প্রথম পাতা

রেফারির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন বাড়ছে

সাজেদুল হক

২০ নভেম্বর ২০১৮, মঙ্গলবার, ১০:২৬ পূর্বাহ্ন

ব্যস্ত শেরেবাংলানগর। রাজনীতিবিদরা ছুটছেন। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ। বাহাস। অভিনব কোনো দৃশ্য নয়। বলা চলে, বাংলাদেশের রাজনীতির চেনা দৃশ্য। যদিও অভিনব এক পটভূমিতে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবারের ভোট। সংসদ বহাল। সরকার বহাল। কেমন হবে নির্বাচন? সকাল  দেখে দিনটা কেমন যাবে সব সময় বুঝা যায় না। কিন্তু আলামত পরিষ্কার। রেফারির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন বাড়ছে। যদিও কেউ কেউ বলছেন, তিনি তো কোনো ভূমিকাই রাখছেন না। তাহলে প্রশ্ন বাড়ার কী হলো।

কথাটা শোনা গেছে অসংখ্যবার। সংসদে, রাজনীতির ময়দানে, টিভি টকশোতে। তফসিল ঘোষণার পর সবকিছু চলে যাবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। নির্বাচন তো করবে কমিশন। সেখানে সরকারের কিছুই করার নেই। সভ্য দেশে এমনটাই হয়। বলা হয়েছিল, বাংলাদেশেও হবে। অনেকে বিশ্বাস করেছেন। অনেকে করেন নি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন বিস্ময়করভাবে তফসিল ঘোষণার পরও কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেবে না তা হয়তো কেউই ভাবতে পারেন নি।

৮ই নভেম্বর তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। কিন্তু তফসিল ঘোষণার আগের দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত পরিস্থিতির কোনোই পরিবর্তন হয়নি। এমনকি নির্বাচন কমিশনের ভূমিকারও। ছোট-বড় একজন কর্মকর্তার বদলির জন্য তারা কোনো সুপারিশ করেছেন এমন সংবাদ আজও পাওয়া যায়নি। বয়ান ছিল, তফসিলের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চলে যাবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। কিন্তু এর কোনো আলামত এখন পর্যন্ত দেখা যায়নি। পল্টনে ফৌজদারি অপরাধ হয়েছে- এটা বলতেই নির্বাচন কমিশনের বেশ কয়েকদিন চলে গেছে। ওই সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চলছে। ঢাকার বাইরে সারা দেশের চিত্রও একই। প্রতিদিনই বিএনপি এবং জামায়াতের কোনো না কোনো নেতাকর্মী গ্রেপ্তার হচ্ছেন। গায়েবি মামলা তো এখন সাধারণ ঘটনা। নির্বাচন কমিশনে এর তালিকাও দিয়েছে বিএনপি।

আরেকটি খবর এরই মধ্যে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। আগামী নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে পারেন এমন সম্ভাব্য কর্মকর্তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছে পুলিশ। বিশেষ করে কর্মকর্তাদের রাজনৈতিক অতীত খতিয়ে দেখছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। যদিও একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ইসি থেকে পুলিশকে এ ধরনের কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। সার্বিক পরিস্থিতিতে প্রথম আলো অনলাইনে প্রকাশিত নিবন্ধে লেখক, কলামিস্ট সোহরাব হাসান প্রশ্ন তুলেছেন, ইসি কি পুলিশের অধীন, না পুলিশ ইসির অধীন।

বাংলাদেশের ইতিহাস নানারকম নির্বাচন দেখেছে। নানারকম কমিশনও দেখেছে। কোনো কোনো নির্বাচন হয়েছে গ্রহণযোগ্য। কোনো নির্বাচন হয়েছে কলঙ্কিত। এখানে নির্বাচন কমিশন খুব কম সময়ই ড্রাইভিং সিটে ছিল। নির্বাচনকালীন সরকারই নির্বাচনের চরিত্র ঠিক করে দিয়েছে। অনেক পর্যবেক্ষকই আশা করছিলেন, নুরুল হুদা কমিশনের সামনে সুযোগ এসেছে ইতিহাস বদলে দেয়ার। দলীয় সরকারের সময়ও যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব এটা প্রমাণের সুযোগ আছে কমিশনের সামনে। যদিও এর আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময়ই হুদা কমিশনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। সেসময় দেখা গেছে, নির্বাচনের আগেই বিরোধী দলের সক্রিয় নেতাকর্মীদের একটি বড় অংশকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। বিরোধী প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টরা গ্রেপ্তার হয়ে গেছেন আগেই। কোনো কোনো এলাকায় ভোট শেষ হয়ে গেছে সকাল সকালই। আন্তর্জাতিক মহল থেকে এসব ঘটনার তদন্তের দাবি জানানো হলেও এতে কোনো ফল মেলেনি।

প্রশ্নটা আগেও একবার বলা হয়েছে। কেমন হবে আগামী নির্বাচন? পথে-ঘাটে,  সর্বত্রই আসলে এখন উচ্চারিত হচ্ছে এ প্রশ্ন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেকে শুরু করে চা দোকানদার সবাই এ প্রশ্ন করছেন? এবং উত্তর খুঁজছেন। ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা একযোগে উচ্চারণ করেছেন যে, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। বস্তুত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্য নির্বাচন কমিশনাররাও এ ধরনের নির্বাচন করতেই শপথাবদ্ধ। এখন আগামী নির্বাচন কেমন হবে তা বহুলাংশে নির্ভর করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্বাচন কমিশন কতটা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে তার ওপর। নির্বাচনকালীন সময়ে কমিশনের চাহিদা পূরণে সরকার সাংবিধানিকভাবে বাধ্য। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের ব্যাপারে কমিশনের তীব্র আকাঙ্ক্ষা এখনো প্রকাশিত হয়নি। বরং নির্বাচন শতভাগ সুষ্ঠু হবে না- এ বার্তা দেয়ার চেষ্টায় রয়েছেন কোনো কোনো কমিশনার।

ইতিহাসের এক টার্নিং পয়েন্টের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। দেশের ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা বহুলাংশে নির্ভর করছে এ নির্বাচনের ওপর। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নির্বাচন কমিশন দৃশ্যত নির্বিকার। তবে সময় এখনো চলে যায়নি।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status