক্রি করে দেয়ায় এসব অ্যাকাউন্ট শেয়ারশূন্য হয়ে অকার্যকর বিও অ্যাকাউন্টে পরিণত হয়। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে এসে শেয়ার আছে এমন বিও হিসাবের সংখ্যা আরো কমে দাঁড়ায় ১৫ লাখ ৩১ হাজার ৪৯২টিতে। ২০১৭ সালে তা আগের বছরের চেয়ে প্রায় সোয়া ২ লাখ কমে দাঁড়ায় ১২ লাখ ৯৯ হাজার ৪৪৭টিতে। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জুন শেষে তা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৪ হাজার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৩ হাজার ৭৩০টিতে।
সর্বশেষ ১৮ই নভেম্বর পর্যন্ত সিডিবিএল তথ্যমতে, বর্তমানে বিও অ্যাকাউন্ট ২৭ লাখ ৫৭ হাজার ৪৭৭টি। এর মধ্যে পুরুষ বিনিয়োগকারীর বিও রয়েছে ২০ লাখ ১১ হাজার ৯৯৬টি। নারীদের বিও রয়েছে ৭ লাখ ৩৩ হাজার ৫৮টি। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী রয়েছে ১২ হাজার ৪২৩টি।

উল্লেখ্য, শেয়ারবাজারে যেসব বিও অ্যাকাউন্টে শেয়ার জমা রয়েছে এবং যেগুলো শেয়ার কেনাবেচায় ব্যবহৃত হয়, সেসব অ্যাকাউন্টই সক্রিয় বিও অ্যাকাউন্ট হিসাবে ধরা হয়। যেসব অ্যাকাউন্ট কখনো ব্যবহার হয়নি ও শেয়ারশূন্য সেসব বিও অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় হিসাবে ধরা হয়। নিয়মানুযায়ী, জুন মাসে বিও ফি পরিশোধ না করলে বিও অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব অ্যাকাউন্টে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে, সেসব হিসাব বন্ধ হয় না। প্রতিটি বিও অ্যাকাউন্টের জন্য প্রত্যেক বিনিয়োগকারীকে বছরে ৪৫০ টাকা রক্ষণাবেক্ষণ মাশুল দিতে হয়। শেয়ারবাজারে শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে বিও অ্যাকাউন্টে ছাড়া কোনো বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজারে লেনদেন করতে পারেন না। নিয়ম অনুযায়ী, একজন ব্যক্তি বিনিয়োগকারী একটি ব্রোকারেজ হাউসে নিজ নামে ও যৌথ নামে সর্বোচ্চ দু’টি অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন। একটি বিও অ্যাকাউন্ট মানে একজন বিনিয়োগকারী ধরা হয়।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status