বিশ্বজমিন

লক্ষ্য ক্রাউন প্রিন্সকে রক্ষা করা!

মানবজমিন ডেস্ক

১৯ নভেম্বর ২০১৮, সোমবার, ১২:৫৩ অপরাহ্ন

বৃহস্পতিবার সৌদি আরবের পাবলিক প্রসিকিউটর সাংবাদিক খাশোগি হত্যাকান্ডের দায়ে ১১ জনকে অভিযুক্ত করে। এদের মধ্যে ৫ জনের সর্বোচ্চ সাজা অর্থাৎ মৃত্যুদন্ড চাওয়া হয়। এর কয়েক ঘন্টা পরেই ট্রাম্প প্রশাসন ১৭ সৌদি কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। প্রত্যাশিতভাবেই এই তালিকায় সৌদি আরবের ক্ষমতাধর ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের নাম নেই। খাশোগি হত্যার জন্য তাকে দোষারোপও করা হয়নি।
নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, পরস্পরের মিত্র দু’দেশের এই পদক্ষেপ পূর্বপরিকল্পিত। দুই পক্ষই প্রত্যাশা করছে, তাদের কর্মকান্ড ক্রাউন প্রিন্সকে খাশোগি হত্যায় সম্পৃক্ত থাকার ক্রমবর্ধমান অভিযোগ থেকে রক্ষা করবে।

কিন্তু পরেরদিনই পরিস্থিতি পাল্টে যায়। শুক্রবার মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ সিদ্ধান্ত দেয় যে, গত মাসে ক্রাউন প্রিন্স ব্যক্তিগতভাবে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটের মধ্যে খাশোগিকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন। মার্কিন প্রশাসনের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ও এ বিষয়ে জানাশোনা আছে এমন একটি সূত্র সিএনএনকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হিদার নর্ট বলেছেন, খাশোগি হত্যাকান্ডে দোষী কে এ বিষয়ে মার্কিন সরকার কোন সিদ্ধান্তে পৌছে নি। এখনো অনেক প্রশ্ন রয়েছে যার উত্তর পাওয়া যায়নি।

খাশোগি হত্যার ঘটনায় সৌদি আরব সব সময়ই ক্রাউন প্রিন্স বিন সালমানকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু শুক্রবার সিআইএ’র দেয়া বক্তব্য সৌদি আরবের জন্য কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। যদি সিআইএ’র বক্তব্য হলে তা হবে সৌদি রাজ পরিবারের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠতায় বড় ধাক্কা। শনিবার সিআইএ তাদের অনুসন্ধানের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ব্রিফ করেন। ব্রিফের আগে ট্রাম্প আবারো তার পুরনো মত ব্যক্ত করেন। তার বিশ্বাস যে, ক্রাউন প্রিন্স নির্দোষ। ট্রাম্প বলেন, বিন সালমান হত্যাকান্ডে সরাসরি কোন ভূমিকা না থাকার বিষয়ে তাকে বলেছেন। এসময় তিনি সৌদি আরবকে সত্যিকারের মিত্র বলেও আখ্যা দেন। ট্রাম্প বলেন, তারা আমাদের চাকরি দিয়েছে, ব্যবসা দিয়েছে, অর্থনৈতিক উন্নতি দিয়েছে। এর পরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সিআইএ’র অনুসন্ধানের বিষয়ে ব্রিফ করা হয়। কিন্তু ধারণা করা হচ্ছে, সিআইএ’র রিপোর্টের পরেও ট্রাম্প সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তার মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদের নির্দেশনার প্রতি নির্ভর করবেন।

তুর্কী সরকারের দেয়া তথ্য-প্রমাণ ও অন্যান্য বিষয়গুলোর ভিত্তিতে সিআইএ তাদের অ্যাসেসমেন্ট রিপোর্ট তৈরি করে। শুক্রবার এই রিপোর্ট প্রকাশ করে ওয়াশিংটন পোস্ট। এতে বলা হয়, ক্রাউন প্রিন্সের ভাই খালিদ বিন সালমান খাশোগিকে কনস্যুলেটে যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তিনি বড় ভাই মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্দেশেই এই ফোন কল করেছিলেন। তবে খালিদ বিন সালমান এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। টুইটারে দেয়া বার্তায় তিনি বলেন, তিনি খাশোগির সঙ্গে কখনো কথাই বলেননি।

যা হোক, খাশোগি হত্যকান্ডের বিষয়টি এখন একটি ভূরাজনৈতিক সমস্যায় পরিণত হয়েছে। খাশোগি নিখোঁজের সময়ই বিশ্ব নেতারা নিরপেক্ষ স্বাধীন তদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সে দাবি গত কয়েক সপ্তাহে কমে এসেছে। তবে কানাডাসহ কয়েকটি দেশ সৌদি আরবের ওপর নিষেধাজ্ঞার আরোপের কথা ভাবছে। ইউরেসিয়া গ্রুপের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক প্রধান আয়হাম কামেল বলেন, ঘনিষ্ঠ মিত্রদের কেউই সৌদি আরবকে অস্থীতিশীল করতে চায় না। তারা রিয়াদে এমন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে চায় না, যেখানে ক্ষমতার জন্য উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা হবে। কেননা ক্ষমতার উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণ করা কষ্ট। এতে কোন ভবিষ্যদ্বাণীও করা যায় না।

বাস্তবে বিন সালমানের প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করা হলে বিপযয়কর পরিস্থিতি তৈরি হবে। কেননা ৩৩ বছর বয়সী ক্রাউন প্রিন্স পূর্ববর্তী সকল প্রিন্সের চেয়ে অনেক বেশি ক্ষমতাধর। তিনি দেশের অর্থনীতি, নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট সব এজেন্সীর দেখভাল করেন।

দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টার পর বিন সালমান বর্তমান অবস্থানে এসেছেন। শত শত যুবরাজ, সরকারি কর্মকর্তা ও ব্যবসায়ীকে তিনি রিটজ কার্লটন হোটেলে কার্যত বন্দী করে রাখেন। দুর্নীতি বিরোধী অভিযানের নামে তিনি বিলাসবহুল হোটেলকে অনেকটা বন্দী শিবিরে পরিণত করেন। রাজ পরিবারেও ক্রাউন প্রিন্সের শত্রু রয়েছে। কেননা কয়েক ডজন যুবরাজকে অতিক্রম করে বিন সালমান ক্রাুউন প্রিন্স হয়েছেন। অথচ স্বাভাবিক নিয়মে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী হিসেবে তার নাম অনেক পেছনে ছিল। এমন পরিস্থিতিতে বিন সালমানের বিরুদ্ধে যদি খাশোগি হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তাহলে বিন সালমানকে ঘায়েল করতে প্রতিপক্ষ যুবরাজদের জন্য তা বিরাট সুযোগ হয়ে দাড়াবে।
   
Logo
প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী
জেনিথ টাওয়ার, ৪০ কাওরান বাজার, ঢাকা-১২১৫ এবং মিডিয়া প্রিন্টার্স ১৪৯-১৫০ তেজগাঁও শিল্প এলাকা, ঢাকা-১২০৮ থেকে
মাহবুবা চৌধুরী কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত।
ফোন : ৫৫০-১১৭১০-৩ ফ্যাক্স : ৮১২৮৩১৩, ৫৫০১৩৪০০
ই-মেইল: [email protected]
Copyright © 2024
All rights reserved www.mzamin.com
DMCA.com Protection Status